রবিবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৫ ০০:০০ টা
এনএসআই ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর

গোয়েন্দাদের সতর্ক থাকতে বললেন প্রধানমন্ত্রী

বাংলাদেশকে যারা অকার্যকর করতে চায়, সেই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে ও গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রাজনীতি জনগণের জন্য, জনগণকে পুড়িয়ে মারার জন্য নয়। তিনি বিএনপি-জামায়াতকে ইঙ্গিত করে বলেন, অন্তঃসত্ত্বা নারী থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী- কেউই এখন তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদফতরের (এনএসআই) বহুতলবিশিষ্ট প্রধান কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন শেষে কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট আন্দোলন করতে চাইলে মাঠে নেমে জনগণকে সম্পৃক্ত করে আন্দোলন করুক। যারা বোমা মেরে আগুন দিয়ে সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারছে, তাদের হাত পুড়িয়ে দিলে বুঝবে পোড়ার কী যন্ত্রণা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এসবের সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। দেশের মাটিতে জঙ্গি তৎপরতা বরদাস্ত করা হবে না। তিনি বলেন, কী কারণে, কোন ইস্যুতে আন্দোলন চলছে তা আমার বোধগম্য নয়। উন্নয়নের পথে দেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে, বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ যখন রোলমডেল হয়ে উঠেছে তখন বিএনপি-জামায়াত এই অপতৎপরতা শুরু করেছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর দেশের উন্নয়ন হয়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে। তারপরও কেন আন্দোলন তার কোনো কারণ আমি খুঁজে পাই না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩ সালে এরা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে আগুন দিয়ে পবিত্র কোরআন পুড়িয়েছে। এ বছর বিশ্ব ইজতেমা ও পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) চলাকালে হরতাল-অবরোধ ডেকেছে। বিএনপি-জামায়াত কোন ইসলামের সেবক আমার তা বোধগম্য নয়। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালেও যখন দায়িত্ব নেয় তখনো এমন অপতৎপরতা দেখেছি। আওয়ামী লীগের মতো এত অল্প সময়ে এত ভালো কাজ আর কেউ করেনি। গত ছয় বছরে দেশ যদি কোথাও একটু পিছিয়ে যেত তাহলেও আমাদের বিরুদ্ধে তাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতা থাকত। তাদের আসলে ইস্যুটা কী তা আমি নিজেই খুঁজে পাই না।  
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশ উন্নয়নের সব সূচকে এগিয়ে আছে দেখেই মনে হয় বিএনপি নেত্রীর মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তার তো আবার পেয়ারে পাকিস্তান।
সমালোচকদের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আমার বক্তব্যের সমালোচনা করেন, তাদের আহ্বান জানাব, বার্ন ইউনিটে গিয়ে দেখে ?আসুন, কীভাবে পোড়ানো মানুষগুলো কষ্ট পাচ্ছে। তাদের কষ্ট দেখে আমার কষ্ট হয়, আমি সারাক্ষণ তাদের খোঁজখবর রাখি। চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের নির্দেশনা দিই।
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমদ সিদ্দিকী, এনএসআই মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শামসুল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠানের শুরুতে সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত এনএসআই সদস্য আবদুস সাত্তার স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে এনএসআইয়ের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন সময়ে দেশের প্রয়োজনে এনএসআই সবচেয়ে বেশি ও বৃহৎ পরিসরে তৎপরতা দেখিয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও এনএসআইসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কার্যকর ভূমিকা রয়েছে। বিমানবন্দরে আজ যে সোনা ধরা পড়ছে তা এনএসআই গোয়েন্দাদের তৎপরতার ফলেই সম্ভব হচ্ছে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের তৎপরতায় মাদকদ্রব্যও ধরা পড়ছে।
বঙ্গবন্ধু তনয়া স্মরণ করেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যার পর অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীরা বিভিন্ন সময়ে এই সংস্থাটিকে নিজেদের অবৈধ ক্ষমতা স্থায়ী করার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। ফলে এই সংস্থার সুনাম ও মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়। এনএসআইর পেশাদারিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটি জনগণের আস্থা হারায়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২১ বছরের স্বৈরশাসন শেষে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর আমরা এনএসআইকে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটি পেশাদার প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার উদ্যোগ নিই। এনএসআই ফিরে পায় তার হারানো গৌরব ও জনগণের আস্থা। এনএসআইকে শক্তিশালী করতে তার সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে আমরা এ সংস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে এবং এর গুণগত মান বাড়াতে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করি। অবকাঠামো উন্নয়ন, যন্ত্রপাতি ও যানবাহন ক্রয়, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট আবার ক্ষমতায় এসে আমাদের নেওয়া কর্মসূচিগুলো বন্ধ করে দেয়। শেখ হাসিনা আরও উল্লেখ করেন, আমরা এনএসআইর সামর্থ্য বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করি।
অনিকের চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন প্রধানমন্ত্রী : বিএনপি জোটের অবরোধে বোমার আঘাতে গুরুতর আহত ফেনীর এসএসসি পরীক্ষার্থী মিনহাজুল ইসলাম অনিকের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নত চিকিৎসার জন্য অনিককে বিদেশ পাঠানোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গতকাল তার কার্যালয়ের পরিচালক ডা. ?জুলফিকার লেনিন অনিককে দেখতে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট হাসপাতালে যান। সেখানে তিনি অনিকের খোঁজখবর নেন। প্রধানমন্ত্রীর উপ-প্রেসসচিব আশরাফুল আলম খোকন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী অনিকের চিকিৎসার সব দায়িত্ব নিয়েছেন। অনিককে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার জন্য পাসপোর্ট তৈরিসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। গত ৫ জানুয়ারি বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ফেনী শহরের খেজুর চত্বর এলাকায় অবরোধ সমর্থকদের বোমার আঘাতে আহত হন মিনহাজুল ইসলাম অনিক। বোমায় তার শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার চোখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর