দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে লোহাগাড়া চুনতি অভয়ারণ্য আছে প্রায় ১০ কিলোমিটার। সেখানে হাতির অবাধ বিচরণ। তবে রেললাইন প্রকল্প বাস্তবায়নে নষ্ট করা হয়নি হাতির বিচরণ এলাকা। হাতির চলাচল নির্বিঘ্ন করতে রেললাইনের ওপরই তৈরি করা হয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম এলিফ্যান্ট ওভারপাস। ওভারপাসের ওপর দিয়ে চলাচল করবে হাতি আর নিচে চলবে রেল। প্রথমবারের মতো পর্যটন শহর কক্সবাজারে রেল যাওয়ার পথে পর্যটকদের বাড়তি আনন্দ দেবে এই ওভারপাস। আগামী ১৫ অক্টোবর দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনে চলবে পরীক্ষামূলক রেল। ইতোমধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ৯০ শতাংশ। তবে বাণিজ্যিক রেল চলবে আরও পরে।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানা যায়, ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এলিফ্যান্ট ওভারপাসের কাজ শেষ। ওভারপাসের ওপর রোপণ করা হয়েছে কলা গাছ, বাঁশসহ ৪১ প্রজাতির গাছ। তৈরি করা হচ্ছে লবণ পানির লেক। দুই পাশে নির্দিষ্ট এলাকা পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে সুরক্ষা দেওয়াল। পুরো অভয়ারণ্যে নির্মাণ করা হয়েছে তিনটি আন্ডারপাস ও একটি ওভারপাস। ওভারপাস দিয়ে হাতির দল এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাতায়াত করতে পারবে। ভারত-বাংলাদেশ-মিয়ানমারের মধ্যে যাতায়াত করা এশিয়ান প্রজাতির হাতি সবচেয়ে বেশি চলাচল করে চুনতি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য এলাকা দিয়ে। ওভারপাস দিয়ে হাতিরা এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যেতে পারবে। তাছাড়া, অভয়ারণ্য এলাকার বন্যপ্রাণীরা যাতে রেললাইনে আসতে না পারে সে জন্য তৈরি করা হচ্ছে লবণ পানির লেক। কারণ, বন্যহাতি লবণ পানি পান করতে পছন্দ করে। বন্যহাতির দল কোথাও পানি দেখলে সেখানে অবস্থান করতেও পছন্দ করে। এলিফ্যান্ট ওভারপাস নির্মাণের জায়গা নির্ধারণে এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ দল প্রায় দুই বছর কাজ করছেন।
দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, এলিফ্যান্ট ওভারপাসটি দৃষ্টিনন্দন ও হাতি চলাচলের উপযোগী করেই নির্মাণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা করেই ওভারপাসটি নির্মিত হয়। এটির নির্মাণ কাজ শেষ। তিনি বলেন, পুরো প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি ৯০ শতাংশ এবং রেললাইন নির্মাণের অগ্রগতি ৯৮ শতাংশ। আগামী ১৫ অক্টোবর পরীক্ষামূলক চলাচলের পরিকল্পনা নিয়ে আমারা কাজ করছি। প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনটি ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুনধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার ও রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিমি রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে কক্সবাজারে নির্মিত হয়েছে ঝিনুকের আদলে দেশের প্রথম অত্যাধুনিক আইকনিক রেলওয়ে স্টেশন। এর মাধ্যমে দেশের পর্যটন খাত এগিয়ে যাবে আরেক ধাপ। এতে পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী যোগাযোগ ব্যবস্থা তৈরি হবে। ঢাকা থেকে সাড়ে সাত ঘণ্টায় এবং চট্টগ্রাম থেকে আড়াই ঘণ্টায় রেল পৌঁছাবে কক্সাবাজার। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫০ কিলোমিটার। দোহাজারী থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১০০ কিলোমিটার। বর্তমানে দোহাজারী পর্যন্ত রেললাইন আছে। এ কারণে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে বন-পাহাড় নদী পাড়ি দিয়ে রেলপথটি যাচ্ছে কক্সবাজারে। দোহাজারী, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, হারবাং, চকরিয়া, ডুলাহাজরা, ইসলামাবাদ, রামু ও কক্সবাজারে হচ্ছে নয়টি স্টেশন। এসব স্টেশনে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম।