‘আসি আর যাই। কাজ নেই, বেতন পাইনি, কষ্টে আছি।’ কথাগুলো রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারীর। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রংপুরে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রক্টর, ট্রেজারারসহ ৪০ জন প্রশাসনিক কর্মকর্তা পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পদত্যাগে বিশ্ববিদ্যালয় অভিভাবকশূন্য হয়ে পড়ে। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অফিসে এলেও তাদের কোনো কাজকর্ম নেই। অলস সময় কাটাচ্ছেন। ফলে স্থবিরতা বিরাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে। কাগজে-কলমে বিশ্ববিদ্যালয় খোলা থাকলেও হাতেগোনা দু-এক জন শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে এসে ঘুরে যাচ্ছেন। অ্যাকাডেমিক এবং প্রশাসনিক কোথাও প্রাণের ছোঁয়া নেই। ১৬ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তার মৃত্যুর পরই সারা দেশ উত্তাল হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে হাসিনা সরকার ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যান। এর পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে অচলাবস্থা চলছে। অচলাবস্থা নিরসনে দ্রুত ভিসি নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, রেজিস্ট্রার, ডেসপাস শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার, প্রকৌশল দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী, প্রক্টর অফিসের সেকশন অফিসার, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী, ড. ওয়াজেদ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চ অফিসার, সায়েন্টিফিক অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রার, সিনিয়র মেডিকেল অফিসার, কেন্দ্রীয় ভান্ডারের সহকারী রেজিস্ট্রার (স্টোর), বিভিন্ন ডিপার্টমেন্ট, বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা হলের সহকারী রেজিস্ট্রার, পেনশন শাখার উপপরিচালক, বিভিন্ন দপ্তরপ্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তর ফাঁকা। হাতেগোনা দু-এক জনের উপস্থিতি থাকলেও অলস সময় কাটাচ্ছেন। এদিকে আগস্টের বেতন পাননি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বেতন না পেয়ে অনেকেই কষ্টে দিনযাপন করছেন। ৮০০-এর বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন বেরোবিতে। নিরাপত্তা বিভাগের প্রহরী শাহীন বেগ বলেন, ‘দেশের চলমান অবস্থায় ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। কিন্তু গত মাসের বেতন না পাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে অসুবিধায় রয়েছি।’ এমএলএসএস আবু তাহের বলেন, ‘ক্যাম্পাসে যাওয়া-আসা ছাড়া কোনো কাজ নেই এখন। বেতন না পেয়ে কষ্টে আছি।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এ অচলাবস্থা দূর করতে অনতিবিলম্বে উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও ট্রেজারার নিয়োগের দাবি শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের।
জানা গেছে, ২৯ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রেরিত পত্রের পরামর্শ অনুযায়ী বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের জন্য ১ সেপ্টেম্বর ডিনস কমিটির সভায় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মো. মোরশেদ হোসেনকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জরুরি প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনয়ন দেওয়া হয়। পরে শিক্ষার্থীদের একাংশের আপত্তির কারণে প্রফেসর ড. মো. মোরশেদ হোসেন এক দিন পরই ২ সেপ্টেম্বর শারীরিক অসুস্থতার বিষয় উল্লেখ করে দায়িত্ব গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থী রুহুল আমিন বলেন, ‘আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা সব কিছু বন্ধ। অতি জরুরি উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া প্রয়োজন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় কাগজে-কলমে খোলা থাকলেও সার্বিক পরিস্থিতি স্থবির। কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখন পর্যন্ত বেতন পাননি। এ নিয়ে তাঁরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন।’
দ্রুত ভিসি নিয়োগ দিলে এ অচলাবস্থা দূর হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।