এবার আর প্রতিশ্রুতি নয়, বঙ্গবন্ধু গোল্ড কাপ ঠিকই মাঠে নামছে। বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিনের কথা ঠিক থাকলে ২৯ জানুয়ারিই তৃতীয় বঙ্গবন্ধু কাপ শুরু হওয়ার কথা। ৮ ফেব্রুয়ারি ফাইনালের মাধ্যমে আসরের পর্দা নামবে। বাংলাদেশ ছাড়া টুর্নামেন্টে বাহরাইন, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও শ্রীলঙ্কার অংশ নেওয়ার কথা। শুধুমাত্র এশিয়ার দলগুলোই আসরে খেলবে। ১৯৯৬ ও ১৯৯৯ সালে আগের দুই বঙ্গবন্ধু কাপে অন্য মহাদেশের দলগুলো অংশ নিয়েছিল। অনেকে বলেছেন এটা সালাউদ্দিন বা বাফুফের ব্যর্থতা। ইউরোপ, ল্যাতিন বা আফ্রিকার দলগুলোকে আনতে পারছেন না। বাস্তবতার কথা চিন্তা করলে এশিয়ান দলগুলোই অংশ নেওয়াটা ঠিক রয়েছে। কেননা বাংলাদেশের ফুটবলের মান এখন এতটা নিচে যে এশিয়ার ধারেকাছে নেই। যার প্রমাণ মিলেছে ঢাকায় জাপান অনূর্ধ্ব-২১ দলের বিপক্ষে মামুনুলদের ফলাফল।
বঙ্গবন্ধু কাপে এখনো গ্রুপিং নির্ধারণ হয়নি। সে কারণে বাংলাদেশ কাদের সঙ্গে লড়বে তা ঠিক হয়নি। ছয় দল অংশ নিচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে দুই গ্রুপে তিনটি করে দল থাকার কথা। দুই গ্রুপে শীর্ষে থাকা দুই দল সেমিফাইনালে লড়বে। বাংলাদেশ কি শেষ চারে ঠাঁই পাবে। যেকোনো টুর্নামেন্টে স্বাগতিকদের প্রত্যাশা থাকে শিরোপা। বঙ্গবন্ধু কাপে বাহরাইন ছাড়া উঁচুমানের দল নেই বললেই চলে। তারপরও বাংলাদেশ শিরোপাতো নয়ই সেমিফাইনাল খেলতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। হ্যাঁ, সেমিফাইনাল খেলতে পারে তা আবার নির্ভর করছে গ্রুপে দুই প্রতিপক্ষ কারা থাকবে তার ওপর। গ্রুপে যদি শ্রীলঙ্কা থাকে তাহলে রানার্সআপ হয়ে সেমিতে যেতে পারে। আবার হোচট খাওয়ার শঙ্কাও রয়েছে। কেননা শ্রীলঙ্কাকে হারাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সম্প্রতি দুই প্রীতি ম্যাচে প্রথমটা ড্র দ্বিতীয়টাতে কোনোক্রমে জয় পেয়েছিল। মাঠেই প্রমাণ মিলেছে দুই দলের শক্তি প্রায় সমান। বঙ্গবন্ধু কাপে অতিথি হয়ে যারা আসছে তাদের জাতীয় দল আসছে কিনা তা সালাউদ্দিন কিন্তু পরিষ্কার করে বলতে পারেননি। এলে টুর্নামেন্টে বাহরাইন যে টপ ফেবারিট হবে তাতে কারোর দ্বিমত থাকার কথা নয়। শক্তির বিচারে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া এগিয়ে। সিঙ্গাপুরকেও খারাপ বলা যাবে না। সুতরাং জয়ের সম্ভাবনা বলতে শুধু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই বলা যায়। তাহলে বঙ্গবন্ধু কাপে স্বাগতিক বাংলাদেশের টার্গেট কি? বিস্ময় হলেও সত্যি নিজেদের দেশে খেলা হলেও বাংলাদেশের প্রস্তুতি তেমন হচ্ছে না। বাফুফে হয়তো বলতে পারে অনুশীলনতো শুরু হয়েছে আগেই। হ্যাঁ, হচ্ছে ঠিকই এতে খেলোয়াড়রা কতটা মনোযোগী তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কেননা বঙ্গবন্ধু কাপে কে যে দলকে প্রশিক্ষণ দেবেন তা এখনো ঠিক হয়নি। বাফুফে বলছে সাইফুল বারী টিটু আপাতত কোচ হলেও আসরে মূল কোচের দায়িত্ব পালন করবেন লোডডিক ক্রুইফই। গতকাল বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাইম সোহাগ জানালেন, ক্রুইফের ব্যাপারটি পরিষ্কার হবে ১৫ জানুয়ারির পর। অর্থাৎ ক্রুইফ আসবেন কি আসবেন না তা এখনো নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় খেলোয়াড়রা অনুশীলনে কতটা মনোযোগী থাকতে পারেন। তাছাড়া ফান্ডের অভাবে এতদিন বঙ্গবন্ধু কাপ হতে না পারলেও এবার নাকি টাকার ছড়াছড়ি। মূল স্পন্সর চ্যানেল নাইন। কো-স্পন্সার হয়েছেন একটি ব্যাংক। আরও কোম্পানি এগিয়ে আসবে। গতকাল ফান্ডের জন্য বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে দেখা করেছেন। এখানেও বড় অঙ্কের ফান্ড মিলবে। প্রশ্ন উঠেছে এত টাকা, এতে খেলোয়াড়দের বাড়তি সুবিধা থাকছে কি? নিজেদের দেশে টুর্নামেন্ট হলে এমনিতেই খেলোয়াড়রা বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে। এবার মামুনুলরা তা যদি না পান তা হবে দুঃখজনক। জাতির জনকের নামে টুর্নামেন্ট। এখন যদি জাতীয় দল গো হারা হারে তাতে দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হবে। আসলে বাফুফে এসব কিছু খেয়ালই করেনি। না করার বড় কারণ ছিল বঙ্গবন্ধু কাপের অনিশ্চয়তা। ২৯ জানুয়ারি টুর্নামেন্টের যাত্রা অথচ মূল কোচ কে হবেন এটা এখনো ঠিক হয়নি। এর চেয়ে হাস্যকর ব্যাপার আর কি হতে পারে।