আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতাকে হত্যা করে খুনিরা বিবিসিতে সাক্ষাৎকারে গর্ব করে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে বলেছিলেন, আমরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছি, কে আমাদের বিচার করবে? আমরা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাংলার মাটিতে বিচার করেছি। জিয়াউর রহমান যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি বলেন, একাত্তরের স্বজন হারানোদের মনে শান্তি ও স্বস্তি দিতে আমরা সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছি, রায়ও কার্যকর করছি। যতই বাধা-বিপত্তি বা হুমকি আসুক, যুদ্ধাপরাধীদের এই বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত থাকবে। আমরা একাত্তরের পরাজিত শক্তি আলবদর-রাজাকারদের ক্রীড়নক হয়ে থাকতে চাই না।
আজ বুধবার বিকালে রাজধানীর খামারবাড়ি কৃষিবিদ ই্নস্টিটিউশন মিলনায়তনে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আর ছাত্রলীগের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের মাসব্যাপী কর্মসূচি শেষ হলো।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১টি বছর জাতির পিতার নাম নিষিদ্ধ এবং ইতিহাস বিকৃতির উদাহরণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫-এর পর একটি প্রজন্মকে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতেই দেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধুর নাম ও তাঁর ভাষণ বাজানো নিষিদ্ধ ছিল। একটি প্রজন্ম যদি ক্রমাগতভাবে বিকৃত ইতিহাস শুনতে থাকে, তবে তাদের চরিত্রটাও বিকৃত হয়ে যায়। আজকের যে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ তা সেই বিকৃত ইতিহাস থেকেই সৃষ্টি। দেশ ও জাতির জন্য যে কোন ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- যে কোনো মহৎ অর্জনের মহান আত্মত্যাগের প্রয়োজন। তাই দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, তাদের কল্যাণ ও উন্নত জীবন দিতে আমিও যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত।
বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখল এবং তখনকার পরিস্থিতি প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ৭৫ সালের পর দেশে ১৯টা ক্যু হয়েছে। প্রতি রাতে ছিল কাফ্যু। অনেকে বলে জিয়া নাকি (জিয়াউর রহমান) গণতন্ত্র দিয়েছে। গণতন্ত্র নয়, জিয়া দিয়েছিল কাফ্যু গণতন্ত্র। তখন (জিয়াউর রহমানের আমলে) স্বাধীনভাবে চলার কোনো সুযোগ ছিল না, কথা বলার কোনো সুযোগ ছিল না। বঙ্গবন্ধুর আমলে ১১ হাজার যুদ্ধাপরাধী সাজাপ্রাপ্ত ছিল, ২২ হাজার মামলা হয়েছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করে সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধ করে দিলেন। গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে ফিরিয়ে আনেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এর বিচার বন্ধ করে রেখেছিলেন জিয়াউর রহমান। বিদেশিরা তদন্ত করতে চাইলেও তাদেরকে যে সুযোগ দেয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার কয়েক বছর পর য্ক্তুরাজ্যে গিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবিতে জনমত গঠনের চেষ্টা করলাম। সে দেশের বেশ কয়েকজন এমপিও আমাদের সঙ্গে ছিলেন। তারা সবাই মিলে স্যার টমাস উইলিয়ামসকে বাংলাদেশে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান তাকে ভিসা দেয়নি। কেন তাকে (স্যার টমান উইলিয়াম) বাংলাদেশে আসতে ভিসা দেয়া হয়নি? জিয়া চায়নি এই ঘটনার তদন্ত হোক। কারণ, তদন্ত হলে তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ হয়ে যেতো। এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল, সে কথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শ অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার মতো মানুষ হতে হবে।' শিগগির বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খণ্ড শিগগির প্রকাশ হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। ছাত্রলীগের সব নেতা-কর্মীকে এই আত্মজীবনী পড়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, 'অনেক কষ্ট করে তার ডায়েরি জোগাড় করতে হয়েছে। তোমরা এটা পড়বে। এতে অনেক অজানা অধ্যায় থাকবে।'
বাংলাদেশে আসার আগেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে এসেছিলেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলার মাটিতে ফিরে আসার আগেই প্রতিজ্ঞা করেছিলাম বাংলার মাটিতে এই বিচার করবো, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ফিরিয়ে আনবো, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আবার জনগণকে জানাবো। আমরা সে বিচার করেছি। যে চেতনা নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই চেতনা যেন দেশ পরিচালনা হয়, সেটাই করবো। আমরা তাই করছি। তিনি বলেন, বাবা মা ভাই সবাইকে হারিয়ে নিঃস্ব রিক্ত আমি এদের মাটিতে ফিরে এসেছিলাম। দেশের মানুষের ভালবাসা পেয়েছিলাম, আওয়ামী লীগসহ প্রতিটি সংগঠনের ভালবাসা সহযোগীতা পেয়েছিলাম।
ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রাম ও কারাজীবনের সময় তাঁর মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের অসামান্য অবদানের কথা তুলে ধরতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধুকে অনেক ঝড়-ঝাঞ্ছা পাড়ি দিতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে সংগ্রাম করেছেন। তখন নেপথ্যে থেকে বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি পদক্ষেপে পাশে থেকে অনুপ্রেরণ দিয়ে গেছেন আমার মা।
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন সিনিয়র সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ বদরুল আহসান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন। অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকরা ছাড়াও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রীসভার সদস্যবৃন্দ, সংসদ সদস্যবৃন্দ এবং বিপুল পরিমাণ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। সংগঠনের দফতর সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন শাহজাদার পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা শেষে ছাত্রলীগের নিয়মিত প্রকাশনী ‘মাতৃভূমি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিডি-প্রতিদিন/ ৩১ আগস্ট, ২০১৬/ আফরোজ