সপ্তাহখানেক আগে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ জয়ের পরিকল্পনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে পেশ করেন। এবার একই পরিকল্পনা ঘোষণা দিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনও। তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে তার দেশ যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, তা পরিপূর্ণ করা হবে। পুতিন ইউক্রেনে সেনা মোতায়েনের কারণ হিসেবে আবারও ‘নব্য-নাৎসি স্বৈরাচার’ থেকে রুশ ভাষাভাষীদের রক্ষার কথা উল্লেখ করেছেন। ইউক্রেনের চারটি অঞ্চল রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার দ্বিতীয় বার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল এক ভিডিও বার্তায় তিনি এ বক্তব্য দেন। মস্কোর পক্ষ থেকে চারটি অঞ্চল দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, জাপোরিঝঝিয়া ও খেরসনকে রাশিয়ার সঙ্গে একত্রীকরণ দিবস হিসেবে দিনটি পালন করা হয়। ভাষণে পুতিন জানান, মস্কোর নির্ধারিত সব লক্ষ্য অর্জিত হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পক্ষে সত্য রয়েছে। আমরা আমাদের সন্তান-নাতিদের জন্য নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ রক্ষায় লড়াই করছি’। পুতিন আরও অভিযোগ করেছেন যে, পশ্চিমা দেশগুলো ইউক্রেনকে একটি সামরিক উপনিবেশে পরিণত করে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ছড়াচ্ছে। পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন, ২০১৪ সালের মতোই ইউক্রেনকে নতুন যুদ্ধে উসকে দিতে পশ্চিমারা অস্ত্র সরবরাহ করছে। এদিকে ইউক্রেন জানিয়েছে, রবিবার রাতে রাশিয়া কিয়েভসহ বিভিন্ন অঞ্চলে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। তবে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা বাহিনী বেশির ভাগ হামলাই প্রতিহত করেছে।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনী জানিয়েছে, ৭৩টি ড্রোন ও বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনে নিক্ষেপ করেছে রাশিয়া। এর মধ্যে ৬৭টি ড্রোন ও একটি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিহত করা হয়েছে। মাইকোলাইভ অঞ্চলে ড্রোন হামলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসজুড়ে ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থাপনা, বিশেষ করে বিদ্যুৎ, সামরিক ও পরিবহন অবকাঠামো লক্ষ্য করে হামলা চালিয়ে আসছে রাশিয়া। তবে মস্কো বারবার দাবি করেছে, ইউক্রেনের বিদ্যুৎ অবকাঠামো বৈধ সামরিক লক্ষ্যবস্তু এবং তারা বেসামরিকদের ওপর হামলা চালায় না। রুশ হামলা থেকে ইউক্রেনের শহরগুলোকে রক্ষার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোকে আরও বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সরবরাহের আহ্বান জানিয়েছেন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মস্কোর পক্ষ থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ইউক্রেনের চারটি অঞ্চলকে গণভোটের মাধ্যমে একত্রীকরণের ঘোষণা দেওয়া হয়। পশ্চিমা বিশ্বে এ নিয়ে ব্যাপক নিন্দা ও সমালোচনা করা হয়। তবে পুতিনের পক্ষ থেকে অধিকৃত এসব অঞ্চলের নেতাদের সঙ্গে চুক্তি করে রুশ ফেডারেশনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অবশ্য এসব অঞ্চলের পুরোপুরি এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণে আসেনি। রাশিয়া ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেনে পুরোপুরি হামলা শুরু করে। অন্যদিকে কিয়েভ পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
কিয়েভ মনে করে, ন্যাটো বা ইইউ সদস্য হলে তা তাদের জন্য নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে; কিন্তু রাশিয়া এর বিরোধিতা করে আসছে। যুদ্ধ শুরুর সময় ২০২২ সালে পুতিন বলেছিলেন, এ লড়াইয়ের লক্ষ্য হচ্ছে ইউক্রেনকে নিরস্ত্রীকরণ ও নাৎসিমুক্ত করা। তবে ক্রেমলিনের এ বিবৃতি কিয়েভ ও তার পশ্চিমা মিত্ররা প্রত্যাখ্যান করে বলে, নিরস্ত্রীকরণের অজুহাতে সাম্রাজ্যবাদ সম্প্রসারণের কৌশল হিসেবে এ সংঘাত চালানো হচ্ছে।