ফুটবলার হিসেবে কাজী সালাউদ্দিন সবকিছুই পেয়েছেন। বাংলাদেশে প্রথম ফুটবলার হিসেবে বাফুফের সভাপতি ছিলেন হাফিজউদ্দিন আহমদ। তিনি পাকিস্তান জাতীয় দলকে আরসিডি কাপে নেতৃত্ব দিলেও বাংলাদেশ জাতীয় দলে কখনো সুযোগ পাননি। অন্যদিকে সালাউদ্দিন সভাপতি ছাড়াও জাতীয় দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। কোচও ছিলেন। পেয়েছেন স্বাধীনতা, জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার। তরুণ বয়সে স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলেও খেলেছেন। ১৯৮৫ সালে আবাহনীর কোচের দায়িত্ব নেওয়ার পর একবার লিগ ও দুবার ফেডারেশন কাপেও চ্যাম্পিয়ন করান। টানা ১৬ বছর চার মেয়াদে বাফুফের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ রেকর্ড উপমহাদেশে কারোর নেই। তবে ফুটবলার হিসেবে সালাউদ্দিনের জনপ্রিয়তা আকাশ ছোঁয়ার মতো হলেও সভাপতি হিসেবে ততটা ব্যর্থ ও বিতর্কিত।
শেষ পর্যন্ত সালাউদ্দিন যুগের অবসান ঘটতে যাচ্ছে। শনিবার হঠাৎ সংবাদ সম্মেলন ডেকে ঘোষণা দিয়েছেন সামনের নির্বাচনে তিনি আর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন না। অর্থাৎ ২৬ অক্টোবর বাফুফের যে নির্বাচন হওয়ার কথা সেখানে তিনি কোনো পদেই প্রার্থী হবেন না। তার এ ঘোষণার পরই ক্রীড়াঙ্গনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে কে হতে যাচ্ছেন ফুটবলের নতুন সভাপতি? আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর অনেকেই ভেবেছিলেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হকই বাফুফের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তা ভাবার যথেষ্ট কারণও ছিল। একে তো সফল ফুটবলার, তারপর আওয়ামী লীগের ১৫ বছরে ক্রীড়াঙ্গনে দুর্নীতি নিয়ে তিনি সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন। ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়ে তিনি সালাউদ্দিনের পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। তবে আমিনুল বিষয়টি আগেই পরিষ্কার করেছেন তিনি কোনোভাবেই ফেডারেশনের সভাপতি হতে আগ্রহী নন। তবে ফুটবল উন্নয়নে কাজ করে যাবেন। গতকাল তরফদারের অনুষ্ঠানেও আমিনুল উপস্থিত ছিলেন। সেক্ষেত্রে ধরে নেওয়া যায় সভাপতি পদে তিনি আর নির্বাচন করছেন না।
সালাউদ্দিনের নির্বাচন না করার ঘোষণা আসার পরই শোনা যায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তাবিথ আউয়ালের নাম। তিনি আবার বাফুফের তিনবার নির্বাচিত সহসভাপতিও ছিলেন। ২০২০ নির্বাচনে তাকে ষড়যন্ত্র করে হারানো হয় এ অভিযোগ অনেকেরই। পেশাদার লিগে তারই পৃষ্ঠপোষকতায় ফেনী সকার ও নফেল স্পোর্টিং অংশ নিয়েছিল। একসময় আরামবাগের হয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগও খেলেছেন। ফুটবল উন্নয়নে কাজ করতে চাইলেও তাকে নানাভাবে বাধা দেওয়া হয়। সেজন্যই তাবিথের নামটি বেশি উচ্চারিত হতে থাকে। এমনকি এটাও শোনা যাচ্ছিল তিনি প্রার্থী হলে অন্য কেউ সভাপতি পদে দাঁড়াবেন না।
গতকাল ঢাকার একটি পাঁচতারা হোটেলে ক্রীড়াঙ্গনের চেনামুখ তরফদার রুহুল আমিন সভাপতি পদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিলেন। ‘ব্যানারে লেখা ছিল ঐকমত্যের ভিত্তিতে বাফুফের নির্বাচন’। টাঙ্গাইলের বিএনপি নেতা ও অ্যাথলেটিকস ফেডারেশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী ইমাম তপনই সবার আগেই ঘোষণা দেন বাংলাদেশের সব জেলা, বিভাগের পক্ষ থেকে আমরা বাফুফের সভাপতি পদে তরফদার রুহুল আমিনের নাম ঘোষণা করছি। এরপর মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে তরফদার বলেন, আমি এই ঘোষণা সাদরে গ্রহণ করলাম। উল্লেখ্য, সালাউদ্দিন যে চারবার নির্বাচিত হয়েছিলেন দুবার সেখানে প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ২০২০ সালে তরফদার সালাউদ্দিনের বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিলেও শেষের দিকে শুধু নির্বাচন থেকে সরেই যাননি, পেশাদার লিগ থেকে তার দল সাইফ স্পোর্টিংয়ের নাম প্রত্যাহার করে নেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকেই তিনি অবশ্য বলেন, উঁচু মহলের চাপে এসব করতে বাধ্য হয়েছেন।
গতকাল বিএনপি নেতা ও ডাকসুর সাবেক জি এস খায়রুল কবির খোকন, আমিনুল হক, মামুনুল ইসলামরা দর্শকের আসনে বসেছিলেন। মঞ্চে ছিলেন তরফদার, তপন, জাতীয় দলের সাবেক দুই তারকা ফুটবলার শফিকুল ইসলাম মানিক, সৈয়দ রুম্মন ওয়ালি বিন সাব্বির, বিভাগীয় নেতা আবদুল্লাহ ফুয়াদ। প্রার্থী হওয়ার ঘোষণার দিন তরফদারের শোডাউন ছিল চোখে পড়ার মতো। বলা হচ্ছে ঐকমত্যে প্যানেলে নির্বাচন। বাস্তবে তা কতটুকু কার্যকর হয় সেটাই দেখার বিষয়।