গত দু’মাস ধরে চলমান অস্থিরতা পোশাকখাতকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। ক্ষতি কাটিয়ে রপ্তানি সচল রাখতে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা চেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সংগঠনটির সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বিজিএমইএ-এর একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনে সাক্ষাৎকালে এ সহযোগিতা প্রদানের জন্য অনুরোধ জানান।
বিজিএমইএ প্রতিনিধিদলে অন্যান্যদের মধ্যে ছিলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ হিল রাকিব, সহ-সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী, পরিচালক মোহাম্মদ সোহেল সাদাত, পরিচালক মেসবাহ উদ্দিন খান, পরিচালক মো. রেজাউল আলম (মিরু)। প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান।
সাক্ষাৎকালে বিজিএমইএ সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম পোশাক শিল্পের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে এসব প্রতিষ্ঠানের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের এক মাসের মজুরির সমপরিমাণ অর্থঋণ সহজ শর্তে প্রয়োজন। এই ঋণ পেলে, তা সুদসহ আগামী এক বছরের মধ্যে পরিশোধ করবেন মর্মে গভর্নরকে প্রতিশ্রুতি দেন তারা।
বিজিএমইএ প্রতিনিধিদল গভর্নর মহোদয়কে জানান, সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের সীমা (ইডিএফ) আরও কমানোর ঘোষণা দেয়ায় পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের মধ্যে গভীর উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ এই সংকটময় সময়ে ইডিএফ এর সীমা আরও কমিয়ে আনা হলে ব্যবসায়ীরা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। বিজিএমইএ নেতারা বাংলাদেশের রপ্তানি পারফরমেন্স ধরে রাখতে ইডিএফ এর সীমা আরও না কমানো এবং পোশাক শিল্পের জন্য তফসিলি ব্যাংকের মাধ্যমে ইডিএফ তহবিলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে অ্যাক্সেস প্রদানের জন্যও গভর্নরকে অনুরোধ জানান।
পোশাক ব্যবসায়ীদের দলটি গভর্নর মহোদয়কে অবহিত করেন, সম্প্রতি ৬টি ব্যাংকের এলসি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ার ফলশ্রুতিতে এসব ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত পোশাক ব্যবসায়ীদের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ৬টি ব্যাংকের এলসি কার্যক্রম পুনরায় সচল করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার জন্য প্রতিনিধিদলটি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মহোদয়কে অনুরোধ জানান।
বিজিএমইএ নেতারা এই সংকটময় সময়ে শিল্পের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা এবং ভবিষ্যত প্রবৃদ্ধির জন্য সক্ষমতা অর্জনে সহায়তা করার জন্য শিল্পে আরও কিছু নীতি সহায়তা প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছেন।
যেগুলোর মধ্যে রয়েছে:
◘ ঋণের ৩টি কিস্তি পর পর পরিশোধ না করলে ব্যাংক তা খেলাপি হিসেবে দেখায়। এটা পরিবর্তন করে ঋণ পরিশোধের কিস্তি সংখ্যা ৩ থেকে বাড়িয়ে পূর্বের ন্যয় ৬ করা।
◘ ব্যাংক খাতের সংস্কারকে সামনে রেখে কারখানাগুলোকে বিশেষ সুরক্ষা প্রদান।
◘ স্বতন্ত্র ব্যক্তির বিরুদ্ধে নেয়া কর্মকাণ্ড থেকে ব্যবসাকে রক্ষা করা।
◘ শিল্পকে ব্যবসাবান্ধব করতে শিল্পের জন্য যথাযথ নীতি সহায়তা প্রনয়ণের বিষয়ে এনবিআর ও বাংলাদেশ ব্যাংক সমন্বয়ে একটি টাস্ক ফোর্স গঠন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ধৈর্য সহকারের বিজিএমইএ প্রতিনিধিদলের বক্তব্য শ্রবণ করেন। তিনি বলেন, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নে বাংলাদেশ ব্যাংক সবসময়ই সজাগ করেছে।
জাতীয় অর্থনীতিতে পোশাক শিল্পের বিপুল অবদানের উল্লেখ করে গভর্নর বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময় পোশাক শিল্পের পাশে রয়েছে এবং এ শিল্পের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ ব্যাংক শিল্পকে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা প্রদান করবে।
তিনি বিজিএমইএ প্রতিনিধিদলকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিনিধিদলের সুপারিশগুলো গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবে।
বিজিএমইএ প্রতিনিধিদলের আবেদনের প্রেক্ষিতে পোশাক ব্যবসায়ীদের জন্য নির্দিষ্ট পরিমান সফট লোনের ব্যবস্থা করার আশ্বাসও তিনি দেন।
কেন্দ্রিয় ব্যাংকের গভর্নর আপাতত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের সীমা না কমানো এবং ৬টি ব্যাংকের এলসি সমস্যা দ্রুত সমাধান করার বিষয়েও বিজিএমইএ প্রতিনিধিদলকে আশ্বস্ত করেছেন।
বিডি-প্রতিদিন/শআ