ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় এখনো ২৬টি পোশাক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। তবে, সাভার ও গাজীপুরের অন্যান্য কারখানায় পুরোদমে কাজ চলছে। টঙ্গীতে ১৪ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। এদিকে, রাজধানীর রূপনগর এলাকায় যমুনা ফ্যাশনওয়্যার লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বকেয়া বেতন দাবিতে রাস্তায় নামেন। পরে কর্তৃপক্ষ বেতন দেওয়া শুরু করায় আন্দোলনরত শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যান। নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-
সাভার : শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার পোশাক কারখানাগুলোতে পুরোদমে উৎপাদন চলছে। মাত্র ২৬টি ব্যতীত সব কারখানায় শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছেন শ্রমিকরা। বন্ধ কারখানাগুলোর অধিকাংশেই সকালে শ্রমিক প্রবেশ করেছেন। তবে মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করতে কর্মবিরতি পালন করছেন তারা। দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলা সাভারের আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা কাটতে শুরু করেছে। কয়েকদিনের ধারাবাহিকতায় শিল্পাঞ্চলে গতকালও পোশাক কারখানায় উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে কাজ করছেন শ্রমিকরা। তবে খুবই কম সংখ্যক কারখানার শ্রমিকরা কাজে যোগ দিলেও বিভিন্ন দাবি আদায়ে কর্মবিরতি পালন করছে বলে জানা গেছে। তবে, গতকাল সকাল থেকেই ডিইপিজেডসহ আশুলিয়া শিল্পাঞ্চলের বেশির ভাগ কারখানায় দলবেঁধে শ্রমিকদের কাজে যোগ দিতে দেখা গেছে। শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চলতি সপ্তাহে নতুন করে এই অঞ্চলে কোনো কারখানা বন্ধ ঘোষণার তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এখনো বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬ এর ১৩(১) ধারায় ২০টি কারখানা বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া সাধারণ ছুটি রয়েছে আরও ছয়টি কারখানায়। গত সপ্তাহের বিভিন্ন সময় শ্রমিক অসন্তোষ চলাকালীন এসব কারখানার অধিকাংশ বন্ধ ঘোষণা করা হয়। যা পরবর্তীতে আর খোলা হয়নি। এ ছাড়া কয়েকটি কারখানার ভিতরে শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে কাজ বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করছেন। যদিও সমস্যা সমাধানে সেসব কারখানায় আলোচনা চলছে। বাংলাদেশ গার্মেন্টস অ্যান্ড সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের আইন বিষয়ক সম্পাদক খায়রুল মামুন মিন্টু বলেন, শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ কারখানা খুলে দেওয়া হলেও কয়েকটি এখনো শ্রম আইনের ১৩(১) ধারায় বন্ধ আছে। যেহেতু পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে, তাই আমরা মালিকপক্ষ ও বিজিএমইএ-কে অনুরোধ করব এসব কারখানাও খুলে দিতে। না হলে এই বন্ধ কারখানাকে কেন্দ্র করে নতুন করে বিশৃঙ্খলা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, যেসব কারখানা বন্ধ রয়েছে সেসব কারখানার শ্রমিকরা কারখানার সামনে গিয়ে কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে কিছুটা হইচই করছেন। আমরা চেষ্টা করছি বিজিএমইএ ও মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে যেন কারখানাগুলো দ্রুত খুলে দেওয়া হয়।
টঙ্গী : গাজীপুরের টঙ্গী ন্যাশনালটিউব রোডের অ্যামট্রানেট গ্রুপের এক্সপোর্ট ভিলেজলির শ্রমিকরা ১৪ দফা দাবিতে গতকাল সকালে কারখানার উৎপাদন বন্ধ রেখে ফটকে অবস্থান নেন। পরে শ্রমিকরা তাদের দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থালে পৌঁছে পরিস্থিতি নিযন্ত্রণের চেষ্টা চালান। অ্যামট্রানেট গ্রুপের শ্রমিকরা জানান, বিভিন্ন দাবি নিয়ে গত কয়েক দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন শ্রমিকরা। এরই অংশ হিসেবে গতকাল ১৪ দফা দাবিতে ফের বিক্ষোভ শুরু করেন। সকাল ৯টায় ক্ষুব্ধ শ্রমিকরা সংঘবদ্ধ হয়ে কারখানার উৎপাদন বন্ধ করে আন্দোলনে যোগ দেন। শ্রমিকরা কারখানার ভিতরে মূল ফটকে অবস্থান নিয়ে তাদের দাবি নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে দুপুর ২টায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের হস্তক্ষেপে কারখানা কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের সব দাবি মেনে নেন। পরে তারা অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি তুলে নিয়ে কাজে যোগ দেন। এ ব্যাপারে গাজীপুর শিল্প পুলিশের টঙ্গী জোনের সহকারী পুলিশ সুপার মোশাররফ হোসেন বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
গাজীপুর : গাজীপুরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে চলছে বেশির ভাগ তৈরি পোশাক কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম। গতকাল সকাল থেকে দলে দলে শ্রমিকরা কারখানায় এসে কাজে যোগ দিয়েছেন। কারখানার নিরাপত্তা ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কাজ করছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এখনো শিল্পনগরী কোনাবাড়ি, কাশিমপুর, চন্দ্রা, সারারো, গাজীপুর সদর উপজেলা এলাকায় কোনো শ্রমিক বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি।
ঢাকা : বকেয়া বেতন আদায়ের দাবিতে রাজধানীর রূপনগর এলাকার সড়কে অবস্থান নেন যমুনা ফ্যাশনওয়্যার লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা। তবে বেলা ১১টার দিকে মালিকপক্ষ বকেয়া বেতন দেওয়া শুরু করলে আন্দোলনরত শ্রমিকরা সড়ক থেকে সরে যান। গতকাল দুপুরে রূপনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোকাম্মেল হক বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, রূপনগর শিয়ালবাড়ি এলাকার সড়ক থেকে সরে গেছেন আন্দোলনরত শ্রমিকরা।