রাজশাহীর চারঘাটে ২০১৮ সালে নির্মাণ করা ৮ কোটি টাকার পানির পাম্প চালু হওয়ার আগেই অচল। কাটাখালী, বাঘা ও তাহেরপুর পৌরসভা এলাকায় ‘বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ প্রকল্প’ বাস্তবায়নের কাজ পাঁচ বছর আগে শুরু হলেও এখনো শেষ হয়নি। প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিন প্রকল্পে ছয়টি প্যাকেজ বাস্তবায়নে দেড় বছর বা ১৮ মাস নির্ধারিত ছিল। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকল্পগুলোর সিংহভাগ বিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিশোধও করা হয়েছে। গোদাগাড়ী পৌর এলাকায় ২ কোটি টাকায় ২০২৩ সালে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণ করা হয়। সেটিও কাজে আসেনি।
২০১৮ সালের ৩০ জুলাই ঘটা করে প্রকল্প কাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় এমপি ও তৎকালীন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। দরপত্র অনুযায়ী, প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ২০১৯ সালের ২২ নভেম্বর। এর পর সাত বছরে চারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হলেও কোনো স্থাপনা চালু করা যায়নি। এরই মধ্যে গত বছরের ১৩ আগস্ট প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত দেখিয়ে বিল তুলে নিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স মুক্তা কনস্ট্রাকশন। চারঘাট পৌরসভা সূত্র জানায়, দেশের প্রথম শ্রেণির ১৯টি পৌরসভায় বিশেষ এ প্রকল্প নেওয়া হয়। এডিবি এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের অর্থায়নে তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতীকরণ প্রকল্পের (ইউজিপ-৩) আওতায় বাস্তবায়ন করা হয় প্রকল্পটি। প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে ছিল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে অন্তত ৪৪ হাজার মানুষ এর সুবিধা ভোগ করতেন।
পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মজিবর রহমান বলেন, ‘পানির পাইপ ও পাম্প স্থাপনে দরপত্রের ন্যূনতম নীতিমালা মানা হয়নি। প্রকল্প চলাকালে আমাদের কাজ দেখতে দেওয়া হতো না। প্রকল্প বুঝে পাওয়ার পর দেখি পাইপ, পাম্প, পাইপ স্থাপন সবকিছুতেই অনিয়ম। এ প্রকল্প সচল করা সম্ভব নয়।’ পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, ‘আমি দুই মাস আগে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছি। প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী কাগজ-কলমে আমি থাকলেও বাস্তবে কোনো কাজ করতে দেওয়া হয়নি। তার পরও আমার সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ দেখে নেওয়ার চেষ্টা করেছি। এখন পানি সরবরাহ না হওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই।’ চারঘাট পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মোবারক হোসেন বলেন, ‘ওই প্রকল্পের সব সরঞ্জাম ব্যবহারের আগেই অকেজো হয়ে গেছে। কোনোভাবেই সেই পানি সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।’ রাজশাহী মহানগরীর উপকণ্ঠের পৌরসভা কাটাখালীতে দুই প্যাকেজে ২৩ কোটি টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে। ১০ কোটি ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে ঘরে ঘরে পানি সরবরাহের পাইপলাইন নির্মাণের কাজ করছে সারা এন্টারপ্রাইজ। ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে পানি উত্তোলন ও বণ্টন অবকাঠামোর কাজ যৌথভাবে করছে মেসার্স কবির হোসেন ও ডন এন্টারপ্রাইজ। এসব ঠিকাদার রাজশাহীর বাঘা ও তাহেরপুর পৌরসভাতেও একই প্রকল্পের কাজ করছেন।