আওয়ামী লীগ আগামী ৫০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন চত্বরে জেলা বিএনপি আয়োজিত সম্প্রীতির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন।
ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, ৭ মার্চ কোনো ঐতিহাসিক মাইলফলক নয়। ওই ভাষণে স্বাধীনতার ঘোষণার বদলে জয়বাংলা, জয় পাকিস্তান বলা হয়েছিল। তাই বলি, ইতিহাস নিয়ে বেশি খোঁচাখুঁচি করবেন না। বেশি খোঁচালে আসল রহস্য বেরিয়ে পড়বে। ইতিহাস কোনো রাবার দিয়ে মুছে ফেলার বিষয় নয়। ইতিহাস জীবন্ত এবং ঝলমল করে। ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করে না।
সমাবেশে ইকবাল হাসান মাহমুদ আরও বলেন, আওয়ামী লীগ বিগত ১৬ বছর বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘর থেকে বের হতে দেয়নি। আমাকেও দুই বছর দেশে থাকতে দেওয়া হয়নি। অনেকে বলেছে আমি পালিয়ে গেছি। আসলে তা সত্য নয়। আমি স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছিলাম, আমি আওয়ামী লীগের কোনো জেলে জেল খাটব না। আওয়ামী লীগ জানতো আমি কোথায় আছি, কী করছি। সরকার জানতো আমি কোথায় কোথায় মিটিং করেছি। তিনি বলেন, তোমাদের মতো ইঁদুরের গর্তে পালাইনি। এখন তো তোমাদের গরম পানি দিয়েও বের করা যাচ্ছে না।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, অতি উৎসাহিত হওয়ার কিছু নেই। সাঈদ ও মুগ্ধদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে তা রক্ষা করতে হবে। মনে রাখবেন আমাদের সংগ্রাম কেবল শুরু হয়েছে। মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করতে হবে। আমরা আজ থেকে প্রতিজ্ঞা করবো, মানুষের সাথে ভালো ব্যবহার করবো। মোটরসাইকেল নিয়ে মহড়া দেবেন না। মানুষের ভালো সাথী হন। ১৬ বছর যে সব মানুষ কষ্ট করেছে, তাদের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন। যারা মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করবে তারা বিএনপির কর্মী নয়, আওয়ামী লীগের এজেন্ট। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি বলেন, আমার পরিবার ১০০ বছর ধরে রাজনীতি করে। আমার বাবার সাথেও আওয়ামী লীগ দুর্ব্যবহার করেছে। আমার বাড়ির সামনেও মহড়া দিয়ে আমাকে গালাগালি করেছে।
তিনি আওয়ামী লীগের সমালোচনা করে বলেন, আওয়ামী লীগের নেত্রী দেশ রক্তে রঞ্জিত করে পালিয়ে গেছে। বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগের নেত্রীসহ সবার অবশ্যই বিচার হবে। ফেসবুকে কান্নাকাটি করে লাভ হবে না। আগামী ৫০ বছরেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যেতে পারবে না। আমরা কখনও পালাবো না।
জেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি রুমানা মাহমুদের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চুর সঞ্চালনায় বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে সমাবেশ শুরু হয়। সমাবেশের প্রথম বক্তা কেন্দ্রীয় বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলীম বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে সমাবেশ মঞ্চ ভেঙে পড়ে যায়। এরপর মঞ্চ থেকে সরে এসে বিএনপি নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু সংক্ষিপ্ত পরিসরে বক্তব্য দেন। তবে মঞ্চ ভেঙে পড়লেও কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। জেলার সব উপজেলা থেকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী দুপুর থেকে মিছিল সহকারে সমাবেশে যোগ দেন।
বিগত সরকারের আমলে একটি মামলায় সাজা হওয়ায় ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু আইনগত জটিলতার কারণে গত দুই বছর দেশে ছিলেন না। গত ৬ অক্টোবর দেশে ফিরে শহীদ জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিগত দুই বছর পর বৃহস্পতিবার তিনি জন্মভূমি সিরাজগঞ্জ শহরে আসেন। ২০ অক্টোবর পর্যন্ত তিনি সিরাজগঞ্জে অবস্থান করে বিভিন্ন কর্মসূচিতে যোগ দেবেন। এরপর ঢাকায় ফিরবেন তিনি।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল