দেশকে অস্থিতিশীল করতে ভয়ংকর টার্গেট ছিল শীর্ষ সন্ত্রাসী ত্রিমতি সুব্রত বাইন এবং মোল্লা মাসুদের। পতিত শেখ হাসিনা সরকারের শীর্ষ কয়েকজন ব্যক্তির নির্দেশেই চলছিল তাদের কার্যক্রম। নিচ্ছিলেন যাবতীয় প্রস্তুতি। তবে রাজধানীতে গত কয়েক মাস ধরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বেশি হওয়ায় কুষ্টিয়াকেই নিরাপদ আস্তানা মনে করছিলেন তারা। শিষ্য আবু রাসেল মাসুদ ওরফে মোল্লা মাসুদের পরামর্শেই সেখানে যান সুব্রত বাইন ওরফে ফতেহ আলী। তবে বিধিবাম। মঙ্গলবার ভোরে কুষ্টিয়া কালিশংকরপুর সোনারবাংলা সড়কের একটি ছাত্রাবাস থেকে গ্রেপ্তার হন গুরু-শিষ্যসহ চারজন। হাতিরঝিল থানায় করা মামলায় সুব্রত বাইনকে ৮ দিনের এবং অন্য তিনজনকে ৬ দিনের রিমান্ডের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জাকির হোসাইন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, আত্মগোপনের জন্য ঢাকা থেকে কুষ্টিয়াকে নিরাপদ মনে করছিলেন মোল্লা মাসুদ। সেখান থেকে ভারতের সীমান্ত দিয়ে প্রয়োজনীয় আগ্নেয়াস্ত্র মজুত করার ও সব আয়োজন সম্পন্ন করেছিলেন। তার পরামর্শ মতো ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগের কয়েকজন ওপারের সব বন্দোবস্ত করছিলেন। ইতোমধ্যে মগবাজার, রামপুরা এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিতে যাবতীয় পরিকল্পনা করেছিলেন তারা। পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসী জিসান আহমেদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব হলেও তা নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন শিষ্য মোল্লা মাসুদ। তাদের টার্গেট ছিল ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের শ্যুটারদের পাশাপাশি সর্বহারার সদস্য। তাদেরই দেশের বিভিন্ন এলাকায় টার্গেট বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা ছিলো সেভেন স্টার গ্রুপের এই শীর্ষ সদস্যদের। তবে কুষ্টিয়ায় যার মাধ্যমে বাসা ভাড়া করেছিলেন তাকে খুঁজছে পুলিশ। সূত্র আরও বলছে, ১৫ দিন আগেও ঢাকায় ছিলেন মোল্লা মাসুদ এবং সুব্রত বাইন। গত মার্চ মাসে সীমান্ত পার হয়ে দেশে ঢুকেন তিনি। এর পর থেকে গুরু সুব্রত বাইনের সঙ্গেই নিকেতন, খিলগাঁও এলাকায় বসবাস করছিলেন। এদিকে, রিমান্ড শুনানির আগে সুব্রত বাইন সাংবাদিকদের বলেন, আমি বাঁচার জন্য অস্ত্র রাখি। আমি যদি বলি অস্ত্র রাখি না, তাহলে এটা মিথ্যা হবে। লিয়াকত, মুরগি মিলন এরা আমার শত্রু ছিল। এদের সঙ্গে যুদ্ধ করে আমি এই জায়গায় এসেছি। ২০২২ সালের রমজান মাসের ২৬ তারিখ ভারত থেকে আমাকে বাংলাদেশে ঢোকানো হয়। এরপর আমাকে আড়াই বছর হাত-পা বেঁধে আয়নাঘরে রাখা হয়েছে। পরে ৫ আগস্ট রাত ৩টার সময় আমাকে চোখ বেঁধে হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে ছেড়ে দেয়। তিনি বলেন, এই আধুনিক যুগে আমাকে চাঁদাবাজ বানান? এই আধুনিক যুগে যদি চাঁদাবাজ না ধরতে পারেন, তাহলে কী লাভ সাংবাদিকতা করে। তদন্ত করেন, কে আমার নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করছে। আপনারা নতুন প্রজন্মের সাংবাদিক। আমার টাকা থাকলে আমি নিজেই একটা পত্রিকা খুলে নিতাম, টিভি খুলে নিতাম। কিন্তু আমার এত পাওয়ারের দরকার নেই। পরে আদালত এজলাসে এসে রিমান্ড মঞ্জুর করার পর উচ্চ আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক সতর্কতার সঙ্গে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশনা দেন। এ সময় সুব্রত বাইন বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, স্যার, রিমান্ডে যেন আমার নামাজ পড়ার ব্যবস্থা রাখা হয়। এ সময় বিচারক বলেন, হ্যাঁ, নামাজের ব্যবস্থা করবে। এদিন তাদের আদালতে হাজির করে হাতিরঝিল থানার অস্ত্র আইনের মামলায় ১০ রিমান্ড আবেদন করেন সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের উপ-পরিদর্শক রিয়াদ আহমেদ। আসামি পক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক রিমান্ডের এ আদেশ দেন। এর আগে মঙ্গলবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিশেষ অভিযানে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, আসামি এস এম শরীফের হাতিরঝিলের একটি বাড়িতে তারা নিয়মিত মিটিং করে এবং সেখানে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র, গুলি অপরাধ সংগঠনের বিভিন্ন সরঞ্জামাদি রাখা আছে। পরে হাতিরঝিল থানার নতুন রাস্তা এলাকা থেকে একইদিন বিকাল ৩টার দিকে এস এম শরীফ ও মো. আরাফাত ইবনে নাসিরকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযানের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি বিদেশি পিস্তল, ১০টি ম্যাগাজিন, ৫৩টি গুলি এবং একটি স্যাটেলাইট ফোন জব্দ করা হয়।
রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, ২০০১ সালে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আসামি সুব্রত বাইন ও তার সহযোগী মোল্লা মাসুদসহ ২৩ জন শীর্ষ সন্ত্রাসীর নাম ঘোষণা করে এবং তাদের ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। তারা সন্ত্রাসী বাহিনী সেভেন স্টার গ্রুপ পরিচালনা করত।