সমালোচনার ঝড় বয়ে যাচ্ছে টুইটারে। গ্লেন ম্যাকগ্রা, মার্ক ওয়াহদের মতো ক্রিকেট কিংবদন্তিরা বিস্মিত অস্ট্রেলিয়ার লজ্জাজনক ব্যাটিংয়ে। তারা ভাবতেই পারছেন না, অসি ক্রিকেট দল এমন যাচ্ছেতাই ব্যাটিং করল কোন মোজেজায়। দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট সিরিজটি বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ও মর্যাদার। দুই দলের মাঠের লড়াইয়ের চেয়ে বাইরের লড়াই কিন্তু কম নয়। বরং আরও বেশি তিক্ত। কাল অ্যাশেজের চতুর্থ টেস্টের প্রথম ইনিংসে এমনই হতচ্ছাড়া ব্যাটিং করলেন মাইকেল ক্লার্করা, তাতে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই নিয়েছেন স্থায়ীভাবে। স্টুয়ার্ট ব্রডের বিধ্বংসী বোলিংয়ে মাত্র ৬০ রানে গুটিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। ইনিংসটির স্থায়িত্ব মাত্র ১৮.৩ ওভার বা ১১১ বল। যা টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে কম বলের ইনিংস। অস্ট্রেলিয়াকে নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে 'থ্রি হান্ড্রেড' ক্লাবে নাম লেখান ব্রড। তার আগে ৩০০ উইকেট নিয়েছেন ইংলিশ বোলার জেমস অ্যান্ডারসন, ইয়ান বোথাম, বব উইলিস ও ফ্রেড ট্রু ম্যান। আগের টেস্টে অ্যান্ডারসন প্রথম ইংলিশ বোলার হিসেবে নাম লেখান 'ফোর হান্ড্রেড' ক্লাবে।
নটিংহাম বা ট্রেন্টব্রিজ টেস্টটি যেমন অসিদের লজ্জার। ঠিক তেমনি ব্রডের সাফল্যে উদ্ভাসিত। 'থ্রি হান্ড্রেড' নাম লেখানো ব্রড কাল বিশ্বরেকর্ডও গড়েন। টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে কম সময় ও কম বলের খরচে ৫ উইকট তুলে নেওয়ার রেকর্ড গড়েন এই ইংলিশ পেসার। মাত্র ১৯ বলে তিনি ৫ উইকেট নেন। এর আগে ১৯৪৭ সালে আর্নি টোশাক ১৯ বলের ব্যবধানে তুলে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। অবশ্য ২০১১ সালে কেপটাউনে শেন ওয়াটসন ২১ বলের ব্যবধানে নিয়েছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকার ৫ উইকেট। যদিও ওই টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ৪৭ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ব্রড কাল অস্ট্রেলিয়ার যে ৮ উইকেট নেন, সেজন্য খরচ হয়েছে মাত্র ৩৩ বল! ট্রেন্ট ব্রিজে ব্রডের স্পেল ৯.৩-৫-৮। নতুন বলে অ্যাসেজে যে কোনো পেসারের সেরা পারফরম্যান্স। ১৯৯৭ সালে গ্লেন ম্যাকগ্রা লর্ডসে ৪৭ রানে নিয়েছিলেন ৮ উইকেট। তবে অ্যাশেজের সেরা বোলিং ইংলিশ স্পিনার জিম লেকারের। ১৯৫৬ সালে ম্যাঞ্চেস্টার টেস্টে ১৯ উইকেট নিয়েছিলেন লেকার। প্রথম ইনিংসে তার স্পেল ৫১.২-২৩-৫৩-১০ এবং দ্বিতীয় স্পেলে ১৬.৪-৪-৩৭-৯।
কার্ডিফে প্রথম টেস্ট জেতার পরেরটি ৪০৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে গিয়েছিল ইংল্যান্ড। ইংলিশ সাবেক ক্রিকেটারদের সমালোচনায় তখন ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়েছিলেন ব্রড, অ্যান্ডারসনরা। সেই লজ্জা এড়াতে সিরিজের তৃতীয় টেস্টে মাত্র তিনদিনে জিতে নেয় টেস্ট। কাল নটিংহামে সিরিজ নিশ্চিত করতে নামে অ্যান্ডারসনবিহীন ইংল্যান্ড। দলের সেরা পেসারকে ছাড়া ইংল্যান্ড কেমন করবে, এমন প্রশ্ন টেস্ট শুরুর সময়ও জন্ম নিয়েছিল। কিন্তু স্টুয়ার্ট ব্রড কাল যে বিধ্বংসী বোলিং করেন, তা রীতিমতো বিস্ময়কর। প্রথম ওভারেই ব্রড সাজঘরে ফেরত পাঠান রজার্স ও স্টিভ স্মিথকে। সেই ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেনি সফরকারী অস্ট্রেলিয়া। গুটিয়ে যায় মাত্র ১৮.৩ ওভারে। অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক(১০) ও মিচেল জনসন (১৩) ছাড়া আর কোনো অসি ক্রিকেটার ডাবল ফিগারে পেঁৗছাতে পারেনি। ৬০ রানের ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোচ্চ স্কোর কিন্তু কোনো ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে আসেনি। এসেছে অতিরিক্ত খাত থেকে ১৪।
টেস্ট ক্রিকেট ইতিহাসে সবচেয়ে কম রানে অলআউটের রেকর্ড নিউজিল্যান্ডের। ১৯৫৫ সালে অকল্যান্ডে মাত্র ২৬ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ব্ল্যাক ক্যাপসরা। সেটা ছিল তৃতীয় ইনিংসে। প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে কম স্কোর দক্ষিণ আফ্রিকার। ১৯৩২ সালে মেলবোর্নে ২৩.২ ওভারে ৩৬ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। সেটাই এখন পর্যন্ত প্রথম ইনিংসে সবচেয়ে কম। বলের হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসটি সবার আগে। মাত্র ১১১ বল স্থায়ী ইনিংসটি। দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসটির স্থায়িত্ব ছিল ১৪০ বল।