রাজশাহী সিটির অপসারিত মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনের সময় নেওয়া ২৫০ কোটি টাকার পাঁচ প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। আপাতত অপ্রয়োজনীয় ও রাজনৈতিক বিবেচনায় এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। সূত্র জানায়, সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় অপসারিত মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার নির্মাণযজ্ঞ শুরু করেন। এর মধ্যে সড়ক অবকাঠামো, ওভারপাস ও ফ্লাইওয়ারের মতো প্রকল্প আছে। আপাতত প্রয়োজন নেই এমন প্রকল্পগুলো বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিটি করপোরেশন। বাতিল হওয়া প্রকল্পগুলো হলো-২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান স্মৃতি কমপ্লেক্স, ১১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নগরীর ভদ্রার মোড়ের আন্ডারপাস, ৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়, ১৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে শেখ কামাল কনভেনশন হল ও ৮৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ে হড়গ্রাম কাঁচাবাজার নির্মাণ। এর মধ্যে হড়গ্রাম কাঁচাবাজার নির্মাণে ভূমি অধিগ্রহণে ৩০ কোটি ৯১ লাখ ও অবকাঠামো নির্মাণে ৫৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। স্যাটেলাইট সিটি নামে একটি প্রকল্পও তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্রশাসক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, যেসব প্রকল্প গুরুত্বপূর্ণ নয় সেগুলো বাতিল করা হয়েছে। সমন্বিত নগর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এসব প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। তারা শুধু জনগুরুত্বপূর্ণ ও নাগরিক ভোগান্তি হয় এমন প্রকল্পগুলো চালিয়ে নেওয়ার পক্ষে। সে অনুযায়ী সিদ্ধান্ত হয়েছে। ছেঁটে ফেলা প্রকল্পগুলোর তালিকা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
স্যাটেলাইট সিটি গড়ে তোলা প্রসঙ্গে প্রশাসক বলেন, ‘এ কাজের ম্যান্ডেট সিটি করপোরেশনের নেই। তবু এমন প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। এটি আরডিএর কাজ। যার কাজ তারা করুক। সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্প থেকে এটি বাদ দেওয়া হয়েছে। নগরীতে পাঁচটি ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ সবে শুরু হয়েছে। তবে মূল প্রকল্পের নির্ধারিত সময়সীমা শেষ হয়েছে গত ৩০ জুন। খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র থাকাকালে এ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি কয়েক শ কোটি টাকা ব্যয় বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছিলেন। যদিও তাঁকে অপসারণের পর ব্যয় বৃদ্ধি না করেই প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। প্রশাসক দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত নগর ভবন সংস্কারের জন্য ২২ কোটি টাকার চাহিদা পাওয়া গেছে। এটি মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। আর নতুন করে বাড়তি ব্যয় নয়, প্রকল্পের কাজ শেষ করতে শুধু সময় বাড়ানোর আবেদন করা হয়েছে। ২০১৮ সালে খায়রুজ্জামান লিটন দ্বিতীয় দফায় মেয়র পদে নির্বাচিত হলে নগর উন্নয়ন প্রকল্পে এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ বরাদ্দ পায় সিটি করপোরেশন। মেয়র পদে তৃতীয় দফা দায়িত্ব পালনকালে গণ অভ্যুত্থান-উত্তর পরিস্থিতিতে পালিয়ে যান তিনি। ১৯ আগস্ট বিভাগীয় কমিশনারকে সিটি করপোরেশনে প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পরই রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত লাভের বিবেচনায় নেওয়া লিটনের প্রকল্পগুলো ছেঁটে ফেলে বর্তমান প্রশাসন।