প্রায় এক যুগ আগে ঢাকার সাভার উপজেলায় বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য নাজিম উদ্দিন আলমকে গুলি করে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল ঢাকার জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম সাইফুল ইসলামের আদালতে নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলা করেন। আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে সাভার মডেল থানাকে এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর, ভোলা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, তৎকালীন আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, ঢাকা রেঞ্জের তৎকালীন ডিআইজি এস এম মাহফুজুল হক নুরুজ্জামান, তৎকালীন পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান ও সাভার মডেল থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসাদুজ্জামান।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের ডাকা শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচিতে নাজিম উদ্দিন আলমসহ নেতা-কর্মীরা আমিনবাজার ব্রিজে অবস্থান করছিলেন। পরে পুলিশ তাঁদের ওপর চড়াও হয়ে লাঠিপেটা করে ও গুলি চালায়। পুলিশের ছোড়া টিয়ার শেল ও শটগানের গুলিতে নাজিম উদ্দিন আলমসহ অর্ধশতাধিক নেতা-কর্মী গুলিবিদ্ধ হন।
ঢাকার বাইরে আরও মামলা : বগুড়া জানান, বগুড়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রিকশাচালক আবদুল মান্নান নিহতের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১২২ জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে। বুধবার রাতে নিহত রিকশাচালকের ছেলে রানা হামিদ বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় এ মামলা করেন। নিহত আবদুল মান্নান সদর উপজেলার বানদীঘি এলাকার বাসিন্দা। মামলায় আরও ২০০ থেকে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। মামলায় শেখ হাসিনা ও ওবায়দুল কাদেরকে নির্দেশদাতা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ ছাড়া বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মজিবর রহমান মজনু, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি রাগেবুল আহসান রিপুসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে। ৪ আগস্ট দুপুরে শহরের বড়গোলা ট্রাফিক মোড় এলাকায় ছাত্র-জনতার এক দফার আন্দোলনে এসে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন আবদুল মান্নান।
বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাইহান ওলিউল্লাহ বলেন, আবদুল মান্নান হত্যায় শেখ হাসিনাসহ ১২২ জনের নাম উল্লেখ করে হত্যা মামলা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় আসামি আরও ২০০ থেকে ৩০০। তাদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।
উল্লেখ্য, এর আগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বগুড়ায় আরও চারটি হত্যা এবং একটি হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়।
চট্টগ্রামে হাছান, নওফেলের বিরুদ্ধে মামলা : সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ১১৯ জনের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাত আসামি আরও ১০০ থেকে ১৫০ জন। গতকাল চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সরকার হাসান শাহরিয়ারের আদালতে এ মামলা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিতে আহত মো. ফরহাদ নামে এক যুবক। মামলার অন্য আসামিরা হলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাবেক সংসদ সদস্য আবদুচ সালাম, এম এ লতিফ, ফজলে করিম চৌধুরী ও নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল চৌধুরী, সাবেক কাউন্সিলর শৈবাল দাশ, চান্দগাঁও ওয়ার্ডের এসরারুল হক, আশরাফুল আলম, হারুনুর রশিদ, ওয়াসিম উদ্দীন, জিয়াউল হক সুমন, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি প্রমুখ।
সিদ্ধিরগঞ্জে শামীম ওসমানের নামে হত্যা মামলা : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন মহল্লায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মো. রাব্বি মিয়া নিহত হওয়ার ঘটনায় এ কে এম শামীম ওসমানকে প্রধান আসামি করে ৬৩ জনের নামে হত্যা মামলা হয়েছে। এ মামলায় অজ্ঞাত আসামি আরও ১৫০ থেকে ২০০ জন। বুধবার রাতে নিহতের ভাই অন্তর মিয়া বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। গতকাল সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি আল মামুন।
মামলায় মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাহ নিজাম, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. মজিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন মিয়া, শামীম ওসমানের ভাতিজা আজমেরী ওসমান ও ছেলে অয়ন ওসমান এবং কাউন্সিলর মতিউর রহমান মতিসহ ৬৩ জনের নাম রয়েছে।