কোটা আন্দোলনের জেরে উত্তপ্ত থাকলেও টানা আট দিন পর প্রাণ ফিরেছে বগুড়ার। কারফিউ শিথিলের পর আবারও যানজট শুরু হয়েছে শহরজুড়ে। সরকারি-বেসরকারি অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার দ্বিতীয় দিন আজ বৃহস্পতিবার শহরে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে। প্রয়োজনীয় কাজ সারতে মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে আসেন। হুমড়ি খেয়ে পড়েন শহরে। সকাল থেকে বগুড়া শহরের ব্যস্ততম সাতমাথাসহ সবকটি সড়কে রিকশা-অটোরিকশা, ইজিবাইক, যাত্রীবাহী বাস আর ব্যক্তিগত গাড়ির দীর্ঘ লাইন চোখে পড়ে। প্রচণ্ড রোদে যানজটে আটকে থেকে পথচারী ও যাত্রীরা পড়েন ভোগান্তিতে।
গত ১৬ জুলাই থেকে সারাদেশে কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। দিন দিন সেই আন্দোলন পরিবর্তিত হয়ে সহিংসতায় রূপ নেয়। এরপর ১৮ জুলাই শুরু হয় কমপ্লিট শাটডাউন। এ দিন থেকেই বগুড়ায় সহিংসতা তীব্র হতে থাকে। বিক্ষোভ মিছিল, ধাওয়া-পাল্টা-ধাওয়া, পুলিশের সাথে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগে প্রায় অচল হয়ে যায় বগুড়া শহর। এরপর পরিস্থিতি সামাল দিতে শুরু হয় টানা কারফিউ। শহরের দোকানপাট, বিপণিবিতান ছিল বন্ধ। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতার কারণে বগুড়ায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকে। শাটডাউন ও কারফিউ পরিস্থিতিতে টানা আট দিন ঘরে বন্দি থাকার পর গতকাল বুধবার থেকে খুলে দেওয়া হয় অফিস-আদালত, ব্যাংক ও বিমা প্রতিষ্ঠানের কার্যালয়। এ অবস্থায় সকাল আটটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কারফিউও শিথিল করা হয়। এতে করে সকাল নয়টার পর থেকেই শহরে মানুষের ঢল নামে। সড়কে বেড়ে যায় যানবাহনের চাপ।
কারফিউ শিথিলকালে বগুড়ায় অফিস-আদালত, ব্যাংক, বীমা, মার্কেট, দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলা হয়। চলাচল করে বাস-কোচসহ সব ধরণের যানবাহন। বগুড়া থেকে বিভিন্ন সড়কে চলাচল করে দূরপাল্লার বাস।
শহরের সাতমাথা, কবি নজরুল ইসলাম সড়ক, থানা মোড়, চাঁদনী বাজার, ফতেহ আলী মোড়, নবাববাড়ী সড়ক, ঠনঠনিয়া কোচ টার্মিনালের সামনে, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের সামনে, পিটিআই মোড়, মফিজ পাগলার মোড়, ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে যানজটে পড়ে মানুষ। তবে এ যানজটে পড়লেও মানুষের তেমন অভিযোগ ছিলনা। কারফিউ শিথিলের সুযোগ পেয়ে কেনাকাটাসহ প্রয়োজনীয় কাজ সারার সুযোগ পেয়ে অনেকে খুশি। যানজট নিরসনে শহরে ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতা থাকলেও জনবল কম হওয়ায় হিমশিম খেতে হয়।
বগুড়ার পুলিশ সুপার জাকির হাসান জানান, বগুড়ায় ট্রাফিক বিভাগে জনবল কম। এরমধ্যে দেশে চলমান পরিস্থিতিতে ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা কয়েক দিন ধরে মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় কাজ করছেন। গতকাল বুধবার থেকে কারফিউ শিথিল হলেও শহরে যানজট নিরসনে ট্রাফিকের কোনো সদস্য ছিলেন না। সবাই মানুষের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে ছিলেন। কারফিউ শিথিল হওয়ায় বগুড়ায় আবারো যানজট বেড়ে যায়। ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনে শহরের বিভিন্ন স্থানে দায়িত্ব পালন করছেন।
শহরে চলাচলকারী ব্যবসায়ী সুচন্দন সরকার জানান, শহরের ঠনঠনিয়া থেকে রিকশায় দত্তবাড়ী যেতে যানজটের ভোগান্তিতে পড়েন তিনি। ১০ মিনিটে পৌঁছার কথা থাকলেও সময় লেগেছে ৩০ মিনিট। শহরে সব ধরণের যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
বগুড়া পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, শহরে পায়ে চালিত প্রায় সাড়ে ৬ হাজার রিকশার লাইসেন্স দেওয়া আছে। কিন্তু শহরজুড়ে এখন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ইজিবাইকের দখলে। সব মিলিয়ে শহরে প্রায় লক্ষাধিক ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত অটো রিকশা চলাচল করে থাকে।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল