সব মিথ্যে, ও আমাকে ছোট বোনের মতো ভালোবাসতো : শাবনূর
হ্যাঁ, তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল : সামিরা
ঢাকাই ছবির সবচেয়ে জনপ্রিয় জুটিগুলোর অন্যতম সালমান-শাবনূর। জহিরুল হক পরিচালিত ‘তুমি আমার’ সিনেমায় একত্রে প্রথম কাজ করেন দুজন। ১৯৯৪ সালের ২২ মে ঈদে মুক্তি পায় ‘তুমি আমার’। ক্যারিয়ারের ২৭টি সিনেমার ১৪টিতেই সালমানের নায়িকা ছিলেন শাবনূর। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সালমানের ৫৪তম জন্মদিনে ভালোবাসা জানিয়ে পোস্ট দিয়েছেন শাবনূর। শোনা যায়, তাদের মধ্যে ছিল ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। নায়কের জীবদ্দশায় সত্যিই কি প্রেম ছিল দুজনার? এ প্রশ্নের জবাবে সম্প্রতি গণমাধ্যমকে সালমানের সাবেক স্ত্রী সামিরা বলেছেন- ‘হ্যাঁ তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল’। অন্যদিকে সামিরার এ অভিযোগ খন্ডন করে শাবনূর বলছেন, ‘সব মিথ্যে, সালমানের কোনো ছোট বোন ছিল না। তাই ও আমাকে ছোট বোনের মতো ভালোবাসতো।’ সালমানের নায়িকা শাবনূর এখন অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী। সালমানের জন্মদিনের সকালে তাঁকে স্মরণ করে ফেসবুকে শাবনূর লিখেছেন- ‘বাংলা চলচ্চিত্রের যুবরাজ সালমান শাহ এক অকৃত্রিম ভালোবাসার নাম, এক ইতিহাসের নাম। প্রিয় এই নক্ষত্র এখনো আমাদের সবার হৃদয়ে, ভাবনায়, অনুভবে বেঁচে আছে, বেঁচে থাকবে চিরকাল। জন্মদিনে বরাবরের মতো পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করছি তোমাকে। আল্লাহপাক তোমাকে জান্নাতবাসী করুন, আমিন।’ এর আগে গত ৬ সেপ্টেম্বর সালমানের মৃত্যুদিনেও তাঁকে স্মরণ করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন শাবনূর। সেখানে তিনি লেখেন- ‘আজ চলচ্চিত্রের রাজপুত্র সালমান শাহর ২৮তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বরের ওই দিনে ঢাকাই চলচ্চিত্রে বিশাল শূন্যতা তৈরি করে বিদায় নিয়েছিলেন সবার প্রিয় নায়ক সালমান শাহ। ক্ষণজন্মা এ নক্ষত্রের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। ওপারে ভালো থেকো সালমান।’ পর্দায় সালমান-শাবনূরের রসায়ন ভীষণ পছন্দ করত দর্শক। মিথের মতো ছড়িয়ে পড়েছিল এ দুই তারকার প্রেমের গুঞ্জনও। কিন্তু বিবাহিত সালমান কখনোই দুজনের সম্পর্ককে প্রেমের দিকে ঠেলে দেননি। বরং বন্ধু হিসেবে সালমান-শাবনূর ছিলেন ঢালিউডের আদর্শ। সে প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শাবনূর বলেন, ‘প্রেম নয়, সালমান আর আমার ভাইবোনের সম্পর্ক ছিল। সালমানের নিজের ছোট বোন ছিল না, তাই সে আমাকে ছোট বোনের মতোই দেখত। এটাও ঠিক, সালমান শাহ আর আমাকে নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলেছেন, কিন্তু সেসবের কোনোটিই সত্য নয়।’ অন্যদিকে সালমানের সাবেক স্ত্রী সামিরার দাবি, শাবনূরের সঙ্গে সালমানের প্রেম ছিল। তা নিয়ে দাম্পত্য কলহের জের ধরেই আত্মহত্যা করেছিলেন সালমান শাহ। সে প্রসঙ্গে শাবনূর বলেন, ‘আমি তখন অবিবাহিত একটা মেয়ে। সালমান ছিল বিবাহিত। ওর স্ত্রীর সঙ্গেও আমার ভালো সম্পর্ক ছিল। সালমানের স্ত্রী সব সময় আমাদের সঙ্গেই থাকত। প্রেমের সম্পর্ক বা ওইরকম কিছু যদি হতো সেটা তখন সবাই বুঝতে পারত।’ এদিকে সালমান শাহর অস্বাভাবিক মৃত্যু নিয়ে তদন্ত করেছিল পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক সংবাদ সম্মেলনে পিবিআইয়ের তৎকালীন প্রধান বনজ কুমার মজুমদার বলেন, ‘পিবিআইয়ের তদন্তে সালমান শাহকে হত্যার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। পারিবারিক কলহ ও মানসিক যন্ত্রণায় তিনি আত্মহত্যা করেছেন।’ সে সময় সালমানের আত্মহত্যার পাঁচ কারণ দেখিয়েছিল পিবিআই। এক. সালমান শাহ ও শাবনূরের অতিরিক্ত অন্তরঙ্গতা। দুই. সামিরার সঙ্গে দাম্পত্য কলহ। তিন. মাত্রাতিরিক্ত আবেগপ্রবণতা, চার. মায়ের প্রতি অসীম ভালোবাসা, জটিল সম্পর্কের বেড়াজালে পড়ে পুঞ্জীভূত অভিমানে রূপ নেওয়া এবং পাঁচ. সন্তান না হওয়ায় দাম্পত্য জীবনের অপূর্ণতা।
এদিকে চলচ্চিত্রনির্মাতাদের মধ্যে অনেকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘শাবনূরের পুরনো সাক্ষাৎকার থেকে অনুমান করে নেওয়া যায়, বন্ধুত্ব ও প্রেমের মাঝামাঝি এক ধরনের গভীর বোঝাপড়া ছিল সালমান ও শাবনূরের। নায়িকা শাবনূরের ভাষায়- ‘সালমান খুব আন্তরিক আর কাজপাগল ছিলেন। আমাদের দুজনের বোঝাপড়াটা ছিল চমৎকার। বলতে পারেন, একে অন্যের চোখের ইশারা বুঝতে পারতাম।’ অন্যদিকে সালমানের মৃত্যু নিয়ে তাঁর স্ত্রী সামিরাকে দায়ী করা হলেও তিনি জনসম্মুখে কখনো কিছু বলেননি। সবকিছু আদালতেই বলেছেন। দীর্ঘদিন পর এবার নীরবতা ভেঙে মুখ খুলেছেন সামিরা। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন সালমান শাহর সঙ্গে শাবনূরের সম্পর্ক নিয়ে। সালমান-শাবনূর জুটির শুরুর দিকের তথ্য জানিয়ে সামিরা বলেন, সালমান শাহ এবং মৌসুমী সিদ্ধান্ত নিয়েছিল অভিনয় না করার। এ ঘটনার শুরু একটা সিনেমার শুটিং সেট থেকে। শুটিংয়ের সময় খুব ছোট একটা বিষয় নিয়ে মৌসুমীর মা এবং সালমান শাহর মায়ের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। পরবর্তীতে সালমান শাহ এবং মৌসুমী সিদ্ধান্ত নেয় তারা একসঙ্গে সিনেমা করবেন না। এরপর আমরা নায়িকার সংকটের মধ্যে দিয়ে যাই। তখন শাবনাজ এবং নাঈম বিয়ে করেন। বিয়ের পর গুজব শুরু হয় শাবনাজ অভিনয় ছেড়ে দেবেন। তখন নতুন নায়িকা খুঁজতে হয়। পরে আমরা শাবনূরকে দেখার পর সিদ্ধান্ত নেই ওর সঙ্গেই কাজ করা হবে। সালমান শাহ এবং শাবনূরের প্রেমের গুঞ্জন নিয়ে সামিরা বলেন, এই বিষয়টা এত সহজে বলা যায় না। এর পেছনে অনেক বড় গল্প আছে। সেই গল্পটা শুরু করলে শেষ করতে অনেক সময় লেগে যাবে। তবে সহজ প্রশ্নে কেউ যদি জানতে চায় সালমান শাহ এবং শাবনূরের মধ্যে কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা তাহলে আমি এক বাক্যে বলব যে, ‘হ্যাঁ তাঁদের সম্পর্ক ছিল’। শাবনূরের সঙ্গে সম্পর্কের রেশ ধরে সালমান শাহর সঙ্গে সমস্যা হতো কিনা সে প্রসঙ্গে সামিরা বলেন, হ্যাঁ এ বিষয়টা নিয়ে সমস্যা হয়েছে। আমি রাগ করে আমার বাবার বাসায়ও চলে গিয়েছিলাম। সালমান শাহ আমাকে অনেক বুঝিয়েছে, মাফও চেয়েছিল। পরে আমাকে মানিয়ে নিয়ে আসে। আমি দুই মাস পর ঢাকায় আমাদের বাসায় ফিরে আসি। সালমান শাহ আমাকে বলেছিল সে শাবনূরের সঙ্গে যে সিনেমাগুলোর চুক্তি আছে সেগুলো শেষ হলেই তাঁর সঙ্গে আর কোনো সিনেমায় কাজ করবে না এবং আমরা নতুন নায়িকা খুঁজব। সে সব কথা রেখেছিল।
১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ সিনেমার মধ্য দিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রে আসেন শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন ওরফে সালমান শাহ। তবে তাঁর যাত্রা ছিল খুব কম সময়ের। মাত্র ২৬ বছর বয়সে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পৃথিবী থেকে বিদায় নেন ক্ষণজন্মা এ অভিনেতা। সালমান শাহর মৃত্যুর বিষয়টি নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক ছিল। সালমান শাহর পরিবার ও ভক্তরা দাবি করে আসছিল আত্মহত্যা নয়, তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। তবে বারবার পুলিশের তদন্তে উঠে আসে সালমান শাহ আত্মহত্যাই করেছেন। ২০২০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি সালমান শাহর মৃত্যুর তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। দীর্ঘ তদন্তের পর সংস্থাটি বলেছে, সহশিল্পী ও চিত্রনায়িকা শাবনূরের সঙ্গে সালমানের সম্পর্কের জের ধরে পারিবারিক কলহের কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। সালমান-শাবনূরের মধ্যে প্রেম করার গুঞ্জন ছিল অনেক আগে থেকেই। তবে বিষয়টি সব সময়ই প্রত্যাখ্যান করেছিলেন শাবনূর। বেশ কয়েক বছর আগেও একটি জাতীয় দৈনিকে এবং এবার আবারও শাবনূর বলেন, ‘প্রেম নয়, সালমানের সঙ্গে আমার ভাইবোনের সম্পর্ক ছিল।’