রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু) নির্বাচনে ছাত্রশিবিরসমর্থিত ‘সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল ভিপি, এজিএসসহ ২০ পদে জয় পেয়েছে। জিএস পদে বিজয়ী হয়েছেন সাবেক সমন্বয়ক আম্মার। সর্বশেষ রাকসু নির্বাচনেও ছাত্রদল ও বাম জোটের ভরাডুবি হয়েছে। তবে ক্রীড়া সম্পাদক পদে ছাত্রদল প্যানেলের প্রার্থী ও জাতীয় দলের খোলোয়াড় নার্গিস খাতুন বিজয়ী হয়েছেন। এ ছাড়া বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ তোফা। গতকাল সকালে ঘোষিত রাকসু নির্বাচন কমিশনের ফলাফলে এ চিত্র দেখা গেছে। নির্বাচনে মোট ভোটারসংখ্যা ছিলেন ২৮ হাজার ৯০১। এর মধ্যে ছাত্র ভোটার ১৭ হাজার ৫৯৬ জন ও ছাত্রী ভোটার ১১ হাজার ৩০৫ জন। নির্বাচনে ভোট পড়েছে ৬৯ দশমিক ৮৩ শতাংশ। এর মধ্যে ছয়টি নারী হলে ভোট পড়ার হার ৬৩ দশমিক ২৪।
নির্বাচনি ফলাফল ঘোষণা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এফ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘পুরো নির্বাচনি কার্যক্রম অত্যন্ত স্বচ্ছতার সঙ্গে সম্পন্ন হয়েছে। ভোট গণনা বিতর্ক এড়াতে সরাসরি সম্প্রচার করেছি। ফলাফল সবাই মেনে নিয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চার পথ আরও প্রশস্ত হলো।’
ফলাফল ঘোষণার পর নবনির্বাচিত ভিপি মোস্তাকুর জাহিদ বলেন, ‘নির্বাচনি ইশতেহার তো বাস্তবায়ন করবোই, প্রয়োজন অনুসারে শিক্ষার্থীদের অন্য সমস্যা নিয়েও কাজ করব।’
জিএস সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা যে বিশ্বাসে আমার ওপর ভরসা রেখেছে, ইনশাআল্লাহ- সেটা পূরণ করব। আগামীর ক্যাম্পাস হবে লেজুড়বৃত্তিক রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস।’ সরেজমিনে দেখা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকাল ৫টা থেকে শুক্রবার সকাল ৯টা পর্যন্ত টানা ১৬ ঘণ্টা ভোট গণনা শেষে ১৭টি কেন্দ্রের ফলাফল প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। এতে কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি, এজিএসসহ ২৩ পদের মধ্যে ২০ পদে জয় পেয়েছেন শিবিরসমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোটের প্রার্থীরা। শিবিরের ভিপি প্রার্থী মোস্তাকুর জাহিদ পেয়েছেন ১২ হাজার ৬৮৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলসমর্থিত ঐক্যবদ্ধ নতুন প্রজন্মের ভিপি প্রার্থী শেখ নূর উদ্দিন আবির পেয়েছেন ৩ হাজার ৩৯৭ ভোট। জিএস পদে বিজয়ী হয়েছেন আধিপত্যবিরোধী ঐক্য প্যানেলের প্রার্থী ও সাবেক সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। তিনি পেয়েছেন ১১ হাজার ৫৩৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রশিবিরসমর্থিত প্যানেলের ফাহিম রেজা পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৪১ ভোট। এজিএস পদে জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবিরসমর্থিত সালমান সাব্বির। তার প্রাপ্ত ভোট ৬ হাজার ৯৭১। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছাত্রদলসমর্থিত জাহিন বিশ্বাস এষা পেয়েছেন ৫ হাজার ৯৪১ ভোট। বাম জোটসমর্থিত গণতান্ত্রিক শিক্ষার্থী পর্ষদের ভিপি পদে ফুয়াদ রাতুল, জিএস পদে কাইসার আহমেদ ও এজিএস পদে নাসিম সরকার পেয়েছেন যথাক্রমে ২৩৭, ২৯৯ ও ১৭১ ভোট।
এ ছাড়া কার্যনির্বাহী সদস্যসহ সব পদে বিপুল ভোটে জয় পেয়েছে ছাত্রশিবিরসমর্থিত প্যানেল। তাদের মধ্যে সহ-ক্রীড়া সম্পাদক পদে ৭ হাজার ৭৮৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আবু সাঈদ নুন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক পদে ৯ হাজার ৭৯১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন জাহিদ হাসান জোহা, সহসম্পাদক পদে ৭ হাজার ৪০২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন রাকিবুল ইসলাম, মহিলা সম্পাদক পদে ৯ হাজার ৫৯৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন সাইয়িদা হাফসা, সহ-মহিলা সম্পাদক পদে ১০ হাজার ৬১৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন সামিয়া জাহান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক পদে ৭ হাজার ৯২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন নাজমুস সাকিব, সহসম্পাদক পদে ৯ হাজার ৫৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন সিফাত আবু সালেহ, মিডিয়া ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ৭ হাজার ৩০৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন মোজাহিদ ইসলাম, সহসম্পাদক পদে ৭ হাজার ৬১১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আসাদুল্লাহ, সহবিজ্ঞান সম্পাদক পদে ৮ হাজার ৫৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন মুজাহিদুল ইসলাম সাঈম, বিতর্ক ও সাহিত্য সম্পাদক পদে ৬ হাজার ৯৯৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন ইমরান লস্কর, সহসম্পাদক পদে ৭ হাজার ৩৩০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন নয়ন হোসেন, পরিবেশ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে ৬ হাজার ১৬৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন আবদুল্লাহ আল মাসুদ। সহসম্পাদক পদে ৬ হাজার ৬৯২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন মাসুমা ইসরাত মুমু। ছাত্রশিবিরসমর্থিত প্যানেল থেকে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে বিজয়ী হয়েছেন জুলাই যোদ্ধা দ্বীপ মাহবুব, সনাতনী প্রার্থী সুজন চন্দ্র, ইমজিয়াউল হক কমিলি ও এ বি এম খালেদ। এ ছাড়া ক্রীড়া সম্পাদক পদে ৭ হাজার ৭৮৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন ছাত্রদলসমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী নার্গিস খাতুন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে ৬ হাজার ৭৮০ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী তোফায়েল আহমেদ তোফা।
সিনেট প্রতিনিধি ও হল সংসদও শিবিরের দখলে : ১৭টি হল সংসদেও ছাত্রশিবিরসমর্থিত সম্মিলিত শিক্ষার্থী জোট প্যানেলের প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছেন। শেরেবাংলা হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে জয় পেয়েছেন যথাক্রমে রানা হোসাইন, তানজীল হোসাইন ও উমর ফারুক। শাহ মখদুম হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে জয় পেয়েছেন যথাক্রমে শামীম আলম, বায়জিদ ও জাকারিয়া। নবাব আবদুল লতিফ হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে জয় পেয়েছেন যথাক্রমে মিয়ামত উল্লাহ, নুরুল ইসলাম শহীদ ও রনি হাসান। আমীর আলী হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে জয় পেয়েছেন যথাক্রমে স্বপন হোসেন, নাঈম ইসলাম ও সাব্বির হোসেন। শহিদ শামসুজ্জোহা হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে জয় পেয়েছেন যথাক্রমে আশিকুর রহমান, সোহাইব হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান। মন্নুজান হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে জয় পেয়েছেন যথাক্রমে সুমাইয়া জাহান, আজমেরি হক তন্নি ও সাবিনা ইয়ামিন। শহীদ হবিবুর রহমান হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে জয় পেয়েছেন যথাক্রমে আহমাদ আহসান উল্লাহ ফারহান, আশিক শিকদার ও শহীদুল ইসলাম সুমন। মতিহার হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে জয় পেয়েছেন যথাক্রমে তাজুল ইসলাম, আরিফুল ইসলাম ও ওবাইদুর রহমান। মাদার বখস হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে জয় পেয়েছেন যথাক্রমে রুবেল আলী, ইব্রাহিম হোসাইন ও আবু রায়হান। সোহরাওয়ার্দী হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে জয় পেয়েছেন যথাক্রমে কাউসার হাবিব, সাচ্চু হোসেন ও ইমরুল হাসান। তাপসী রাবেয়া হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে যথাক্রমে মরিয়ম, তাওহীদা ও খাদিজা। বেগম খালেদা জিয়া হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে যথাক্রমে সাবরিনা মারজান, জারিন তাসনীম, পারভীন আরা। জিয়াউর রহমান হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে যথাক্রমে মোজাম্মেল, আরিফুল ইসলাম ও ইসরাফিল হোসেন। বিজয়-২৪ হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে যথাক্রমে রাছেল মিয়া, ইমরুল হাসান ও শাহাদাত হোসেন। রহমতুন্নেসা হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে যথাক্রমে সাইফুন নাসিরা, হাবিবা আক্তার রিয়া ও আফসানা মিমি। জুলাই-৩৬ হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে যথাক্রমে সমাপিকা আহমেদ সিমি, তাসফিয়া তাবাসসুম ও তাওহীদা ইয়াসমিন। রোকেয়া হলে ভিপি, জিএস ও এজিএস পদে যথাক্রমে অর্পণা হক মুগ্ধ, লায়লা খাতুন ও শাহনাজ পারভীন।
সিনেট নির্বাচনেও শিবিরের জয়জয়কার : সিনেটে পাঁচজন প্রতিনিধি হিসেবেও জয় পেয়েছেন ছাত্রশিবির প্যানেলের ভিপি মোস্তাকুর জাহিদ, জিএস ফাহিম রেজা ও এজিএস সালমান সাব্বির, আধিক্যবিরোধী ঐক্য প্যানেলের জিএস সালাউদ্দিন আম্মার ও আকিল বিন তালেব (স্বতন্ত্র)। এবারের রাকসু নির্বাচনে ১০টি প্যানেলসহ রাকসুর ২৩ পদে ২৪৭ জন, হল সংসদে ১৫ পদে ১৭টি হলে ৫৯৭ প্রার্থী এবং সিনেট ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের ৫ পদে ৫৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। রাকসুতে ভিপি পদে ১৮ জন, জিএস পদে ১৩ জন ও এজিএস পদে ১৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।