আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পরামর্শে ঋণ খেলাপির সময়সীমা ১৮০ দিন থেকে কমিয়ে ৯০ দিনে নামিয়ে আনার পর থেকে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ সীমিত হওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃ তফসিল কমিটির কার্যক্রমে ধীরগতি। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক পাঁচ সদস্যের একটি বাছাই কমিটি গঠন করে, যারা ইচ্ছাকৃত নয় এমন বড় অঙ্কের (৫০ কোটি টাকা বা তদূর্ধ্ব) খেলাপি ঋণ পুনর্গঠনের আবেদন যাচাই-বাছাই করবে। তবে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ২৫৩টি আবেদন জমা পড়লেও কোনো আবেদন চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি হয়নি। কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত মাত্র ৫৬টি আবেদন প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন না আসায় ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা ঋণ খেলাপির পরিচয় থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না। একজন আবেদনকারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করে কমিটির সভায় আবেদন বাছাই হয়েছে, কিন্তু ঋণদাতা ব্যাংকগুলোর মধ্যে একটির সাড়া না পাওয়ায় পুনর্গঠন আটকে আছে। এখনো খেলাপির তালিকায় থেকে যাচ্ছি। ঋণ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় ধীরগতি, প্রভিশন ঘাটতি ও মূলধন সংকট মিলে দেশের ব্যাংক খাত চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর সিদ্ধান্ত না নিলে এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতির সার্বিক ভিত্তির ওপর এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে সাধারণ ভোক্তাও। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের মার্চে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা, যার মধ্যে মন্দ ঋণ ছিল ১ লাখ ৫৪ হাজার ১১৫ কোটি টাকা যা মোট খেলাপির ৮৪.৫৪ শতাংশ। ২০২৫ সালের মার্চে এসে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকায়। এর মধ্যে ৩ লাখ ৪২ হাজার ৬৫ কোটি টাকা মন্দ ঋণ যা মোট খেলাপির ৮১.৩৮ শতাংশ। এক বছরে মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়েছে ১ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। এই ঋণ আদায়ের সম্ভাবনা প্রায় শূন্য হওয়ায় ব্যাংকগুলোকে এর বিপরীতে ১০০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। কিন্তু ব্যাংকগুলোর মুনাফা সে অনুযায়ী না বাড়ায় প্রভিশনের ঘাটতি এখন মারাত্মক রূপ নিয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চে যেখানে প্রভিশন ঘাটতি ছিল ২৬ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা, সেখানে ২০২৫ সালের মার্চে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকায়। এ সময়ের মধ্যে প্রভিশনের হার কমে এসেছে ৭৬ শতাংশ থেকে মাত্র ৩৮ শতাংশে। অর্থাৎ ৬২ শতাংশ ঋণের বিপরীতে কোনো প্রভিশন নেই, যা ব্যাংক খাতকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বিপরীতে প্রযোজ্য মূলধন রাখতে না পারায় ব্যাংকগুলোর আর্থিক ভিত্তি দিনদিন দুর্বল হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে, অনেক ব্যাংক স্মরণকালের সর্বনিম্ন মূলধন সংরক্ষণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক লেনদেনে ব্যয় বেড়েছে এবং বিনিয়োগকারীরাও প্রত্যাশিত লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। একই সঙ্গে ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় পণ্যের দাম বাড়ছে এবং ভোক্তারা চাপে পড়ছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে খেলাপি ঋণের পূর্ব ধাপে ‘স্পেশাল মেনশন অ্যাকাউন্ট’ ক্যাটাগরিতে রয়েছে আরও ৫০ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকার ঋণ। তিন মাসের মধ্যে এসব ঋণ পরিশোধ না হলে তা ‘নিম্নমান’ ঋণে পরিণত হবে এবং ধাপে ধাপে ‘সন্দেহজনক’ ও শেষে ‘মন্দ’ ঋণে রূপ নেবে। প্রতিটি ধাপে প্রভিশনের হার বাড়তে থাকে বিশেষ হিসেবে ৫ শতাংশ, নিম্নমানে ২০ শতাংশ, সন্দেহজনকে ৫০ শতাংশ এবং মন্দে ১০০ শতাংশ। এই ধারাবাহিকতাই ইঙ্গিত দিচ্ছে, আগামীতে খেলাপি ও মন্দ ঋণের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে।
শিরোনাম
- অগণতান্ত্রিক শক্তির বিষয়ে সজাগ থাকার আহ্বান যুবদল সভাপতির
- মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত : র্যাব
- ছেলের পরকীয়া ঠেকাতে মা ফোন করে বলেন বিমানে বোমা আছে: র্যাব
- নদীর এই বাঁধ দিয়ে বন্যা ঠেকানো সম্ভব নয় : দুর্যোগ উপদেষ্টা
- বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনা অব্যাহত থাকবে
- সিরিয়ার বিস্তীর্ণ কৃষিজমিতে আগুন ধরিয়ে দিল ইসরায়েলি বাহিনী
- মার্কিন নাগরিককে পিটিয়ে হত্যা ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীদের
- পাশবিক এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নেয়া হবে : আসিফ নজরুল
- গাজাকে শিশুদের কবরস্থান বানাচ্ছে ইসরায়েল: জাতিসংঘ
- ইসরায়েলের ড্রোন হামলায় লেবাননে হতাহত ৬
- গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে দুই মাসে নিহত ৭৯৮ ফিলিস্তিনি
- হাসিনাকন্যা পুতুলকে বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা
- ইতিহাস গড়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইতালি
- একনজরে আজকের বাংলাদেশ প্রতিদিন (১২ জুলাই)
- জাতীয়তাবাদের উদ্বিগ্ন হৃদয়
- রেকর্ড বইয়ের পাতায় ইংল্যান্ডের স্মিথ
- বিএনপির আদর্শ ও রাজনীতির সঙ্গে সন্ত্রাস-বর্বরতার কোনো সম্পর্ক নেই : মির্জা ফখরুল
- রাজধানীর মিরপুর থেকে ৫০টি দেশীয় বন্যপ্রাণী উদ্ধার
- ভিন্নমত থাকবে, কিন্তু অপরের মতকে সম্মান করতে হবে : আমীর খসরু
- ভারতের হয়ে যে রেকর্ড এখন শুধুই বুমরাহর
বাড়ছে মন্দ ঋণ ও প্রভিশন ঘাটতি
জরুরি ভিত্তিতে কার্যকর সিদ্ধান্ত না নিলে এর প্রভাব পড়বে অর্থনীতির সার্বিক ভিত্তির ওপর
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর