চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের জেরে এক মাস ধরে বন্ধ রয়েছে দেশের সব স্কুল-কলেজ-মাদরাসা। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ রয়েছে দেড় মাসের বেশি সময় ধরে। দীর্ঘ সময় পর গত বুধবার খুলে দেওয়া হয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। আর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকসহ উচ্চশিক্ষা পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হবে কাল রবিবার। দীর্ঘ সময় ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকায় শিক্ষাসূচি হয়েছে লন্ডভন্ড। শিক্ষার্থীরা পড়েছেন সেশনজটের কবলে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও দফায় দফায় পেছাতে হয়েছে সরকারকে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পর অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে এ ক্ষতি পোষানোর দাবি জানিয়েছেন শিক্ষাবিদ ও ছাত্রছাত্রীরা।
তথ্যমতে গত জুনের শেষ দিকে ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় দুই থেকে তিন দিন শ্রেণিকার্যক্রম চলার পরই অচল হয়ে পড়ে ক্যাম্পাসগুলো। একদিকে সর্বজনীন পেনশন স্কিম বাতিল দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের কর্মবিরতি, অন্যদিকে চলতে থাকে কোটা সংস্কার দাবিতে সর্বস্তরের ছাত্রদের রাজপথের আন্দোলন। সব উচ্চশিক্ষাঙ্গনে এমন স্থবিরতা আশির দশকের পর কখনো দেখেনি দেশবাসী।
ছাত্রছাত্রীদের কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনের উত্তেজনা দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর সরকার কোটা সংস্কার করে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধাস্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, স্বশাসিত ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ ও বিভিন্ন করপোরেশনে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পরও বন্ধ হয়নি ছাত্র আন্দোলন, ঘোষণা আসেনি বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার। দিনে দিনে আন্দোলনের তেজ বৃদ্ধির পর এ ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে ইন্টারনেট সরবরাহ বন্ধ করে দেয় স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সরকার। ফলে তখন অনলাইন ক্লাসও নিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
দেড় মাসের বেশি সময় ধরে ক্লাস-পরীক্ষা না থাকায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা সেশনজটের সম্মুখীন হয়েছেন। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অনুষদের দ্বিতীয় বর্ষের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ছাত্রী প্রতিবেদককে বলেন, ‘গত ৩০ জুন প্রথম সেমিস্টারের প্রথম পরীক্ষা দিয়েছি। ৩ জুলাই দ্বিতীয় পরীক্ষা নির্ধারিত ছিল। কিন্তু শিক্ষক আন্দোলনের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ শুরু হওয়ার পর সারা দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলো। পরে ক্যাম্পাসই অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেল। আমাদের অনুষদে কোনো সেশনজট নেই দীর্ঘ বছর ধরে। কিন্তু এ দীর্ঘ আন্দোলনে সেশনজটে পড়ে গেলাম।’ এ জট কাটিয়ে উঠতে অতিরিক্ত ক্লাসের আয়োজন করার অনুরোধ জানান এ ছাত্রী। ৩০ জুন সারা দেশে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হলেও ছাত্র আন্দোলনের জেরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার থেকে এসব পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার। দফায় দফায় পরীক্ষা স্থগিতের পর আগামী ১১ সেপ্টেম্বর থেকে স্থগিত পরীক্ষাগুলো নেওয়া হবে। নতুন সূচি অনুযায়ী এ পরীক্ষা শেষ হবে ২৩ অক্টোবর। সে হিসেবে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ করতেই চার মাস লেগে যাবে ছাত্রছাত্রীদের। এইচএসসির ফল প্রকাশের পর শুরু হবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া। এ ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আগেই চার মাস পিছিয়ে গেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রায় দেড় বছর বন্ধের সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে বড় শিখনশূন্যতা তৈরি হয়েছিল। এরপর সম্প্রতি বন্যার কারণেও বিভিন্ন স্থানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছিল। কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেণিকার্যক্রম এক থেকে দেড় মাস বন্ধ ছিল। রবিবার থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে বড় শিখনশূন্যতা তৈরি হয়েছে ছাত্রছাত্রীদের। শিখনশূন্যতা কাটিয়ে উঠতে সাপ্তাহিক ছুটি দুই দিনের পরিবর্তে এক দিন করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে হবে।’ এ ছাড়া বিভিন্ন উৎসব-আয়োজন বা বড় ছুটি কমিয়ে আনার পরামর্শ দেন এ শিক্ষাবিদ।