কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সংঘটিত নৃশংস ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি উদ্বেগ ও প্রতিবাদ জানিয়েছে। একই সঙ্গে আন্দোলনে হতাহত সকল ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তপূর্বক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
শুক্রবার (০২ আগস্ট) সন্ধায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে শিক্ষক সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক মো. মমিন উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক শেখ মাশরিক হাসান এসব তথ্য জানান।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমরা গভীর উদ্বেগ ও হতাশার সাথে লক্ষ্য করছি কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে, যা সার্বিকভাবে উদ্বেগজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাইরে সৃষ্ট অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, মর্মাহত ও শোকাহত। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাণহানি আমাদেরকে মানসিকভাবে বিচলিত ও বিপর্যন্ত করেছে। এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উক্ত সহিংসতায় নিহত শিক্ষার্থী, সাধারণ জনগণ, নিষ্পাপ শিশু, সাংবাদিক, পুলিশসহ সকলের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা ও শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। একই সঙ্গে আহত সকল শিক্ষক-শিক্ষার্থীর প্রতি সমবেদনা প্রকাশ ও তাঁদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত হয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপনা ও শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করা, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, মেট্রোরেল, সেতু ভবন, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের মত জনবান্ধব এবং জনগুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনায় জড়িত হতে পারে না।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলনকে সহিংস ঘটনায় পরিণত করে স্বার্থান্বেষী মহল দেশব্যাপী নারকীয় তাণ্ডব চালিয়ে যে নৈরাজ্য ও অরাজকতা সৃষ্টি করেছে তাঁর তীব্র নিন্দা এবং হতাহতের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তপূর্বক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।
শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের যৌথ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, চলমান আন্দোলনে নিহত গণিত বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আহসান হাবিব তামিমের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। তার পরিবারের যোগ্য সদস্যকে চাকরির সুযোগ প্রদান করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সাথে কোটা সংস্কার আন্দোলনে যে সকল নিরপরাধ শিক্ষক-শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন রাষ্ট্রীয়ভাবে তাঁদের সুচিকিৎসা এবং নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান করে প্রয়োজনে পরিবারের যোগ্য সদস্যকে চাকরি প্রদানের দাবি জানাচ্ছি।
শিক্ষক সমিতির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইতোমধ্যে আদালতের রায় ও সরকারের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবির প্রতিফলন ঘটেছে। বর্তমান পরিস্থিতিকে শান্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকলকে সহনশীল আচরণ করার এবং পরিস্থিতি যাতে আর অবনতি না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের জন্য জবিশিস অনুরোধ জানাচ্ছে।
শিক্ষক সমিতির বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থী যেন কোনোভাবেই হয়রানির শিকার না হয় সে ব্যাপারে আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সহ সকল পক্ষকে সাথে নিয়ে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দেশের ভাবমূর্তি, শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষা এবং শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি।
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