দেশের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী কনকচাঁপা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত নব্বই দশকের এ প্লেব্যাক শিল্পী কয়েক বছর ধরে বিটিভি, বেতার থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় সব প্রোগ্রাম থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। সারা দেশের স্টেজ প্রোগ্রামও করতে দেওয়া হয়নি তাঁকে। সেসব বিষয় ও সমসাময়িক নানা বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি। লিখেছেন- পান্থ আফজাল
বিগত সরকারের সময় আপনাকে কালো তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কারণ কী?
২০১৮ সাল থেকে আমি বিটিভি ও রেডিও বেতার থেকে শুরু করে বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোতেও গান করার সুযোগ পাইনি। আমাদের দেশে এখন অনেক বেসরকারি টিভি চ্যানেল আছে। এত চ্যানেলের মধ্যে দেশ টিভি ও এটিএন চ্যানেল ছাড়া কোথাও গান করতে পারিনি। কালো তালিকা কোনো শিল্পীর জন্য কাম্য নয়। এটি করা কখনোই উচিত নয়। কিন্তু আমাদের বারবার এটি দেখতে হচ্ছে। একজন শিল্পী যে কোনো একটি দলকে সমর্থন করতেই পারেন। এটি তার নাগরিক অধিকার। কিন্তু তার জন্য তাকে কালো তালিকাবদ্ধ করতে হবে, এটি ঠিক না।
এখন নতুন সরকার। এ পরিবর্তনকে কীভাবে দেখছেন?
এমন একটা সময়ের জন্য দেশের মানুষ দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছিল। অবশেষে মানুষের অপেক্ষার অবসান হয়েছে। দেশে এখন নতুন সরকার। আমি মনে করি আমাদের যেখানে যেখানে সমস্যা আছে, সেগুলোতে সুন্দর একটা পরিবর্তন আসবে। আমাদের নতুন প্রজন্ম সুন্দর একটি বাংলাদেশ দেখার জন্যই এ আন্দোলন করেছে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা সুন্দর একটি দেশ পেতে যাচ্ছি।
এ সরকারের কাছে প্রত্যাশা কী?
আমার একটাই চাওয়া- মিথ্যাচারমুক্ত বাংলাদেশ। সব পাপের শুরু মিথ্যা দিয়েই হয়। এছাড়া আমি আশা করব নতুন সরকার দ্রব্যমূল্য সহনশীল রাখবে, আয়ের শুরুতেই উপযুক্ত ট্যাক্স অটোমেটিক কেটে রাখবে। ঘুষের কোনো জায়গা রাখবে না। রাস্তায় রাস্তায় চাঁদাবাজি বন্ধের আশা করার সঙ্গে একটা স্বপ্ন খুব দেখি আর তা হলো- আমাদের দেশের ভিআইপিরা যেমন একটা সম্মানিত লাউঞ্জ ব্যবহার করেন, তেমনই আলাদা একটা লাউঞ্জ তৈরি করে দিতে হবে আমাদের প্রবাসী রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের জন্য। আমি আরও চাই সুবিধাবঞ্চিত শিশু, সংখ্যালঘু উপজাতি শব্দগুলো আমাদের অভিধান থেকে, ভাষা প্রায়োগিক দিক থেকে একদম উঠে যাক।
সংগীত অঙ্গনে কী ধরনের পরিবর্তন দেখতে চান?
আমি চাই যারা সত্যিকারের মেধাবী তারা যেন কাজের সুযোগ পায়, আমাদের সেই পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কিছু কিছু সময় নানা কারণে আমাদের অনেক গুণী ও মেধাবীরা আড়ালে থেকে যাচ্ছেন। গত কয়েক বছরের দিকে তাকালে সেটি আরও স্পষ্ট দেখা যায়। চাই শোবিজে গুণী ও মেধাবীদের সঠিকভাবে কাজে লাগানো হোক।
বর্ণাঢ্য সংগীত জীবনে সামাজিক কর্মকান্ডেও দেখা গেছে...
৪০ বছরের ক্যারিয়ারে শুধু গানই নয়, সাধ্যমতো সামাজিক সেবাও করছি। যখনই সুযোগ পেয়েছি সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। মানুষের জন্যই আজ এতদূর আসতে পেরেছি। সেই মানুষদের সেবা করে যাব, যেভাবে সারাজীবন করেছি। পুরোপুরি বাংলাদেশের কনকচাঁপা হতে চাই। মুক্ত বিহঙ্গ হয়ে মানুষের সেবা করব। মানুষের সেবার ভিতর যে আনন্দ, সেটি আর কোথাও নেই।
নতুনদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
নতুনদের অনেকেই কাভার গান করছে, এটি দোষের কিছু না। তবে মৌলিক গানের প্রতি তাদের আগ্রহী হতে হবে। নিজের গানের আনন্দই অন্যরকম। এখন বেশিরভাগ ফিমেল শিল্পী অটো টিউন দিয়ে একই ঢঙের গান করছে। কার কণ্ঠ সেটা খুব সহজে বোঝা যায় না। নিজের কণ্ঠ যেন চেনা যায় এমন গায়কী চাই।