রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভুল গ্রুপের রক্ত দেওয়া হলে ফাতেমা বেগম (৪৪) নামে এক রোগী মারা যান গত ১০ জুলাই। তিনি ঢাকার সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এ ঘটনা তদন্তের জন্য ঢাকা থেকে চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল রংপুরে এসেছেন। প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ডা. মোহাম্মদ জিয়া উদ্দীন। তার সঙ্গে রয়েছেন ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের (গাইনি অ্যান্ড অবস) বিভাগের অধ্যাপক ডা. মুনা সালিমা জাহান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. ইমতিয়াজ ফারুক, ডা. দানিশ আরেফিন বিশ্বাস। গতকাল দুপুরে তারা তদন্ত কাজ শুরু করেন। প্রথমে মৃতের ছেলে, মেয়ে ও জামাইয়ের কথা শোনেন তদন্তকারী দল। তারা আজও বিভিন্নজনের সাক্ষাৎকার নেবেন।
জানা গেছে, জরায়ু মুখে অপারেশনের জন্য ২১ জুন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ভর্তি হন রংপুর নগরীর কেরানীপাড়ার বাসিন্দা দুলাল মিয়ার স্ত্রী ফাতেমা বেগম। পরদিন তার অপারেশনের জন্য রক্ত পরীক্ষার জন্য স্যাম্পল নিয়ে হাসপাতালে ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে পাঠানো হয়। সেখানে তার রক্তের গ্রুপ নির্ধারণ করা হয় এ পজিটিভ। অপারেশনের পর রক্ত লাগবে জেনে এ পজিটিভ ডোনার থেকে রক্ত সংগ্রহ করা হয়। ২২ জুন দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফাতেমা বেগমের অপারেশন সম্পন্ন করা হয়। এর পর তাকে এ পজিটিভ রক্ত দেওয়া হয়। এর ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা পর ফাতেমা বেগমের ক্যাথেটার দিয়ে প্রায় এক ব্যাগ রক্ত ঝরে। খবর পেয়ে চিকিৎসকরা এসে জরায়ু মুখে আবার অপারেশনের কথা বলেন। এ জন্য আবারও ফাতেমা বেগমের রক্ত পরীক্ষার জন্য হাসপাতালের ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগে পাঠানো হয়। এবার তার রক্তের গ্রুপ ও পজিটিভ দেখা যায় এবং ফাতেমা বেগমকে ভুল রক্ত দেওয়ার জন্য তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ২২ জুন ফাতেমা বেগমকে আইসিইউতে নিয়ে ২৯ জুন পর্যন্ত চিকিৎসা দেওয়া হয়। এর পর হাসপাতালের আইসিইউ থেকে জানানো হয় ফাতেমা বেগমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিতে হবে। পরে ফাতেমা বেগমকে ঢাকার সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজেস অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এখানে ফাতেমা বেগম চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এই ঘটনায় রমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি করা হলেও তারা সময়মতো তদন্ত রিপোর্ট দাখিল করতে পারেনি। পরবর্তীতে বিষয়টি স্বাস্থ্য বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে আনা হলে ওই ঘটনার তদন্ত কাজ শুরু হয়েছে।