শিরোনাম
২০ অক্টোবর, ২০১৯ ১১:৪৫

চীনে বিশ্ব মিলিটারি অলিম্পিক গেমসের চোখ ধাঁধানো উদ্বোধনী

ফায়সাল করীম, চীন:

চীনে বিশ্ব মিলিটারি অলিম্পিক গেমসের চোখ ধাঁধানো উদ্বোধনী

সেই ২০০৮ সালে গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক আয়োজন করে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল চীন। এরপর এক দশকেরও বেশি সময় আয়োজক হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রীড়া দুনিয়ার মনযোগ থেকে অনেকটা দূরেই ছিল শি জিনপিংয়ের দেশটি। অবশেষে শুক্রবার দীর্ঘ ১১ বছরের খরা কাটল। 

দেশটির হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে পর্দা উঠল বিশ্বের নানা দেশের সেনাবাহিনীদের নিয়ে আয়োজিত মিলিটারি ওয়ার্ল্ড গেমসের। উহানের স্পোর্টস সেন্টারে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং মেগা এই ক্রীড়া আসরের উদ্বোধন ঘোষণা করেন। এরপর সন্ধ্যার জমকালো ও চোখ ধাঁধানো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পর্দা উঠে মিলিটারিদের অলিম্পিক খ্যাত এই বিশ্ব ক্রীড়া প্রতিযোগীতার।

বিশ্বের বিভ্ন্নি দেশের সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে প্রতি চার বছরে এই ক্রীড়া আসরের আয়োজন করা হয়। এবার লাল পতাকার দেশে “ মিলিটারি গ্লোরি ওয়ার্ল্ড পিস” বা সেনাবাহিনীর গৌরব, বিশ্বের শান্তি এই স্লোগানকে সামনে রেখে বসেছে গেমসটির সপ্তম আসর। আয়োজনকে ঘিরে পুরো চীনজুড়েই দেখা দিয়েছে ব্যাপক আগ্রহ আর উত্তেজনা। গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকের পর মিলিটারি গেমসকেই ধরা হচ্ছে গণচীনের মাটিতে বড় কোন ক্রীড়া আসর।

১৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই প্রতিযোগীতা চলবে আগামী দশ দিন। এতে অংশ নিচ্ছে ১০৯ টি দেশের প্রায় ১০ হাজার প্রতিযোগী। পুরো আসরে ২৭ ধরনের প্রতিযোগীতায় ৩২৯ টি খেলা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছে আয়োজকেরা। এরমধ্যে জিমন্যাসটিকস, নৌ ও বিমান প্যান্টাথলন, শুটিং, সাতার, ফুটবল, টেনিস নিয়ে দর্শকদের মধ্যে রয়েছে বিপুল আগ্রহ। বিশ্বের বৃহৎ এই মিলিটারি গেমসে এবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অংশ না নিলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশ হিসেবে ভারত ও শ্রীলঙ্কা অংশ নিচ্ছে। 

উদ্বোধনী বক্তব্যে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেন, মিলিটারি গেমসের আসর বিশ্বের সেনাবাহিনীগুলোর ক্রীড়ানৈপুণ্য তুলে ধরার একটি প্রতিযোগীতাই কেবল নয়, এটি বিশ্বের সেনাশক্তিগুলোর মধ্যে বন্ধুত্বের সেতুবন্ধন ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের একটি আদর্শ ক্ষেত্র। 

তিনি বলেন, চীন বিশ্বশান্তির নীতিতে বিশ্বাসী এবং আমাদের মতে এই ক্রীড়া আসর বিশ্ব শান্তির দুয়ারকে আরো প্রসারিত করবে। মিলিটারি গেমসকে চীন ঐতিহাসিক একটি ক্রীড়া আসর হিসেবে বিবেচনা করছে জানিয়ে প্রেসিডেন্ট শি বলেন, সপ্তম আসরকে সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি ও আয়োজন চীন সম্পন্ন করেছে। তাই সফলভাবেই এবারের আয়োজন শেষ করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করনে তিনি।

আন্তর্জাতিক মিলিটারি স্পোর্টস কাউন্সিলের (সিআইএসএম) সভাপতি হার্ভ পিকিরিলো উদ্বোধনী বক্তব্যে বলেন, সংঘাত আর যুদ্ধের দুনিয়ায় এই আয়োজন বিশ্বভ্রাতৃত্ব, সংহতি, সহনশীলতা এবং বন্ধুত্বের বার্তা নিয়ে হাজির হয়েছে। এমন সফল আয়োজনে তিনি গর্ব প্রকাশ করে বলেন, এমন জাকজমক আয়োজন আর অভূতপূর্ব প্রস্তুতির জন্য চীন একটি ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।
 
চীনের মাটিতে এবারের আসরকে স্মরণীয় করে রাখতে তাক লাগানো উদ্বোধনীর আয়োজন করা হয়। ৬০ হাজার দেশী-বিদেশী দর্শকের উপস্থিতিতে উহানের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠখ্যাত স্পোর্টস সেন্টার কানায় কানায় ভরে উঠে। এছাড়া সামাজিক মাধ্যম, টেলিভিশন ও বড় পর্দায় সারা বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখ লাখ দর্শক উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখে মন্ত্রমুগ্ধ হয়। 

আয়োজকরা জানান, বিশ্ব শান্তিকে গুরুত্ব দিয়ে এবারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের নানা ধরনের ডিসপ্লে আর আলোর খেলা সাজানো হয়েছে। অনুষ্ঠানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ থ্রিডি মঞ্চ স্থাপন করে দর্শকদের তাক লাগিয়ে দেন আয়োজকরা। এছাড়া পুরো উদ্বোধনী আসরে মানবসৃষ্ট বিভিন্ন ডিসপ্লের পাশাপাশি ছিল প্রজেক্টর, লাইটিং, এলইডি ডিসপ্লে সহকারে প্যানোরমিক চিত্রের দৃষ্টিন্দন পরিবেশনা। এক-ঘণ্টা ধরে চলা এই জাকজমক আয়োজনের পর মিলিটারি গেমসের মশাল থেকে আলোকশিখা প্রজ্বলন করেন চীনা ক্রীড়াবিদ লিও ইউডোং।

আয়োজকরা জানান, নতুন নতুন ক্রীড়া ইভেন্ট, প্রতিযোগীর সংখ্যা আর পুরস্কার মিলিয়ে এটিই হবে এ যাবৎকালের মিলিটারি গেমসের সবচেয়ে বড় আসর। এতে ১০৯ টি দেশের প্রতিযোগীদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে এথলেটস ভিলেজ, যেখানে খেলোয়াড় ও কর্মকর্তা-কর্মচারী মিলিয়ে একসাথে ১২ হাজার মানুষের থাকা-খাওয়াসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। এছাড়া পুরো আসরকে সফল করতে আড়াই লাখ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেছে কমিটি।
 
গেমসের আয়োজক হিসেবে চীনের পক্ষে অংশ নিচ্ছে সাড়ে পাঁচশ চীনা সেনা সদস্য। আগের ছয়টি আসরে রাশিয়া ও ব্রাজিল পদক পাওয়ায় এগিয়ে থাকলেও এবারের আসর নিয়ে বেশ আশাবাদী চীন।


বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর