শুক্রবার, ২১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা

মঞ্চ নির্দেশকরা এখন ব্যস্ত টিভি ও চলচ্চিত্র নির্মাণে

মঞ্চ নির্দেশকরা এখন ব্যস্ত টিভি ও চলচ্চিত্র নির্মাণে

একটি নাটক বা চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করে থাকে একজন নির্দেশক। মঞ্চ হোক আর টিভি কিংবা রুপালি পর্দাই হোক নির্দেশকের দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা ও শৈল্পিক বোধের কারণেই একটি নাটক ও চলচ্চিত্র শিল্প ও নান্দনিকতার ধাপে এগিয়ে যায়। কিন্তু বর্তমানে মঞ্চ নির্মাতারা এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন নাটক ও চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে। এ বিষয় নিয়ে লিখেছেন—মোস্তফা মতিহার

 

মামুনুর রশীদ

নাটকের দল আরণ্যকের দর্শকনন্দিত মঞ্চনাটক ‘ওরা কদম আলী’ ‘ওরা আছে বলেই’, ‘ইবলিশ’, ‘এখানে নোঙর’, ‘গিনিপিগ’, ‘জয়জয়ন্তী’, ‘সংক্রান্তি’, ভঙ্গবঙ্গ ইত্যাদি নাটকের নির্দেশনার মধ্য দিয়ে এদেশের নাট্যানুরাগীদের মঞ্চ নাটকের প্রতি ধাবিত করেন মামুনুর রশীদ। মঞ্চে নিজের আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে টিভি নাটকেও তিনি রেখেছেন নান্দনিকতার ছাপ। মামুনুর রশীদ নির্দেশিত উল্লেখযোগ্য টিভি নাটকগুলো হলো ‘সুন্দরী’, ‘এখানেই নোঙর’, ‘ইতি তোমার আমি’, ‘অলসপুর’ ইত্যাদি। এর মধ্যে ‘সুন্দরী’ ও ‘অলসপুর’ ছিল ধারাবাহিক নাটক। ৬০-এর দশক থেকে এখন পর্যন্ত তিনি নাটকের সঙ্গেই বেঁধেছেন মনপ্রাণ।

 

নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু

ঢাকা থিয়েটারের মাধ্যমে মঞ্চ নাটকের অঙ্গনকে শৈল্পিকতার পথে নিয়ে যান নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু। দলের ‘কীত্তনখোলা’, ‘কেরামতমঙ্গল’, ‘হাতহদাই’, ‘যৈবতীকন্যার মন’, ‘বনপাংশুল’, ‘প্রাচ্য’ ও ‘নিমজ্জন’ ইত্যাদি নাটক নির্দেশনার পর মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘একাত্তরের যীশু’ চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে চলচ্চিত্রের নির্দেশনার সঙ্গে নিজের অভিষেক ঘটান তিনি। সর্বশেষ ২০১১ সালে ‘গেরিলা’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করে এদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বিপ্লব ঘটান নাসির উদ্দিন ইউসুফ।

 

গাজী রাকায়েত

অভিনয় দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরবর্তীতে নির্দেশনার  সঙ্গে সম্পৃক্ত হন গাজী রাকায়েত। বিদেশি নাট্যকার এন্তন চেখভের গল্প অবলম্বনে ‘সোয়ান সং’ নাটকটি নির্দেশনার পর নির্দেশনার ক্যারিয়ারে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেন রাকায়েত। এ ছাড়া ‘শেষ নবাব’ সাদা ঘোড়া’ ও ‘জন্মসূত্র’ নাটকগুলো নির্দেশক হিসেবে গাজী রাকায়েত ও নাটকের দল ‘চারুনীড়ম’কে শৈল্পিকতার পথে এগিয়ে নিয়ে যায় একধাপ। ‘ঘুণ’ ও জীবনমৃত’ নামের দুটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের পর ২০১৩ সালে পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘মৃত্তিকা মায়া’ নির্মাণ করে এদেশীয় চলচ্চিত্রকে শিল্পের পথে নিয়ে যান একধাপ। শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র ও শ্রেষ্ঠ নির্দেশকসহ ১৭টি ক্যাটাগরিতে জাতীয় পুরস্কার অর্জন করে এদেশের চলচ্চিত্রের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন গাজী রাকায়েত।

 

