বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের দেশে ফেরা এবং ফিরে যাওয়ার পথে আইনি কোনো ঝামেলা থাকবে না। এমনটাই নিশ্চিত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
গতকাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে এসে মিডিয়ার মুখোমুখিতে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘সাকিবের দেশে আসা কিংবা বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রে তো কোনো বাধা থাকার কথা নয়।’ ক্রীড়া উপদেষ্টার বক্তব্য শেষে এখন নিশ্চিত করে বলা যায় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব দেশে ফিরছেন এবং ঘরের মাঠেই বিদায়ি টেস্ট খেলবেন। ১৬ অক্টোবর দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজ খেলতে ঢাকায় আসছে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল। মিরপুরে প্রথম টেস্ট ২১-২৫ অক্টোবর এবং দ্বিতীয় টেস্ট চট্টগ্রামে ২৯ অক্টোবর-২ নভেম্বর। টি-২০ বিশ্বকাপ খেলে সাকিব ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানিয়েছেন। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে ওয়ানডেকেও বিদায় জানাবেন। দেশে আসা ও যাওয়ার পথে কোনো বাধা না থাকলেও নিশ্চিত করে জানা যায়নি কবে দেশে ফিরবেন বাঁ হাতি স্পিন অলরাউন্ডার। ক্রীড়া উপদেষ্টা পরিষ্কার করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান। কিন্তু সাকিব তার অবস্থান পরিষ্কার করেননি। তিনি কি ফিরবেন, না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেই থেকে যাবেন? বিপিএলে গত আসরে রংপুর রাইডার্সে খেলেছেন।
ভারতের বিপক্ষে দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজ শেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উড়ে যান সাকিব। কানপুর টেস্টের আগের দিন মিডিয়াকে বলেছিলেন, সাদা পোশাকের টেস্টকে বিদায়ের কথা। জানিয়েছিলেন, ঘরের মাঠ মিরপুরে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলে ব্যাট, প্যাড, গ্লাভস, বোলিং বুট শো কেসে তুলে রাখবেন। কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের বিপক্ষে একজন গার্মেন্ট কর্মীর খুনের মামলা। শুধু তাই নয়, শেয়ার কারসাজিতে জড়িত থাকায় তাকে ৫০ লাখ জরিমানাও করে। এরপর থেকে সাকিবের বিপক্ষে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে। তার দেশে ফেরার পথও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। কিছুদিন আগে সাকিব তার অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে ক্ষমা চেয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন। এরপর বরফ গলতে শুরু করে। গতকাল তার দেশে ফেরার পথটি সুগম করেন যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা। ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের সময় সাকিব দেশের বাইরে ছিলেন। ব্যস্ত ছিলেন কানাডার গ্লোবাল টি-২০ সিরিজ খেলায়। প্রবাসীদের অনেকেই তাকে আন্দোলনের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। কিন্তু আগের সরকারের সংসদ সদস্য হওয়ায় কোনো উত্তর দেননি। তার এই নীরব থাকাকে কেন্দ্র করে নানামুখী প্রশ্নের জন্ম নেয়। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ জানিয়েছিলেন, ক্রিকেট বোর্ড তাকে নিরাপত্তা দিতে পারবে না। এরপর ধারণা করা হচ্ছিল, তিনি হয়তো আর কখনো দেশে ফিরবেন না। যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোয় এখন আর দেশে ফেরার পথে কোনো বাধা থাকছে না ৩৭ বছর বয়সি ক্রিকেটারের। যদিও ক্ষমা চেয়ে পোস্ট দেওয়ার পর মিরপুর ক্রিকেট স্টেডিয়ামের দেওয়ালে সাকিবের বিরুদ্ধে প্রচারণাকারীরা একাধিক গ্রাফিতি লিখেন তার বিপক্ষের লোকজন। দুই দিন আগে আবার সাকিবের পক্ষে লোকজনের সঙ্গে বিরুদ্ধ পক্ষের লোকজনের হাতাহাতি হয়। দেশে থাকার সময় সাকিবের বিপক্ষে কোনো রকম ঝামেলা হবে না। তার নিশ্চিত করবে সরকার, বলেন ক্রীড়া উপদেষ্টা, ‘একজন ক্রিকেটার, তিনি খেলবেন এবং তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। আসার ব্যাপারে তো আমি কোনো বাধা দেখি না। প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেটা আমরা নিশ্চিত করব।’ সাকিবের বিরুদ্ধাচারণকারীদের বিষয়ে ক্রীড়া উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা তো আসলে আবেগের ব্যাপার। তাদেরও ওই অধিকার আছে। গণতান্ত্রিক দেশ, সাংবিধানিক অধিকার আছে যে কোনো ধরনের আন্দোলন বা যে কোনো কিছু করার।’ বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা টেস্ট সিরিজের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দেখতে গতকাল মিরপুর স্টেডিয়াম পরিদর্শন করেন ক্রীড়া উপদেষ্টা। সিরিজ নিয়ে বলেন, ‘নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। যেহেতু এখানে দক্ষিণ আফ্রিকা আসবে, আমাদেরও পরিবেশটা ভালো রাখতে হবে। না হলে বাইরের দেশগুলো এখানে খেলতে আসার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার সমস্যা বোধ করবে।’ ক্যারিয়ারে সাকিব ৭১ টেস্টে রান করেছেন ৪৬০৯ ও উইকেট নিয়েছেন ২৪৬টি। ২৪৭ ওয়ানডেতে ৭৫৭০ রান ও ৩১৭ উইকেট এবং ১২৯ টি-২০ ম্যাচে ২৫৫১ রান ও উইকেট নেন ১৪৯টি।