১৪৯৪ সালে ফরাসি রাজা চার্লস অষ্টম যখন ইতালি আক্রমণ করেন, তখন তার সেনাবাহিনীতে একটি অজানা এবং বিকৃত রোগ ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগের প্রাদুর্ভাব দ্রুত ইউরোপে ছড়িয়ে যায়। এই ঘটনায় সেনারা পরের বছর তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যায়।
এই মহামারি ইতিহাসে সিফিলিসের প্রথম ঘটনা হিসেবে বিবেচিত হয়। তবে রোগটির উৎপত্তি নিয়ে গবেষকরা অনেক দিন ধরেই বিতর্ক চালিয়ে আসছেন। এক দল গবেষক মনে করেন, এটি আমেরিকায় উদ্ভূত হয়ে ১৪৯৩ সালে কলম্বাসের মাধ্যমে ইউরোপে আসে। অন্যরা মনে করেন, রোগটি ইউরোপেই আগে থেকে ছিল।
সম্প্রতি আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলের প্রাচীন কঙ্কালের ডিএনএ বিশ্লেষণে এই রহস্য নিয়ে নতুন তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, কলম্বাসের আমেরিকা অভিযানের আগের সময়ের কঙ্কালে সিফিলিসের সাথে সম্পর্কিত ব্যাকটেরিয়ার জিনোম পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, রোগটির শিকড় আমেরিকাতেই ছিল।
সিফিলিস একটি ছোট রোগগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত, যেখানে ইয়াওস এবং বেজেলের মতো রোগও রয়েছে। এই রোগগুলো ট্রেপোনেমা পালিডাম ব্যাকটেরিয়ার বিভিন্ন স্ট্রেন দ্বারা সৃষ্ট। সিফিলিস বিশ্বব্যাপী পাওয়া গেলেও, ইয়াওস এবং বেজেল প্রধানত নিরক্ষীয় অঞ্চলে সীমাবদ্ধ।
জার্মানির লেইপজিগে ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর ইভল্যুশনারি অ্যানথ্রোপোলজির গবেষক ড. কিরস্টেন বোস জানান, আমরা পাঁচটি জিনোম পুনর্গঠন করতে পেরেছি, যা আজকের মানুষের মধ্যে চলমান ব্যাকটেরিয়ার আধুনিক স্ট্রেনের সাথে সম্পর্কিত। এগুলো আমেরিকাতেই উদ্ভূত হয়েছে বলে মনে হয়।
গবেষণায় প্রাচীন কঙ্কাল থেকে সংগৃহীত ডিএনএ ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে আর্জেন্টিনার একটি কোমরের হাড়, চিলির একটি পায়ের হাড়, মেক্সিকোর দুটি পায়ের হাড় এবং পেরুর একটি দাঁত অন্তর্ভুক্ত। কঙ্কালের বয়স রেডিওকার্বন ডেটিং পদ্ধতিতে নির্ধারণ করা হয়।
গবেষকরা জানিয়েছেন, এই ব্যাকটেরিয়াগুলোর সাধারণ পূর্বপুরুষ সর্বাধিক ৯,০০০ বছর আগে ছিল। ড. বোস বলেন, ‘এটি এমন একটি সময় যখন মানুষ আমেরিকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছিল এবং বিশ্বের অন্য অংশের মানুষের সঙ্গে তাদের কোনও যোগাযোগ ছিল না। তারা ভূগোল এবং জীববিজ্ঞানের দিক থেকে একেবারে বিচ্ছিন্ন ছিল।’
গবেষণার ফলাফলে ধারণা করা যায়, সিফিলিস এবং এর অন্যান্য আত্মীয় রোগগুলো আমেরিকায় উৎপন্ন হয়েছিল। পরে মানব পাচার এবং ইউরোপ ও আমেরিকার সম্প্রসারণের মাধ্যমে এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে এই গবেষণা সিফিলিসের উৎপত্তি নিয়ে বিতর্ক পুরোপুরি শেষ করবে না বলে মনে করছেন গবেষকরা। ড. বোস বলেন, আমরা রহস্য পুরোপুরি সমাধান করতে পারিনি, কারণ এখনো অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া বাকি। তবে আমরা একটি খোলা মানসিকতা নিয়ে বিশ্লেষণ করছি এবং নতুন ধারণা গ্রহণ করছি। এই বিতর্ক সম্ভবত ভবিষ্যতেও চলতে থাকবে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল