চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ (সিইপিজেড) এলাকায় পোশাক কারখানায় লাগা আগুন দীর্ঘ সাড়ে ১৭ ঘণ্টা পর নিয়ন্ত্রণে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসের ২৫টি ইউনিটের চেষ্টায় গতকাল সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে কারখানাটিতে আগুন লাগে। এদিকে আগুন লাগার কারণ অনুসন্ধান ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে দুটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, ভবনটির সাত তলায় অ্যাডামস ক্যাপস অ্যান্ড টেক্সটাইল লিমিটেড এবং জিহং মেডিকেল প্রোডাক্টস কোম্পানি লিমিটেড নামে দুটি পোশাক কারখানার গুদাম ছিল। সেখানেই আগুনের সূত্রপাত। ভবনটি নির্মাণের সময় বিল্ডিং কোড পুরোপুরি মানা হয়নি। ছিল না অগ্নিনিরাপত্তা সনদও। তবে সনদের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। অগ্নিকাণ্ডের পর তাপে ভবনটি জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। ধসে পড়ার আশঙ্কায় ভবনটিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ভবনটি বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি না করায় ফায়ার ফাইটাররা প্রয়োজনীয় স্থানে পৌঁছাতে পারেননি। ভবনটির চারটি ফ্লোরে গুদাম ছিল। একটি প্রতিষ্ঠান তোয়ালে, ক্যাপ এবং অন্যটি সার্জিক্যাল গাউন তৈরি করত। এ কারণে ভবনে বেশ কিছু দাহ্য পদার্থ ছিল। ফলে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
তাজুল ইসলাম জানান, অগ্নিকান্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। ১৫ দিনের মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। ভবনের ভিতরে প্রবেশ নিষিদ্ধ, সংশ্লিষ্টরা সার্ভে করার পর ভবন অপসারণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এ ছাড়া সিইপিজেডের নির্বাহী পরিচালক আবদুস সোবহান জানান, অগ্নিকান্ডের বিষয়ে তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। সাত দিনের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেবে। ফায়ার সার্ভিস জানায়, বৃহস্পতিবার আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী এবং বিজিবির বেশ কিছু ইউনিট কাজ শুরু করে।
কিন্তু সন্ধ্যার পর আগুন আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। প্রচণ্ড তাপ আর ঘন ধোঁয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নেভাতে ব্যর্থ হন। রাতে বৃষ্টি হলেও আগুনের ভয়াবহতা কমেনি। আগুনে ভবনের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়ে। অবশেষে গতকাল আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সরেজমিন দেখা যায়, ভবনটির বিভিন্ন ফ্লোরে আসবাবপত্র, কাঁচামালসহ সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ভবনের বিভিন্ন অংশ ধসে পড়েছে। পুরো ভবনটি কালো রং ধারণ করে দাঁড়িয়ে আছে। ভবনের নিরাপত্তাকর্মী মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম জানান, ভবনটির প্রথম ও দোতলায় ছিল তোয়ালে কারখানা। তিন থেকে সাত তলা পর্যন্ত ছিল মেডিকেলের উপকরণ তৈরির একটি কারখানা। জিহং মেডিকেল প্রোডাক্টস কোম্পানি লিমিটেড নামে চীনা মালিকানাধীন এ প্রতিষ্ঠানটিতে ৪-৫ হাজার কর্মী কাজ করেন।