করোনা মহামারী সংকটে কর্মহীন-দরিদ্র, প্রতিবন্ধী ও অসহায় তিনহাজার মানুষকে খাদ্যসামগ্রী উপহার দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে দেশের স্বনামধন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপ। ৭ আগস্ট থেকে ৯ আগস্ট তিনদিনে বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানের নির্দেশনায় কালের কণ্ঠ শুভসংঘের সদস্যরা জেলার নয়টি উপজেলার তিন হাজার মানুষের মধ্যে এ খাদ্যসামগ্রী উপহার পৌছে দেন।
করোনা মহামারীর মধ্যে কর্মহীন-অসহায় দরিদ্র মানুষগুলো খাদ্যসামগ্রী পেয়ে যেমন সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, তেমনি খাদ্য বিতরণে অংশ নিয়ে স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিগন বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। প্রথম দিন শনিবার জেলার কাজিপুর, রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার ৯শ', দ্বিতীয় দিন রবিবার বেলকুচি, চৌহালী, শাহজাদপুর ও উল্লাপাড়া উপজলার ১২শ' এবং শেষদিন সোমবার সদর ও কামারখন্দ উপজেলার ৯শ' মানুষের মধ্যে বিতরণ করা হয়।
সোমবার সকালে শহরের মনসুর আলী অডিটোরিয়ামে খাদ্য সহায়তা বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহমেদ জানান, করোনা মহামারিতে দেশে চরম সংকট চলছে। সংকট মুহুর্তে বসুন্ধরা গ্রুপ কর্মহীন দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মুখে খাবার তুলে দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। সকল মহৎ কাজের মধ্যে এটি সর্বোত্তম মহৎ কাজ উল্লেখ করে তিনি বসুন্ধরা গ্রুপকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।
বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য উপহার পেয়ে বাস শ্রমিক শরিফ জানান, গত দুইমাস যাবত বাস বন্ধ। কাজকর্ম নেই। খুব কষ্টে দিনযাপন করছিলাম। বসুন্ধরার চাল-আটা-ডাল পেয়ে খুব ভাল লাগছে। অন্তত ১০দিন মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে খেতে পারব।
মনসুর আলী অডিটোরিয়ামে চেয়ারে বসে সম্মানের সাথে বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তা পেয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে পঙ্গু বাঘা সুত্রধর বলেন, গেল পনেরো বছর আগে বার্জার’স ডিজিজে এক পা কেটে ফেলতে হয়েছে। তখন লাঠি ভরে চলাফেরা করতে পারতাম। তার আট বছর পর একই সমস্যায় অন্য পাও কেটে ফেলতে হয়। এখন কৃত্তিম পা নিয়ে লাঠিতে ভর দিয়েই চলি। কাজ করার সামর্থ্য নেই। বয়স্ক বাবাকে নিয়ে একবেলা খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্য সহায়তাটুকু অন্তত দশদিন খাবারের চিন্তুা থেকে দূরে রাখবে।
বাঘা সূত্রধরের মত আরেক প্রতিবন্ধী দেলোয়ার হোসেন। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ায় তার দুই হাত কেটে ফেলা হয়। এরপর থেকে কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন তিনিও। বসুন্ধরা গ্রুপের খাদ্যসামগ্রী পেয়ে তিনি বলেন, 'এর আগে কহনো ত্রাণ পাই নাই। আল্লাহ তোমাদের হায়াত দিক। বসুন্ধরার জন্য অন্তর থেকে দোয়া করছি।'
খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে আরও উপস্থিত ছিলেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনোয়ার পারভেজ, সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. আব্দুল হামিদ মিয়া, কালের কণ্ঠ শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান, সিরাজগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি হেলাল আহমেদ, বাংলাদেশ প্রতিদিন ও নিউজ টুয়েন্টিফোরের জেলা প্রতিনিধি মোঃ আব্দুস সামাদ সায়েম, শুভসংঘের কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য মো. ইমরান হোসেন, সদস্য শরীফ মাহ্দী আশরাফ জীবন, সিরাজগঞ্জ জেলা কমিটির উপদেষ্টা প্রদীপ সাহা, সভাপতি বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. নিত্য রঞ্জন পাল, সাধারণ সম্পাদক মোঃ হোসেন আলীসহ সুজিত সরকার।
দুপুর ১২টায় জেলার কামারখন্দ উপজেলার হাজী কোরপ আলী সরকারি কলেজ মাঠে সাড়ে চারশো অসহায় ও দুস্থ পরিবারের মাঝে ১০ কেজি চাল, তিন কেজি ডাল ও তিন কেজি আটা দেওয়া হয়। এ ছাড়াও করোনা সুরক্ষায় সকলের মাঝে মাঝে বিতরণ ও করোনা সচেতনতামূলক পরামর্শ দেওয়া হয়।
খাদ্যসামগ্রী বিতরণ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে কামারখন্দ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল্লাহ সবুজ বলেন, কামারখন্দ উপজেলার মানুষগুলো ক্ষুদ্র কৃষি ও শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। করোনা সংকটের মধ্যে সাড়ে চারশ' মানুষকে বসুন্ধরা গ্রুপ খাদ্য সহায়তা দিয়ে তাদের মুখে হাসি ফুটালো। অন্তত ১০দিন পরিবারগুলোকে শান্তিতে খেতে পারবে। তিনি বসুন্ধরা গ্রুপকে ধন্যবাদ জানিয়ে ভবিষ্যতে আরো বেশি মানবিক কাজে তাদের অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।
বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেরিনা সুলতানা বলেন, সরকারের সহায়তায় আমরা দুস্থদের মাঝে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। সকলকে সহায়তার আওতায় আনতে পারেনি। সংকট মুহুর্তে বসুন্ধরা গ্রুপ দরিদ্রদের পাশে থেকে মানবতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে করোনা প্রতিরোধে সহায়ক ভুমিকা পালন করছে। আশা করছি বসুন্ধরা গ্রুপ সবসময় দেশ ও দেশের মানুষে কল্যাণে কাজ করে যাবে।
খাদ্য সহায়তা পেয়ে তাঁত শ্রমিক আনোয়ার হোসেন জানান, করোনার মধ্যে তিনমাস যাবত কর্মহীন। আমাদের সংসারের অবস্থা ভয়াবহ। এই মুহুর্তে বসুন্ধরা গ্রুপ যে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে তা খুব উপকারে লাগবে। আল্লাহর কাছে দোয়া করি বসুন্ধরার মালিক যেন সবসময় আমাদের মতো দরিদ্রদের পাশে থাকেন। নূর ইসলাম নামের বৃদ্ধ উপকারভোগী বলেন, এর আগে কখনো সাহায্য পাই নাই এটাই প্রথম পাইলাম। আল্লাহ যেন বসুন্ধরার আরো উন্নতি দেয়।
কালের কণ্ঠের শুভসংঘের পরিচালক জাকারিয়া জামান জানান, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যানের খাদ্য উপহার করোনায় কর্মহীনদের হাতে তুলে দিতে কালের কন্ঠের শুভ সংঘ জেলার পর জেলায় ছুটে চলছে। গত তিন দিনে সিরাজগঞ্জ জেলার নয়টি উপজেলার ৩ হাজার মানুষকে খাদ্য উপহার দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে পাবনায় খাদ্য উপহার বিতরণ করা হবে।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন