এ যেন এক ভিন্ন ঢাকা। বদলে গেছে রাজধানী। নতুন সাজে সেজেছে রাজপথ থেকে গলিপথ। রঙে রঙে বর্ণাঢ্য হয়ে উঠেছে তিলোত্তমা রাজধানী। আর সেই রঙের সঙ্গে তুলির ছোঁয়ায় যেন নতুন এক রূপ পেয়েছে প্রাণের শহর। পেশাদার শিল্পী না হয়েও শিল্পের সুষমায় প্রাণের উচ্ছ্বাস ঘটিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। রংতুলিতে ঢাকার রাস্তার দেয়ালে দেয়ালে ফুটিয়ে তুলেছেন সংস্কারের নির্দেশনা, স্বাধীনতার জয়গান, তারুণ্যের উন্মাদনা, ভালোবাসার উচ্ছ্বাস ও মানুষ এবং মানবতার জয়গান। আন্দোলনের উত্তাল রাজপথ শাহবাগ চত্বর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, মগবাজার, মালিবাগসহ ঢাকার দেয়ালগুলোতে ছন্দে ও স্লোগানে জাগরণের বাণী তুলে ধরেছেন তারা। এ যেন নতুন এক জাগ্রত চেতনা। শিক্ষার্থীদের সেই সৃজনশীল কাজে উৎসাহ জোগাচ্ছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। কেউ দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ কেউ উৎসাহ দিচ্ছেন শিক্ষার্থীদের আবার কেউ বা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
‘গর্জে উঠলে ছাত্র সমাজ বদলে যায় ইতিহাস’, ‘খেটে বড় হও চেটে নয়’, ‘এক ডাক থেকে এক হাজার হতে পারি’, ‘চলছে রাষ্ট্র সংস্কার এগিয়ে আসতে হবে সবার’, ‘জনতায় ভরসা’, ‘এক জাতির দেশ নয়, বহু জাতির বাংলাদেশ’, ‘পোস্টার লাগানো নিষেধ’, ‘ট্রাফিক আইন মেনে চলি’, ‘বৈষম্যবিরোধী জনসমাজ গড়ে তুলি’, ‘রঙে রঙে রাঙাই বাংলাদেশ’, ‘এখানে যে ময়লা ফেলবে সে হাউন আংকেল’, ‘আদিবাসী বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য অথবা মৃত্যু, মুসলিম হিন্দু’, ‘গর্জে উঠো সামনে বাড়ো’, ‘কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট’, ‘৩৬ শে জুলাই’, মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’, ‘পানি লাগবে পানি, গুলি কর, পরিবর্তন এনেছি সংস্কারও আনবো’, ‘এক সাঈদ লোকান্তরে লক্ষ সাঈদ ঘরে ঘরে’, ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতা চাই’, ‘স্বপ্নের বাংলাদেশ, রক্তাক্ত জুলাই’, ‘বল বীর চির উন্নত মম শির’, ‘বিকল্প কে-আমি তুমি আমরা’, ‘স্বাধীন বাংলা, চিত্ত জাগানিয়া’- এ ধরনের স্লোগানে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা রংতুলিতে গেয়েছেন সাম্যের গান, তুলে ধরেছেন বৈষম্যের বিরুদ্ধে মানুষের অধিকারের কথা। রাজধানীর মগবাজার ফ্লাইওভারে দেয়াল লিখনের সময় কথা হয় ঢাকার বিভিন্ন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। সারা দিন পরিশ্রম ও ধৈর্য সহকারে দেয়াল লিখনের কাজ করতে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তারা সবাই সমস্বরে বলেন, খুবই ভালো লাগছে। দেয়াল লিখনের মধ্য দিয়ে আমরা গোটা জাতিকে পরিবর্তন ও সংস্কারের কথা বলতে চাই, এই দেয়াল লিখনের মধ্য দিয়ে আমরা বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চাই। আর সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথমেই আমরা আমাদের প্রাণের শহরকে রঙে রঙে রাঙিয়ে তুলতে চাই। স্বৈরাচার পতনের মধ্য দিয়ে আমরা যে নতুন স্বাধীন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখছি দেয়ালের ক্যানভাসে রংতুলির আঁচড়ে জাতির কাছে আমাদের স্বপ্নের কথাগুলো তুলে ধরার জন্যই এই আয়োজন। তোমরা কত দিন দেয়াল লিখনের কাজ করবে এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আপনারাই তো আমাদেরকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়েছেন। জানি না আমাদের কত দিন সময় লাগবে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে পথচারী আক্তারুজ্জামান বলেন, গুম, খুন, লুটতরাজ, টাকা পাচার, ভোট ডাকাতির মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার খুনি হাসিনা যে রামরাজত্ব কায়েম করেছিলেন, শিক্ষার্থীরা স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে তাদের সেই সাম্রাজ্য ভেঙে দিয়ে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। আশা করছি, সেই ধারাবাহিকতায় তারা বৈষম্যহীন সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনেও সে রকম ভূমিকা পালন করবে। তারুণ্যের এই চেতনা ছড়িয়ে পড়ুক সর্বত্র। পরিবর্তন ঘটুক সর্বত্র।