রাকিব, আশিক, মাহাদি, বাবু, মীম—এরা সবাই সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের শিশু। কারো বাবা নেই, কারো মা নেই, আবার কারো কারো মা-বাবা কেউ নেই। পরিবারের স্নেহের ছায়া তারা পায়নি জন্মের পর থেকেই। দুই-একজন স্কুলে যায়, বাকিরা টোকাইয়ের কাজ করে।
ময়লা কাপড়ে এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করলেও তাদের দেখার আসলে কেউ নেই। এমনই সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের অর্ধশতাধিক শিশুকে একবেলা পেটপুরে খাইয়েছেন বসুন্ধরা শুভসংঘ ধামরাই শাখার বন্ধুরা। একই সঙ্গে এই শিশুদের ভালো মানুষ হওয়ার দীক্ষা দিয়েছেন তাঁরা। পড়ালেখা করে ভালো মানুষ হওয়ার জন্য শিশুদের শুনিয়েছেন নানা গল্প আর সফলতার কাহিনি।
শিশুরাও বেশ উৎসাহী হয়ে শুনেছে বসুন্ধরা শুভসংঘ সদস্যদের কথা। কেউ কেউ রাজি হয়েছে নতুন করে পড়া শুরু করার। সকাল ১০টা থেকে শুরু করে বিকেল ৪টা পর্যন্ত আনন্দময় সময় কাটিয়েছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশু ও বসুন্ধরা শুভসংঘ বন্ধুরা।
সম্প্রতি ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ের কালামপুর এলাকায় দিনব্যাপী এই আয়োজনটি সম্পন্ন হয়।
আগে থেকেই শিশুদের জানিয়ে রেখেছিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘ ধামরাই শাখার বন্ধুরা। সকাল থেকেই শিশুরা একে একে জড়ো হতে থাকে। বসুন্ধরা শুভসংঘ কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মেহবীন মুশফিকা, ধামরাই শাখার আফরিনা, সিয়াম, ওয়াসিম আকরাম শিশুদের এক জায়গায় বসার ব্যবস্থা করেন। তাদের নিয়ে নানা খেলাধুলার আয়োজন করেন। এর ফাঁকে ফাঁকে শিশুদের জন্য রান্নার তদারকিও করতে থাকেন তাঁরা।
শিশুদের সেদিনের খাবার ছিল খিচুরি আর মাংস। খেলার ফাঁকে কিছু শিশু আবার রান্নার জায়গায় গিয়ে উঁকি মারছিল। তাদের জন্য কী রান্না হচ্ছে—এই কৌতূহল ছিল শিশুদের মধ্যে। দুপুর হতেই রান্না শেষ হলো। বড় খালি জায়গায় মাদুর পেতে বসিয়ে দেওয়া হলো শিশুদের। সবাইকে খাবার আগে ভালো করে হাত ধুইয়ে দিলেন বসুন্ধরা শুভসংঘ সদস্যরা। কিভাবে হাত ধুতে হবে এবং প্রতিবার খাবার আগে ভালো করে হাত ধুতে হবে—এই বিষয়গুলো শিশুদের শিখিয়ে দেন তাঁরা। শিশুরাও খুব উৎসাহ নিয়ে এগুলো শিখে নেয় এবং জেনে নেয়। হাত ধোয়া শেষে প্রত্যেকের সামনে খাবারের প্লেট দেওয়া হয়। তাদের প্লেটে পরিমাণমতো খাবার তুলে দেন আয়োজকরা। পেটপুরে মনভরে খেয়ে নেয় শিশুরা।
আয়োজকরা বলেন, ‘বসুন্ধরা শুভসংঘ সারা দেশে সেবামূলক কাজ করে যাচ্ছে। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের মূলধারায় ফিরিয়ে আনতে নানামুখী পদক্ষেপ নিচ্ছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। সেই ধারাবাহিকতায় আমরা এই শিশুদের একত্র করেছি। একবেলা পেটপুরে খাওয়ানোই আমাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল না। খাওয়ানোর ফাঁকে ফাঁকে আমরা তাদের অনেক কিছু শেখাতে পেরেছি। পড়ালেখা করতে উৎসাহ দিয়েছি। ওরা যদি পড়ালেখা করতে চায় তাহলে বসুন্ধরা শুভসংঘ তাদের পাশে থাকবে। এর মধ্যে কয়েকজনকে দেখে মনে হয়েছে, তাদের প্রবল ইচ্ছা আছে পড়াশোনা করার। আমরা আগ্রহী শিশুদের নতুন করে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেব।’