কাশির সঙ্গে ফোঁটা ফোঁটা রক্ত বা কফমিশ্রিত রক্ত, শুধুু রক্ত, পরিমাণ কম বা বেশি যা থাক না কেন তাকে মেডিকেলের ভাষায় হেমোপটাইসিস বলে। কাশির সঙ্গে রক্ত গেলে তার সঠিক ইতিহাস জানা এবং কারণ বের করা প্রয়োজন। কারণ কাশির সঙ্গে রক্ত দেখা দিলে কখনো কখনো ফুসফুসের জটিল রোগ সন্দেহ করা হয়। যেমন- ফুসফুসে ক্যান্সার। দ্রুত রোগ নির্ণয় করে সঠিক মাত্রায় ওষুধ সেবন করে বেশির ভাগ রোগ সম্পূর্ণ নির্মূল/ভালো করা সম্ভব। যেমন যক্ষ্মা প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে ছয় মাসের ওষুধ খেলে যক্ষ্মা ভালো হয়। যেসব কারণে কাশির সঙ্গে রক্ত যায়- ব্রঙ্কাইটিস (শ্বাসনালির প্রদাহ), ফুসফুসে ক্যান্সার যক্ষ্মা, ব্রঙ্কিয়েক্টেসিস (স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্বাসনালি), ফুসফুসে ফোঁড়া হার্টের বাল্বের সমস্যা যেমন- মাইট্রাল স্টেনোসিস, হার্ট ফেইলার। এ ছাড়া অন্যান্য কারণ যেমন- বুকের আঘাতজনিত কারণে, বিভিন্ন ধরনের ভাসকুলাইটিস যেমন- পালমোনারি ধমনি-শিরা প্রদাহজনিত জটিলতা, বিভিন্ন প্রকার রক্তের রোগ যেমন- ব্লাড ক্যান্সার। এ ছাড়া অনেক সময় কারও কারও ক্ষেত্রে ওষুধজনিত কারণে হতে পারে। এ ছাড়া কিছু বিরল কারণে যেমন- কখনো কখনো মহিলাদের প্রতিমাসে ঋতুস্রাবের সময় কাশির সঙ্গে রক্ত যেতে পারে।
উৎস : কোন জায়গা থেকে রক্ত বের হচ্ছে তার ইতিহাস থেকে রোগ নির্ণয় করা যায়। এ জন্য চিকিৎসককে রোগীর ইতিহাস জানাতে হবে। যেমন নাক দিয়ে রক্ত আসা, গলা ফ্যাসফ্যাসে হয়ে যাওয়া, মুখে ঘা থাকলে শ্বাসনালির ওপরিভাগ ইনফেকশন সন্দেহ করা হয়। কালচে লাল রং, নোনতা লাগা, বমি বমি ভাব, পেটে ব্যথা, আগে জন্ডিস ও মদ পানের ইতিহাস থাকলে বমির সঙ্গে রক্ত এসেছে বলে ধারণা করা হয়। যার উৎস খাদ্যনালি বা লিভারজনিত জটিলতার কারণে। তাই এন্ডোসকপি জাতীয় পরীক্ষা প্রয়োজন।
কাশির সঙ্গে রক্তের রং দিয়ে বিভিন্ন অসুখ আলাদা করা যায়। যেমন- ফেনাযুক্ত কাশি, পরিষ্কার লাল রং শ্বাসনালিজনিত বা লিভারজনিত কারণে। কাশির সঙ্গে রক্তের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করেও রোগ আলাদা করা যায়। যেমন- বেশি পরিমাণে রক্ত গেলে ফুসফুসে ক্যান্সার, যক্ষ্মা, ফুসফুসে ফোঁড়া, স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত শ্বাসনালি। কাশির সঙ্গে অল্প পরিমাণ রক্ত গেলে ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া, হৃদরোগের জটিলতা সন্দেহ করা হয়। হঠাৎ করে কারও কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া শুরু হলে হৃদরোগজনিত জটিলতার কারণে হতে পারে। ক্রমাগত কাশির সঙ্গে রক্ত যাওয়া, মাঝে মাঝে রক্ত যাওয়া ফুসফুসে ক্যান্সার সন্দেহ করা হয়। আমরা অনেক সময় এসব কাশিকে খুব একটা গুরুত্ব দিই না। কাশির সঙ্গে রক্ত গেলে বা এ রকম উপসর্গ প্রকাশ পেলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এ বিষয়ে অবহেলা করা ঠিক হবে না।
লেখক : অ্যাজমা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ মেডিনোভা, মালিবাগ, ঢাকা।
বিডি প্রতিদিন/এমআই