ইসলাম এখন পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম। ক্রমে বাড়ছে ইসলাম ধর্মের অনুসারী। যার শুরুটা হয়েছিল ১৫০০ বছর আগে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে। মহানবী হজরত মুহাম্মদের (সঃ) অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে মরুদেশের এই শহরকে ঘিরে।
কিন্তু ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র এই শহর যেন ক্রমেই পরিণত হচ্ছে বিলাসী এক নগরে। পুরোনো সব ঐতিহাসিক স্থাপনায় বুলডোজার চালিয়ে গড়ে তোলা হচ্ছে আধুনিক শহর ও হোটেল। যার ধারাবাহিকতায় মক্কায় তৈরি হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় হোটেল।
২০১৭ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হওয়ার কথা বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই হোটেলটি। ৪৫ তলা উঁচু এই ভবনের ওপরে থাকবে চারটি হেলিপ্যাড। শয্যাকক্ষ থাকেব ১০ হাজার, রেস্টুরেন্ট থাকবে ৭০টি। পাঁচটি তলা বিশেষভাবে থাকবে সৌদি রাজপরিবারের ব্যবহারের জন্য। ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত ‘আবরাজ কুদাই’ এ থাকবে পাঁচতারা হোটেলের সব বিলাসব্যবস্থা। এ যেন শহরের মধ্যেই আরেক শহর।
মক্কার যে জায়গায় এই বিলাসবহুল হোটেলটি নির্মিত হচ্ছে তার মাত্র এক মাইল দক্ষিণেই অবস্থিত ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্র মসজিদ আল হারাম।আর এই দুই হাজার ফুট উঁচু হোটেলটি গড়ে তোলা হয়েছে এমন এক জায়গায়, যেখানে একসময় ছিল একটা অটোমান আমলের দুর্গ। যে পাহাড়ের ওপর দুর্গটি বানানো হয়েছিল, সেই পাহাড়সহ দুর্গটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে এই হোটেল নির্মাণের জন্য।শুধু এই অটোমান আমলের দুর্গই নয়, মহানবীর (সঃ) স্মৃতি বিজরিত অনেক স্থাপনাই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে আধুনিকীকরণের খাতিরে।
ঐতিহাসিক এসব স্থাপনার গুরুত্ব অনেক। কিন্তু সেগুলো ভেঙে ফেলায় মক্কার ঐতিহাসিক চরিত্রটি নষ্ট করে ফেলা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামিক ঐতিহ্য গবেষণা ফাউন্ডেশনের প্রধান ইরফান আল আওয়ালি। তিনি বলেছেন, এখন আমরা মক্কার শেষ দিনগুলো দেখছি। এখানে আসা মুসলিমদের খুবই সাধারণভাবে প্রার্থনা করার কথা। কিন্তু এখন তাঁদের অভিজ্ঞতা হচ্ছে প্রায় লাসভেগাসের মতো। অনেকের সেই রকম জীবনযাপনের সামর্থ্যও থাকে না। শুধু ধর্মপালনের জন্যই নন, মক্কায় এখন অনেকেই আসছেন বিবাহ বা বড় কোনো কনফারেন্স আয়োজনের জন্য।
পর্যটন থেকে বছরে প্রায় ছয় বিলিয়ন ডলার আয় করে সৌদি আরব। আর ইসলাম ধর্মের জন্মভূমিকে আরো পর্যটনবান্ধব করে তোলার জন্য বানানো হচ্ছে আধুনিক বিলাসবহুল সব স্থাপনা। ১৯৫০এর দশকের মক্কার ছবি থেকে দেখা যায়, খুবই সাধারণভাবে হজ্ব পালন করতে আসছেন ইসলাম ধর্মানুসারীরা। কিন্তু এখন পবিত্র কাবাঘরকে ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে বহুতল মসজিদ। যে জন্য এরই মধ্যে ভেঙে ফেলতে হয়েছে প্রাচীন অনেক স্থাপনা। ২০৪০ সাল নাগাদ সেটা আরো বড় করার পরিকল্পনা আছে সৌদি সরকারের।এখন যেখানে ৩০ লাখ মানুষ একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন, সেই জায়গায় ৭০ লাখ মানুষের নামাজ পড়ার ব্যবস্থা করার চিন্তা করছে সৌদি কর্তৃপক্ষ।
বিডি-প্রতিদিন/ ০২ জুলাই, ২০১৫/ রশিদা