কথায় আছে, শাড়িতে নারী। আর সেই শাড়ির পূর্ণতা আনে- ফ্যাশনেবল ব্লাউজ। এক কথায়, শাড়ি তখনই আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে, যখন পরনে থাকে ফ্যাশনেবল ও মানানসই ব্লাউজ।
একটা সময় ছিল, যখন শাড়ির সঙ্গে মিলিয়ে ব্লাউজ পরা হতো। তবে সে ধারা বদলেছে। এখন পছন্দসই ব্লাউজের সঙ্গেই মিলিয়ে শাড়ি পরার ধারা গড়ে উঠেছে। আর তাতে সৃজনশীলতার ছাপ রাখতে নকশায় এসেছে নানা পরিবর্তন। এমনকি ফিরে আসছে ষাট-সত্তর দশকের ব্লাউজের নকশাও। তাই তো
ফ্যাশনিস্তাদের ফ্যাশনে শাড়ির ড্রেপিং আর নকশার সঙ্গে সঙ্গে ব্লাউজ নিয়ে ভাবনাও কম নয়!
ফ্যাশনবোদ্ধাদের ভাষ্য- সময়ের সঙ্গে সঙ্গে যেমন বদলেছে শাড়ির ধরন, তেমনি ব্লাউজেও এসেছে নানা বৈচিত্র্য ও ফ্যাশনের ছোঁয়া। আগে যেখানে ব্লাউজ মানেই ছিল সাধারণ গোল গলা, তিন কোয়ার্টার হাতা, সেখানে এখনকার ব্লাউজ ফ্যাশনে দেখা যাচ্ছে নতুন নতুন কাট, রং, কাপড় ও নকশায় সাহসী ও সৃজনশীলতা। রকমারি কাটিং, স্লিভ, নেকলাইন এবং অ্যামব্রয়ডারির ব্যবহার শাড়ির এই অনুষঙ্গটিকে করে তুলেছে আরও ট্রেন্ডি এবং স্টাইলিশ।
ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধন
পশ্চিমা ফ্যাশনের ভিড়ে আজও- অনেক নারী ব্লাউজ পরতে ভালোবাসেন। সাধারণ কাটিংয়ের ব্লাউজের সঙ্গে হাতের কাজ, যেমন : কাঁথা স্টিচ, চুমকি বা জারদৌসির কাজ আনে ক্লাসিক লুক। এ ছাড়াও, মসলিন বা সিল্কের শাড়ি মিলিয়ে কনুই পর্যন্ত হাতার ব্লাউজ অথবা প্রিন্টেড সুতির ব্লাউজ আজও অমলিন। এ ধরনের ব্লাউজগুলো সাধারণত খুব বেশি আধুনিকতার ছোঁয়া না থাকলেও, একটি স্নিগ্ধ এবং মার্জিত ভাব থাকে। তা ছাড়া আজকাল বিভিন্ন ধরনের কাট, যেমন- ব্যাকলেস, হল্টার নেক, বোট নেক, প্রিন্সেস কাট এবং কোমর পর্যন্ত লম্বা ব্লাউজ এখন ফ্যাশনে ইন। স্লিভের ক্ষেত্রেও এসেছে ভিন্নতা- স্লিভলেস থেকে শুরু করে থ্রি-কোয়ার্টার, বেল স্লিভ, পাফি স্লিভ সবই এখন ট্রেন্ডে রয়েছে। এসব ব্লাউজে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন নতুন ফ্যাব্রিক, যেমন : ভেলভেট, সাটিন এবং রকমারি সিনথেটিকভ অ্যামব্রয়ডারির পাশাপাশি প্রিন্ট, সিকুইন এবং অ্যাপ্লিকের কাজও দেখা যায়। বিশেষ করে বিভিন্ন উৎসবে বা পার্টিতে ঝলমলে এবং গর্জিয়াস ব্লাউজ পরার চল বেড়েছে।
কাপড় ও রঙের কাব্য
ব্লাউজ তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে সিল্ক, কাটন, বেনারসি, জর্জেট, ভেলভেট, এমনকি নেট ও লেস কাপড়ও। গাঢ় রং যেমন মেরুন, নেভি ব্লু, কালো বা ডার্ক গ্রিনের পাশাপাশি এখন নারীরা বেছে নিচ্ছেন পেস্টেল শেড, মেটালিক টোন এমনকি প্রিন্টেড বা কনট্রাস্ট কালার ব্লাউজ।