তারিক আনাম খান

নিজের নাটকের দল নাট্যকেন্দ্র প্রযোজিত নাটক ‘বন্দুকযুদ্ধ’, ‘গাধারহাট’, ‘ক্রুসিবল’, ‘বিচ্ছু’, ‘আরজ চরিতামৃত’, ‘প্রজাপতি’ নাটকগুলো অভিনেতার পাশাপাশি নির্দেশক হিসেবে তারিক আনাম খানকে এক অনন্য উচ্চতায় আসীন করে। 

মঞ্চে নিজেকে প্রমাণ করার পর টেলিভিশন নাটকেও মেলে ধরেন নিজের পারদর্শিতা।

 

অনন্ত হীরা

একসময় নাগরিক নাট্যসম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করলেও পরে নিজেই গড়ে তোলেন নাটকের দল ‘প্রাঙ্গণে মোর’। আর প্রাঙ্গণে মোর এর হয়ে অনন্ত হীরা নির্দেশনা দেন ‘আওরঙ্গজেব’, ‘শেষের কবিতা’ ‘দ্রোহ প্রেম নারী’ ইত্যাদি নাটকের পাশাপাশি অন্যদলের ‘তৃতীয় একজন, নামের একটি নাটকেরও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। অনন্ত হীরা পরিচালিত টিভি নাটক ‘রক্ত ছায়া; জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর চলচ্চিত্রের পরিচালনার সঙ্গেও নিজেকে সম্পৃক্ত করেন তিনি। ‘ও আমার দেশের মাটি’ ছবিটি নির্মাণ করে সিনেমার ভুবনেও রেখেছেন সফলতার ছাপ।

 

আজাদ আবুল কালাম

নিজের দল প্রাচ্যনাটের ট্র্যাজেডি পলাশ বাড়ি, ‘সার্কাস সার্কাস’ ইত্যাদি নাটকে নিজের নির্দেশনার অবস্থান তুলে ধরার পর সম্প্রতি চলচ্চিত্রও নির্মাণ শুরু করেছেন আজাদ আবুল কালাম। ‘অসুখের নাম ভালোবাসা’ নামের এই চলচ্চিত্রটি মুক্তির পর মঞ্চ ও টিভির পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও আজাদ আবুল কালামের একটা দৃঢ় অবস্থান তৈরি হবে বলে তিনি আশাবাদী।

 

মান্নান হীরা

দীর্ঘদিন আরণ্যকের হয়ে কাজ করা মান্নান হীরা একই সঙ্গে নাট্যকার ও নির্দেশক। ‘ক্ষুদিরামের দেশে’, ‘ফেরারী নিশান’, ‘আদাব’, ‘একাত্তরের রাজকন্যা’, ‘ঘুমের মানুষ’, ‘মৃগনাভি’, ‘শেকল’ ইত্যাদি নাটক নির্মাণের পর চলচ্চিত্রের সঙ্গেও সম্পৃক্ত হয়েছেন মান্নান হীরা। ‘একাত্তরের ক্ষুদিরাম’ চলচ্চিত্রটি মান্নান হীরাকে মঞ্চের পাশাপাশি চলচ্চিত্রেও এনে দিয়েছে কৃতিত্ব।

 

তৌকীর আহমেদ

নাট্যকেন্দ্রের নিয়মিত সদস্য তৌকীর আহমেদ মঞ্চর পাশাপাশি টেলিভিশন নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালনার ক্ষেত্রেও রেখেছেন সফলতার ছাপ। অভিনেতা হিসেবে তৌকীরের আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা থাকলেও নির্দেশনাতেও তিনি কম যান না। ‘তোমার বসন্ত দিনে’ নাটকটি পরিচালনার মধ্য দিয়ে নির্দেশনার কাজ শুরু করার পর তিনি আরও নির্মাণ করেন ‘অরণ্যের সুখ দুঃখ’, ‘সোনালী রোদ্রের রং দেখিয়াছি’, ‘বাল্যশিক্ষা’, ‘আহরণ’, ‘ইন্দ্রজাল’ ইত্যাদি। এর পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘জয়যাত্রা’ নির্মাণের মধ্য দিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে নিজের জানান দেন। পরবর্তীতে নির্মাণ করেন ‘রূপকথার গল্প, ‘দারুচিনি দ্বীপ’ ইত্যাদি।

সর্বশেষ খবর