জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ও সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, নির্বাচনি ও রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে দুবৃর্ত্তায়ন বন্ধ করতে হবে। ক্ষমতার পালাবদলে যাতে দুর্নীতির পালাবদল না হয় সে বিষয়ে সজাগ থাকা খুবই জরুরি। গত ১৫ বছরে আমরা দেখেছি ক্ষমতার সঙ্গে জাদুর কাঠি যুক্ত ছিলো। বিগত সময়ে ক্ষমতাসীন সংসদ সদস্য, মেয়র ও চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিতদের সম্পদ আকাশচুম্বি হয়েছে। এটা বন্ধ করতে হবে। শেখ হাসিনা ক্ষমতা থেকে বিদায় নিলেও স্বৈরাচারী আইন—কানুন কাঠামো এখনো বহাল রয়েছে। এসব কাঠামোই তাকে স্বৈরাচার বানিয়েছে। বর্তমানে চলমান সংস্কার কার্যক্রমে এসব কাঠামো পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তাই আইনী, প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত সংস্কার করা প্রয়োজন। সুশাসন ও জবাবদিহিতা না থাকলে কেবল নির্বাচনের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। আমরা বিশ্বাস করতে চাই এই নির্বাচন কমিশন একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে পারবে। ভবিষ্যৎ সরকার জুলাই সনদ বাস্তবায়ন না করলে তাদের পরিণতিও শেখ হাসিনার মত হতে পারে। এই সনদ বাস্তবায়নের মাধ্যমে স্বৈরাচারী কাঠামোর বিলোপ হবে। আশাকরি ভবিষ্যতে যারা ক্ষমতায় আসবে তারা এ ব্যাপারে সজাগ থাকবে। আগামী নির্বাচনের সঙ্গে একই দিনে গণভোট হবে কিনা তা বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ ও রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তাব দেবে ঐকমত্য কমিশন।
আজ এফডিসিতে গণতন্ত্র সুরক্ষায় আগামী নির্বাচনের গুরুত্ব নিয়ে ডিবেট ফর ডেমেক্রেসি আয়োজিত ছায়া সংসদে তিনি এসব কথা বলেন। সভায় সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতাটি আয়োজন করে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি।
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে ঐকমত্যের বিষয় এখন সিলভার লাইন থেকে গোল্ডেন লাইনে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্রকামী প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলই একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন প্রত্যাশা করছে। দেশের মানুষও অপেক্ষায় আছে কখন তারা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিবেন। যারা এদেশের মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়েছিল, বিনা ভোটে ক্ষমতায় ছিলো, দিনের ভোট রাতে করেছিল, আমি আর ডামির নির্বাচন করে নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল, তা থেকে পরিত্রাণের জন্য আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অত্যাবশ্যক। আগামী ১৫ অক্টোবর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জুলাই সনদ স্বাক্ষর হওয়ার কথা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর রেষারেষির কারণে জুলাই সনদ স্বাক্ষরে যদি প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়, তাহলে দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মারাত্মাক ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। বিগত শাসন আমলে ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যায়, অত্যাচার, গুম—খুন হত্যাসহ জুলাই বিপ্লবে শহীদের হত্যার বিচার বাধাগ্রস্ত হবে। দেশের আইন শৃঙ্খলার উপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। পতিত ফ্যাসিস্ট শক্তি ফিরে আসার শঙ্কা তৈরি হবে। তাই হারিয়ে যাওয়া গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে নির্বাচনের কোন বিকল্প নেই। আমাদের প্রত্যাশা বিভেদের রাজনীতি পরিহার করে আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি সফল জাতীয় নির্বাচনের লক্ষ্যে ফ্যাসিস্ট বিরোধী প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ থাকবে।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে “আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হলেই গণতন্ত্র সুরক্ষিত হবে” শীর্ষক ছায়া সংসদে তেজগাঁও কলেজ ও প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি’র বিতার্কিকরা যৌথভাবে বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মুহাম্মদ রইস, ড. তাজুল ইসলাম চৌধুরী তুহিন, সিনিয়র সাংবাদিক মাঈনুল আলম, সাংবাদিক মো. হুমায়ূন কবীর ও সাংবাদিক জাকির হোসেন লিটন। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলকে ট্রফি, ক্রেস্ট ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন