নিউইয়র্কের বিখ্যাত হেডেন প্ল্যানেটারিয়ামে চলছিল ‘এনকাউন্টার্স ইন দ্য মিল্কিওয়ে’ শীর্ষক এক মহাকাশ প্রদর্শনী। সেই শোর প্রস্তুতিপর্বে হঠাৎ করেই ধরা পড়ে এক অভূতপূর্ব চিত্র— সৌরজগতের প্রান্তে থাকা বিশাল বরফঘেরা অঞ্চল ওয়ার্ট ক্লাউডের ভেতরে এক স্পষ্ট সর্পিল গঠন। এটি ছিল এতদিন বিজ্ঞানীদের কল্পনারও বাইরে।
এই চিত্রটি প্রথম নজরে আনেন মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী জ্যাকি ফাহার্টি। পরে এটি যাচাই করেন ওয়ার্ট ক্লাউড নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা গবেষক ডেভিড নেসভোরনি। আশ্চর্যের বিষয়, তার তৈরি বহু বছরের গাণিতিক মডেলে এই সর্পিল গঠন কখনো ধরা পড়েনি, কারণ তিন মাত্রায় এই অঞ্চলটিকে আগে কখনো দেখা হয়নি।
ওয়ার্ট ক্লাউড একটি স্ফীত বরফঘেরা বলয়ের মতো অঞ্চল, যা সূর্য থেকে নেপচুনের চেয়ে হাজার গুণ দূরে অবস্থিত এবং যার গঠন এতদিন গোলাকার বলেই ধরে নেওয়া হতো। কিন্তু নতুন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, অন্তর্বর্তী অংশে একটি স্পষ্ট সর্পিল আকৃতি রয়েছে।
ডেভিড নেসভোরনি ব্যাখ্যা করেছেন, ওয়ার্ট ক্লাউড সৌরজগত থেকে এতটাই দূরে যে, সেখানে কেবল সূর্যের মাধ্যাকর্ষণই নয়, বরং গ্যালাক্সির নিজস্ব টানের প্রভাবও পড়ে। এই গ্যালাক্টিক টাইডই সেখানে সর্পিল কাঠামো তৈরি করছে।
এই আবিষ্কার সৌরজগতের উৎপত্তি ও গঠনের ব্যাখ্যায় নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে। ফাহার্টির মতে, আমরা যদি সত্যিই সৌরজগতের ইতিহাস জানতে চাই, তাহলে এর সীমানা ঘিরে থাকা গঠন ও উপাদানগুলোও বোঝা দরকার। হতে পারে এই দূর প্রান্ত থেকেই একসময় পৃথিবীতে পানি কিংবা প্রাণের সূচনাকারী অণু এসেছে।
তবে এই সর্পিল গঠন আদৌ চোখে দেখা যায় কি না— তা এখনো নিশ্চিত নয়। এ বিষয়ে যথেষ্ট সংখ্যক বরফঘেরা বস্তুর আরও গভীর পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। চিলির ভেরা সি. রুবিন টেলিস্কোপ ভবিষ্যতে এই রহস্যের কিছুটা জবাব দিতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
যদিও এখন পর্যন্ত এটি একটি তাত্ত্বিক গাণিতিক মডেল, তবুও সৌরজগতের গঠন ও তার আশপাশের মহাজাগতিক পরিমণ্ডল সম্পর্কে আমাদের বোঝাপড়ায় এক নতুন পথ খুলে দিয়েছে এই আকস্মিক আবিষ্কার।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল