এবার রাজধানীতে বেড়েছে সব ধরনের মুরগির দাম। সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার কেজিপ্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ২০ টাকা। আর সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা। এক মাস আগে সরকার ব্রয়লার ও সোনালি মুরগির দাম ঠিক করে দেয়। সরকার নির্ধারিত মূল্যের থেকে ব্রয়লারের দাম বেড়েছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। আর সোনালি মুরগির দাম সরকার নির্ধারিত দামের থেকে ৪০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি, বন্যার কারণে খামার নষ্ট হয়েছে এবং খাবারের দাম বেড়েছে তাই মুরগির দাম বেড়েছে। ক্রেতারা জানান, একের পর এক কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে সিন্ডিকেট। তাদের নজর এবার মুরগির বাজারে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকায় এবং সোনালি দাম বেড়ে হয়েছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। পাড়া মহল্লায় মুরগির দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেশি। আর লেয়ার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকায়। দেশি মুরগি আগের মতো ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া, জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।
সরকারের ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) গতকালের তথ্য অনুযায়ী বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৯০ থেকে ২১০ টাকা। গত বছর এ সময়ে বাজারে ব্রয়লার বিক্রি হয়েছে ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪৮০ থেকে ৫৮০ টাকা। এ ছাড়া সরকারের কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের তথ্য মতে ব্রয়লার প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০৫ থেকে ২১০ টাকা। খিলক্ষেত বাজারের ব্রয়লার বিক্রেতা কবির হোসেন বলেন, দুই এলাকায় বন্যার ফলে ব্রয়লারের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শেষে উত্তরবঙ্গের বন্যায় বেশি সমস্যা হয়েছে। এতে ছোট খামারি যারা ছিল, তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্যই দাম বাড়ছে। তারা ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন। গার্মেন্টকর্মী মাহবুব আলী বলেন, ব্রয়লার মুরগির দাম সরকার নির্ধারণের পর আরও বেড়েছে। মাংস বলতে আমরা স্বল্প আয়ের মানুষরা শুধু বুঝি ব্রয়লার মুরগি, কারণ অন্যগুলো কেনার সামর্থ্য আমাদের নেই। সেই ব্রয়লারের দামও এখন বেশি। একের পর এক কারসাজি করে পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে সিন্ডিকেট। সরকারের উচিত বাজারকে সেক্টর ভিত্তিক মনিটরিং করা।
বাংলাদেশ পোলট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ব্রয়লারের দাম ২১০ টাকা পর্যন্ত যৌক্তিক আছে। সরকার যে দাম ঠিক করে দিয়েছে সে দাম ভুল। সোনালি মুরগির দাম ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা যৌক্তিক। এতদিন কম দামে বিক্রি করার কারণে খামারিরা লস করেছে। ব্রয়লার মুরগির ক্ষেত্রে ৩০ থেকে ৪০ টাকা এবং সোনালি মুরগির ক্ষেত্রে ৫০ থেকে ৬০ টাকা খামারি ও বাজারের গ্যাপ থাকে। এ মুরগির বাজারে সিন্ডিকেট হলো বড় বড় কোম্পানিগুলো। তাদের উৎপাদন খরচ কম। তারা চাইলে দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে আবার কমিয়ে দিচ্ছে।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর মুরগি ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। সেখানকার মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ রেয়াজুল হকের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, ডিমের পাশাপাশি সোনালি মুরগি প্রতি কেজি ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা এবং ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি চিঠিতে মুরগি (সোনালি ও ব্রয়লার) ও ডিমের নির্ধারিত যৌক্তিক মূল্য (উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে) সঠিকভাবে বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। সেই নতুন নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ডিমের মূল্যের পাশাপাশি কেজিপ্রতি সোনালি মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর কেজিপ্রতি ব্রয়লার মুরগি উৎপাদক পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।