বিশ্বে মানবতা নিয়ে সবক প্রদানকারী যুক্তরাষ্ট্রের ডিটেনশন সেন্টারসমূহে অভিবাসীদের মানবেতর জীবনযাপনের অবিশ্বাস্য বিবরণী ফাঁস হয়েছে। জানা গেছে, গত ছয় মাসে ডিটেনশন সেন্টারে মারা গেছেন ১০ অভিবাসী। এর আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলের চার বছরে মারা গেছেন ২৮ অভিবাসী। ১৫ জুন সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ৪১ হাজারের ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছে ৫৬ হাজার অভিবাসীকে। এর ফলে অনেকেই ঘুমানোর বিছানা দূরের কথা একটি বালিশও পাচ্ছেন না। সাতজনের একটি কক্ষে ৪২ জনকে রাখা হয়েছে কংক্রিটের মেঝের ওপর এবং সেই ছোট্ট কক্ষেই প্রস্রাব-পায়খানা করতে হচ্ছে খোলা টয়লেটে।
দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, কোনো ধরনের গুরুতর অপরাধে বন্দিরা আটক হননি। শুধু অভিবাসনের আইন লঙ্ঘনের অপরাধে তাদের আটক হতে হয়েছে। ডিটেনশন সেন্টারে অনেক অভিবাসী সাত দিনে একবার স্নানেরও সুযোগ পাচ্ছেন না। উচ্চ রক্তচাপ অথবা ডায়াবেটিসে আক্রান্তরা ওষুধ পাচ্ছেন না। এদিকে লসএঞ্জেলেস এবং নিউইয়র্কের ইমিগ্রেশন অ্যাটর্নিরা জানিয়েছেন, তাদের অসংখ্য মক্কেলের হদিস পাচ্ছেন না। ফেডারেল সিস্টেমেও পাওয়া যাচ্ছে না। অর্থাৎ আটকের পর অনেক অভিবাসীকে নানা স্থানে স্থানান্তর করা হচ্ছে। আরিজোনা ও ক্যালিফোর্নিয়ার ডিটেনশন সেন্টারের অভিবাসীদের কাছে মাঝেমধ্যেই কারারক্ষী এবং আইসের এজেন্টরা প্রস্তাব দিচ্ছেন যে, স্বেচ্ছায় নিজ দেশে ফিরে যেতে চাইলে নগদ ১ হাজার ডলার পকেট খরচ বাবদ এবং ফ্রি টিকিট দেওয়া হবে। ডিটেনশন সেন্টারে অসহনীয় অবিশ্বাস্য দুঃখকষ্টে থাকা অভিবাসীর কেউই এমন প্রস্তাবে সায় দেননি। ফ্লোরিডার ‘আমেরিকান্স ফর ইমিগ্র্যান্ট জাস্টিস’র পরিচালক অ্যাটর্নি পোল শ্যাভেজ বলেন, গত ২০ বছরের কর্মজীবনে এমন নিদারুণ অবস্থা কখনো দেখিনি। সভ্য সমাজে এমন আচরণকে মেনে নেওয়া যায় না। নিউইয়র্ক অঞ্চলে অভিবাসন বিষয়ক খ্যাতনামা আইনজীবী এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ডিস্ট্রিক্ট লিডার মঈন চৌধুরী জানান, দিন যত যাচ্ছে ততই বাড়ছে ডিটেনশন সেন্টারে অমানবিক আচরণের পরিধি। এমনকি, আমরা চেষ্টা করেও আটক অনেকের হদিস পাচ্ছি না।
উল্লেখ্য, গত মে মাসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্তৃক দৈনিক অন্তত : ৩ হাজার অবৈধ অভিবাসীকে গ্রেপ্তারের টার্গেট নির্ধারণ করে দেওয়ার পরই এ অবস্থা তৈরি হয়েছে। আমেরিকার ‘ইন্টারন্যাশনাল বার অ্যাসোসিয়েশন’র পরিচালক অ্যাটর্নি মঈন চৌধুরী আরও জানান, ভাবতেও অবাক লাগে, অনেকে পূর্বনির্ধারিত তারিখে কোর্টে হাজিরা দিতে গিয়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। অর্থাৎ অভিবাসীরা আত্মপক্ষ সমর্থনের ন্যূনতম সুযোগও পাচ্ছেন না। আটক অনেকে তার স্ত্রী/স্বামী-সন্তানের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগও পাচ্ছেন না।
ক্যালিফোর্নিয়া থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসওম্যান জুডি চু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘এক্স’-এ লিখেছেন, এডেলান্ট নামক স্থানের একটি ডিটেনশন সেন্টার ভিজিটের সময় তিনি দেখেছেন দুর্গন্ধ বিরাজ করছে এমন একটি বদ্ধ কক্ষে কিছু অভিবাসীকে রাখা হয়েছে, তারা অ্যাটর্নির সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ পাচ্ছেন না। আত্মীয়-স্বজনকেও সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তারা গত ১০ দিন ধরে তাদের আন্ডারওয়েরও পরিবর্তনের সুযোগ পাননি।
লসএঞ্জেলেস সিটিতে অবস্থিত ফেডারেল ভবনের একটি বেসমেন্টে বেশ কজন অভিবাসীকে রাখা হয়েছে, সেখানে আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। এভাবে কঠিন একটি পরিস্থিতি সইতে হচ্ছে তাদের।
স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘পাবলিকস কাউন্সেল’র অ্যাটর্নি মার্ক রোজেন বাম বলেছেন, ওদের এমনভাবে রাখা হয়েছে যেন সবাই ভয়ংকর অপরাধে দোষী। অথচ কেউই ক্রিমিনাল মামলায় অভিযুক্ত নন।