শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রদবদলে ঝড় শুরু হয়েছে প্রশাসনে। ইতোমধ্যেই প্রশাসনের কেন্দ্র সচিবালয়ের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশে বাংলাদেশের মিশনগুলোতেও চলছে রদবদল। রদবদলের অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন বঞ্চিত থাকা কর্মকর্তাদের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসনের শীর্ষ পদ সচিবদের মধ্যে রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। কাউকে পাঠানো হচ্ছে বাধ্যতামূলক অবসরে। আবার কাউকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হচ্ছে। খালি হওয়া মন্ত্রণালয়ে নতুন সচিব নিয়োগ পাচ্ছেন।
গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. জাহিদুল ইসলাম ভূঞাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে। গতকাল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত পৃথক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।
জানা গেছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন। এর আগে তিনি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত সচিব-১ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এর আগে গত বুধবার ১১ জন সচিবের চুক্তি বাতিল করে সরকার। এর আগে ৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়ার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়। একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দ্রুতই আরও কয়েকজন সচিব, অতিরিক্ত সচিব এবং বিভিন্ন সংস্থা প্রধানদের ওএসডি করা হবে। পাশাপাশি বঞ্চিতদের মধ্যে থেকে নিরপেক্ষ দক্ষ কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হবে। এই মুহূর্তে সব সচিব পরিবর্তন হবে না বলেও জানা গেছে। শুধু অতি মাত্রায় রাজনৈতিক খবরদারি করা সচিবদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সাবেক সচিব আবু আলম মো. শহিদ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, পরিবর্তনটার কারণে কাজে একটা গতি আসবে। বিদেশে মিশনে বড় পরিবর্তন : বিদেশে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মিশনে বড় পরিবর্তন করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সাত দেশে দায়িত্ব পালনরত রাষ্ট্রদূত-হাইকমিশনারসহ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত ১২ কর্মকর্তাকে ফেরানো হচ্ছে দেশে। গতকাল পৃথক আদেশে তাদের ফিরিয়ে আনার কথা জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। নির্দেশ অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ ইমরান, রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত কামরুল হাসান, সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত জাবেদ পাটোয়ারী, জাপানের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহম্মেদ, আরব আমিরাতের রাষ্ট্রদূত আবু জাফর, জার্মানির রাষ্ট্রদূত মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া ও মালদ্বীপে বাংলাদেশের হাইকমিশনার রিয়াল অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদকে দেশে ফেরানো হচ্ছে। এ ছাড়া ওয়াশিংটনে প্রথম সচিব ওয়াহিদুজ্জামান নূর ও কাউন্সিলর আরিফা রহমান রুমা, কানাডার অটোয়ায় কাউন্সিলর অপর্ণা রানী পাল ও কাউন্সিলর মোবাশ্বিরা ফারজানা মিথিলা এবং নিউইয়র্কে তৃতীয় সচিব আসিব উদ্দিন আহম্মেদকে দেশে ফেরানো হচ্ছে। আদেশে এসব রাষ্ট্রদূত-হাইকমিশনারসহ কর্মকর্তাদের অবিলম্বে আসার কথা বলা হয়েছে। বাধ্যতামূলক অবসর নিয়ে চিন্তিত অনেকেই : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানোর পর সচিবালয়ে অনেকের মধ্যেই আলোচনায় রয়েছে আর কাকে কাকে এমন বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হবে। একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব পদে কে আসছেন সেটি নিয়েও চলছে নানা রকম আলোচনা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আলী ইমাম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের রিফর্ম করার বিষয়টি চলমান, এটি প্রতিদিনই কমবেশি হবে। মুখ্য সচিব নিয়োগ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক এই মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আপাতত পর্যাপ্ত ম্যানপাওয়ার আছে, আমরা দেখছি বিষয়টি। পদত্যাগ করেছেন ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আবদুর রশীদ। গতকাল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন তিনি। এরপর গতকালই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে যোগদানের জন্য আবেদন করেছেন বলে জানা গেছে।