নভেম্বর মাসের প্রথম থেকেই ঢাকার চারপাশে ১ হাজার ৫২টি ইট ভাটার চুল্লি জ্বালানো হয়েছে। যেগুলো থেকে সৃষ্ট কালো ধোঁয়ায় মারাত্মক পরিবেশ বিশেষ করে বায়ুদূষণ হচ্ছে। অথচ দূষণ রোধে সরকারি নির্মাণকাজে পোড়া মাটির ইটের বদলে ব্লক ইটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এরপরও সরকারি নির্মাণে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ব্লক ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্লক ইট উৎপাদনকারীরা জানান, বাজারে চাহিদা তৈরি হলে তারা প্রয়োজনমতো ব্লক ইট তৈরি করতে পারবেন। কিন্তু বিক্রি না থাকায় তারা উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারছেন না। আবার বেসরকারি কাজে যারা ইট ব্যবহার করছেন, তারা এখন পর্যন্ত পোড়া মাটির ইট ব্যবহারেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে আশা করা হচ্ছে ২০২৫ থেকে ২৬ সালের পর দেশের সরকারি স্থাপনা নির্মাণে শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহার শুরু হবে।
জানা যায়, প্রচলিত পোড়া ইটের ব্যবহার নিরুৎসাহিত করতে ২০২৭ সালের মধ্যে সরকারি উন্নয়নকাজে শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ মুহূর্তে দেশে বাংলাদেশে কংক্রিট ব্লক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির অধীনে রয়েছে ২০০টির মতো কারখানা। এ ছাড়া পাইপলাইনে আরও ৫০০টি ব্লক ইট তৈরির কারখানা তৈরি করা হচ্ছে। চলতি ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই এসব ব্লক ইট কারখানা তৈরি হয়ে যাবে। দেশের উপজেলাগুলোতেও এখন ব্লক ইটের কারখানা আছে। বাংলাদেশে বছরে প্রয়োজন হয় তিন হাজার কোটি ইট। আর ব্লক ইট উৎপাদনকারীরা এখন বছরে প্রায় ১২ কোটি ব্লক ইট তৈরি করছে। ব্লক ইটের তুলনায় পোড়া ইটের দাম সামান্য বেশি। প্রতিটি ব্লক ইটের দাম ১০ টাকা ৫০ পয়সা আর ভালো মানের পোড়া ইটের দাম ১৩ টাকা।
বাংলাদেশ কংক্রিট ব্লক প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির সভাপতি লে. কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) মো. সাখাওয়াত হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, একটি ইটভাটা তৈরিতে ১৫ থেকে ২০ বিঘা জমি লাগে। কিন্তু একটি ব্লক কারাখানা করতে লাগে ৩ থেকে ৪ বিঘা জমি। আমি পেনশনের টাকা দিয়ে আমার তিনটি কারখানা চালাচ্ছি, তবে বিক্রি নেই। বর্তমান সরকার যদি নিশ্চিত করে যে, বাজারে চাহিদা অনুপাতে ব্লক ইট বিক্রি হচ্ছে- তাহলে এর উৎপাদনকারীরাও আগামী তিন মাসের মধ্যে আরও ব্লক ইট উৎপাদনে উৎসাহী হবেন। কারখানাগুলোও সেভাবে প্রস্তুত আছে। কিন্তু বিক্রি না থাকায় তারা উৎপাদনও বৃদ্ধি করছে না। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগেও এগিয়ে আসছে না। তিনি বলেন, ব্লক ইট ব্যবহারে মানুষকে অভ্যস্ত হতে হবে। মানুষের মধ্যে ধীরে হলেও এই ইট ব্যবহারে সচেতনতা বৃদ্ধি হচ্ছে। দেশে সরকারি প্রকল্প হচ্ছে ৬০ শতাংশ। এ হিসাবে ব্লক ইট উৎপাদনকারীদের যে সক্ষমতা তা যথেষ্ট। সরকারি প্রকল্পগুলোর কাজের শতভাগই ব্লক ইট দিয়ে তৈরি করা সম্ভব। বাকি ৪০ শতাংশ সাধারণ জনগণের যে স্থাপনা- সেখানে যে ইট লাগবে, তা তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে উৎপাদনকারীরা যন্ত্রপাতি আপগ্রেড করে তা উৎপাদন করতে পারবে। বেসরকারি কাজে যারা ইট ব্যবহার করছেন- তারা এখন পর্যন্ত পোড়া মাটির ইট ব্যবহারকেই গুরুত্ব দিচ্ছেন। সরকারি স্থাপনাগুলো এখনো মাত্র ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ব্লক ইট ব্যবহার করা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি টেন্ডার শিডিউল করতে দুই থেকে তিন বছর লাগে। আর এটি সময় এবং সরকারি নির্দেশের সঙ্গে পরিবর্তন হতে থাকে। ২০২৪ সালে যে টেন্ডারগুলো হয়েছে- সেখানে ব্লক ইট ব্যবহারের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে ২০২৫ থেকে ২৬ সালের পর সরকারি স্থাপনাগুলোর নির্মাণে শতভাগ ব্লক ইট নির্মাণ করা হবে।
হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রিন্সিপাল রিসার্চ অফিসার মো. নাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন যে প্রকল্পগুলো তৈরি হচ্ছে সেখানে পিডব্লিউডিসহ ঢাকার যে বড় প্রকল্পগুলো হচ্ছে, সেখানে শতভাগ ব্লক ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু যে টেন্ডার ডকুমেন্টগুলো আগের- সেখানে পোড়া ইট ব্যবহার হচ্ছে। তবে প্রত্যন্ত এলাকায়- যেখানে ব্লক কারখানাগুলো আশপাশে নেই, সেখানে সরকারি কাজে এখনো পোড়া ইট ব্যবহার হচ্ছে। তিনি জানান, সরকারের অনেক বিভাগ থেকে ব্লক ব্যবহার হচ্ছে কি না তা নজরদারিও করা হয়। আবার ব্লক ইট প্রস্তুতকারীদের অনেকে মানসম্পন্ন ইট তৈরি করতে পারছে না। এই উৎপাদনকারীরা বাজারে পিছিয়ে আছেন। ইট ভাটা যাদের আছে, তারা এগিয়ে এলে ব্লক ইটের খাতও এগিয়ে যাবে। সরকার থেকে বলা হয়েছে, কেউ ব্লক কারখানা করলে ৫ শতাংশ সুদে লোন পাবেন। এক্ষেত্রে কারখানাটিকে কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে হবে। আমরা এ খাতের শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করছি। তবে যারা নির্মাণ খাতের সঙ্গে জড়িত তারা এখনো এ বিষয়ে সচেতন না। অনেকে আবার ব্লকের স্থায়িত্ব নিয়েও প্রশ্ন করেন। এক্ষেত্রে তাদের সচেতন করতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (বায়ুমান ব্যবস্থাপনা) মো. জিয়াউল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইটের ক্ষেত্রে ভ্যাট অনেক কম। আর ব্লকের ক্ষেত্রে ভ্যাট অনেক বেশি। এক্ষেত্রে ব্লকের ভ্যাট কমানোর জন্য শিগগিরই একটি সিদ্ধান্ত আসতে যাচ্ছে। ঢাকার আশপাশে বিশেষ করে ঢাকার উত্তরে-আমিনবাজার, সাভার, আশুলিয়া, ধামরাই এসব এলাকায় তালিকা অনুযায়ী অবৈধ ইটভাটাগুলো আজ বুধবার থেকে অভিযান শুরু হবে। বেশ কিছু ইটভাটা বন্ধ করে দেওয়া হবে।