ফ্যাশনেবল এবং আরামদায়ক
ফ্যাশন যতই আধুনিক হোক, বাঙালি নারী কিন্তু আরামের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেন না। তাই ডিজাইনাররাও এখন ব্লাউজের কাট ও ফিটিংয়ের পাশাপাশি কাপড়ের মোলায়েমতা, ঘামের শোষণ ক্ষমতা, ও চলাফেরায় সুবিধাজনক ডিজাইন তৈরিতে মনোযোগ দিচ্ছেন।
ফ্যাশনের নতুন ট্রেন্ড
ব্লাউজের ব্যতিক্রমী ডিজাইন আর কাটিং আরও নান্দনিক করে তুলতে পারে শাড়ির লুক। বর্তমানে কটি, টপস, ক্রপটপ স্টাইলের ব্লাউজগুলো ফ্যাশন ট্রেন্ডে বেশ এগিয়ে। ব্লাউজের কাট নিয়ে চলছে নানা নিরীক্ষা। দৈর্ঘ্যরে দিক থেকেও ছোট-বড় সবই পরছেন সবাই, নিজের দৈহিক গড়ন ও পছন্দ বুঝে। এ ছাড়া ট্রেন্ড অনুযায়ী নারীরা বানাচ্ছেন কনট্রাস্ট ব্লাউজ, যেন এক ব্লাউজ পরা যায় অনেক ধরনের শাড়ির সঙ্গে। মনোক্রোম বা একরঙা ব্লাউজের প্রতি এখন আবার ঝোঁক বাড়ছে সবার। আজকাল বাঙালি রমণীদের ফ্যাশনে কিছু নতুন ট্রেন্ড বিশেষভাবে নজর কাড়ছে-
► ডিজাইনার ব্লাউজ : খ্যাতনামা ফ্যাশন ডিজাইনাররা এখন শাড়ির সঙ্গে পরার জন্য এক্সক্লুসিভ ব্লাউজ ডিজাইন করছেন, যা খুব সহজেই ফ্যাশন সচেতনদের দৃষ্টি কাড়বে।
► কন্ট্রাস্ট ব্লাউজ : শাড়ির রঙের সঙ্গে বিপরীত রঙের ব্লাউজ এখন বেশ জনপ্রিয়। এটি শাড়ির সৌন্দর্যকে আরও ফুটিয়ে তোলে এবং একটি আলাদা স্টাইলিশ লুক দেয়।
► মাল্টি-পারপাস ব্লাউজ : কিছু ব্লাউজ এমনভাবে ডিজাইন করা, যা বিভিন্ন ধরনের শাড়ির সঙ্গে মানানসই। ফলে এক ব্লাউজ দিয়েই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভিন্ন ভিন্ন লুক পাওয়া যায়।
► ব্লাউজ উইথ স্টেটমেন্ট স্লিভস : পাফি স্লিভস বা বেল স্লিভসের মতো বিশেষ ধরনের হাতা এখন ফ্যাশনের কেন্দ্রবিন্দুতে। সাধারণ শাড়ির সঙ্গে এই ধরনের ব্লাউজ পরলে একটি আধুনিক এবং ট্রেন্ডি লুক পাওয়া যায়।
তবে ফ্যাশনেবল ব্লাউজ নির্বাচন করার সময় কিছু বিষয় অবশ্যই মাথায় রাখতে হয়-
প্রথমে শাড়ির ফ্যাব্রিক এবং ডিজাইনের সঙ্গে মানানসই ব্লাউজ নির্বাচন করা জরুরি। আর নিজের শারীরিক গঠনের সঙ্গে মানানসই কাট এবং নেকলাইন বেছে নেওয়া উচিত। কোন অনুষ্ঠানে পরার জন্য ব্লাউজ নির্বাচন করছেন, তার ওপর নির্ভর করে ডিজাইন এবং মেটেরিয়াল বাছাই করা উচিত। পাশাপাশি আরামের দিকটিও খেয়াল রাখা জরুরি।
বাঙালি নারীর ফ্যাশনে ব্লাউজ এখন কেবল আনুষঙ্গিক নয়, এটি হয়ে উঠেছে স্টাইলের কেন্দ্রবিন্দু। প্রতিটি ব্লাউজেই যেন মিশে আছে তার রুচি, ব্যক্তিত্ব ও আত্মবিশ্বাস। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বদলে যাচ্ছে ছোট্ট পোশাকটির চেহারা, তবে ধারা থাকছে চিরন্তন বাঙালিয়ানার ছাপ-নির্ভার, স্নিগ্ধ ও স্বকীয়তা।