বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা অসহযোগ আন্দোলন কেন্দ্র করে গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসী হামলা থেকে বাদ যায়নি মন্ত্রী, এমপিদের বাড়িসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা। সরকারি অফিস, পৌরসভা কার্যালয়, থানা ও পুলিশ বক্সে আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ, আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। একই সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতেও হামলার অভিযোগ রয়েছে। নিজস্ব প্রতিবেদক ও জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
রংপুর : দুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এ সময় একদল যুবক জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে। পরে সেখানে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঠাকুরগাঁও : জেলা প্রশাসক কার্যালয়, জেলা জজ কোর্ট চত্বর, চিফ জুডিশিয়াল ও অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের এজলাসসহ বেশ কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছেন আন্দোলনকারীরা। পঞ্চগড় : জেলা আওয়ামী লীগের পার্টি অফিস ভাঙচুর করা হয়। পরে সংরক্ষিত আসনের এমপি রেজিয়া ইসলাম ও তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাটের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করা হয়। এ ছাড়া সংসদ সদস্যের গাড়িসহ দুটি গাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছেন বিক্ষুব্ধরা। লালমনিরহাট : কালীগঞ্জ উপজেলার চত্বরে বিলবোর্ড, সিসি ক্যামেরা ও আওয়ামী লীগের কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। সৈয়দপুর (নীলফামারী) : আওয়ামী লীগ অফিসে ভাঙচুর চালায় একদল দুর্বৃত্ত। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বিক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিএনপি অফিসে আগুন দেয়। গাইবান্ধা : বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা পৌরসভার কার্যালয় ভাঙচুর করে। সিরাজগঞ্জ : এমপি চয়ন ইসলাম, ড. জান্নাত আরা তালুকদার হেনরী ও সাবেক এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাত মুন্নার বাড়ি, আওয়ামী লীগ অফিস, জেলা পরিষদ কার্যালয়, রেলস্টেশনের কাউন্টার, ভূমি অফিস, কোর্ট চত্বরের কয়েকটি স্থাপনায় আগুন দেন বিক্ষোভকারীরা। বগুড়া : আন্দোলনকারীরা তিন থানায় হামলা, টিঅ্যান্ডটি, পিবিআই, সদর ভূমি অফিস, আওয়ামী লীগ কার্যালয়সহ সদর আসনের এমপি রাগেবুল আহসান রিপুর বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া বিটাক বগুড়া কার্যালয়ের মেইন ফটকসহ কম্পিউটার হিউ মেডিকেল কন্ট্রোল রুমের দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। জয়পুরহাট : বিক্ষোভকারীরা ছাত্রলীগ অফিস ও শ্রমিক লীগ অফিস ভাঙচুর করে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ : জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। এ সময় আন্দোলনকারীরা আওয়ামী লীগ নেতাদের ১৭টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। রাজশাহী : উপজেলা ভূমি অফিস ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আন্দোলনকারীরা। টাঙ্গাইল : জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের প্রাইভেট কারে আগুন দেওয়া হয়। আগুন দিয়েছে এমপি ছোট মনিরের বাড়ি, পেট্রল পাম্প, পৌরসভা কার্যালয়ে, আওয়ামী লীগ অফিসসহ অন্তত ২০টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দিয়েছে। দিনাজপুর : বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও তার সহোদর জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিমের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। এ সময় পুলিশের দুটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে।
ঝিনাইদহ : বিক্ষোভকারীদের মিছিল থেকে থানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ, পুলিশ বক্স ভাঙচুর, পোস্ট অফিসে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পৌরসভায় হামলা করে। কিশোরগঞ্জ : জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল ইসলাম টিটুর বাসাসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছে আন্দোলনকারীরা। পরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনেও আগুন দেয় তারা। ভাঙচুর করা হয় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের বাড়িতেও। মাগুরা : মহম্মদপুর উপজেলা বিএনপি নেতা-কর্মীরা উপজেলা পরিষদের ভিতরে ব্যাপক ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। উপজেলা চেয়ারম্যানের বাড়ি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বরিশাল : পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও সদর আসনের এমপি কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের বাড়িতে হামলা করে। কুমিল্লা : ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির পুরাতন ভবনে আগুন দেয়। পরে ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানায় আগুন দেওয়া হয়। পুলিশের একটি প্রাইভেট কার ও রেকারে আগুন দেওয়া হয়। ভোলা : আন্দোলনকারীরা জেলা আওয়ামী লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগ অফিস, পৌর ভবন, ডিসি অফিস, এসপি অফিস, খাদ্য ভবন, ভূমি অফিসসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পুড়িয়ে দিয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মুক্তিযোদ্ধা কর্নার। এ সময় জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে থাকা ১৪টি গাড়ি এবং দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। হবিগঞ্জ : ভাঙচুর করা হয়েছে হবিগঞ্জ-৩ আসনের এমপি আবু জাহিরের বাড়িতে। আগুন দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে। খুলনা : এমপি শেখ হেলাল উদ্দিন ও শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের পৈতৃক বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। পিরোজপুর : বিক্ষোভকারীরা রাস্তার দুই পাশে রাখা প্রায় অর্ধশত মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। জেলা বিএনপির কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে এক দল যুবক। কালিয়াকৈর (গাজীপুর): আন্দোলনকারীরা ৩টি পুলিশ বক্স, আওয়ামী লীগের অফিস, থানার সামনে রাখা গাড়িসহ বেশকিছু যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে। বাগেরহাট : শহরের খৈয়াসার মোড়, মোদকবাড়ী মোড়, জেল রোড, টেংকের পাড়, টিএ রোড, কালীবাড়ী মোড়, থানার গেট, ফকিরাপুল এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষোভকারীরা। বিক্ষুব্ধরা এ সময় হালদারপাড়াস্থ জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। ফরিদপুর : জেলা আওয়ামী লীগ অফিসে হামলা, শ্রমিক লীগ অফিসে আগুন দেওয়া হয়। এ সময় ১০-১২টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। গাইবান্ধা : গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্লাপুর) আসনের এমপি ও পলাশবাড়ী পৌর মেয়রের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সিলেট : আন্দোলনকারীরা নির্বাচন কমিশনে আগুন দিয়েছে। হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেছে পুলিশ ফাঁড়ি, কর ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবন এবং সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান হাবিবের কার্যালয়। বিশ্বনাথ (সিলেট) : ভাঙচুর করা হয় পৌর শহরের আল-হেরা শপিং মল, আগুন দেওয়া হয়। গাজীপুর : গাজীপুরের কাপাসিয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ও ডাকবাংলোতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ এবং বেশ কিছু মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। কুষ্টিয়া : আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কুষ্টিয়া সদর আসনের এমপি মাহবুব-উল আলম হানিফের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া জেলা আওয়ামী লীগের অফিস, শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ও মজমপুর গেটের ট্রাফিক বক্সে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়। খুলনা : খুলনায় মহানগর আওয়ামী লীগ অফিস, জেলা পরিষদ, প্রেস ক্লাব, বঙ্গবন্ধুর ভ্রাতুষ্পুত্র এমপি শেখ হেলাল উদ্দিন ও সেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের পৈতৃক বাড়ি, সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আবদুল খালেকের বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেছে। এ ছাড়া খুলনা-৪ আসনের এমপি আবদুস সালাম মুর্শেদীর অফিস, বাড়ি, বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলামের বাড়িসহ অসংখ্য সরকারি স্থাপনা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে বিক্ষোভকারীরা। যশোর : জেলা বিএনপি কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। মনিরামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের দুটি অফিসে এবং কেশবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের অফিসে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। মৌলভীবাজার : জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের সাইনবোর্ড ও সরকারি বিভিন্ন সাইনবোর্ড ভাঙচুর করা হয়। কুড়িগ্রাম : বিক্ষোভকারীরা কুড়িগ্রামে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম টুকুর মোটরসাইকেলসহ ৫টি মোটরসাইকেল আগুনে পুড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া ফুলবাড়ি উপজেলায় বিক্ষোভকারীরা উপজেলা পরিষদ ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভাঙচুর করে। এ সময় তারা ৪টি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেয়। চট্টগ্রাম : কাজীর দেউড়ি এলাকার নাসিমন ভবনে চট্টগ্রাম নগর বিএনপির অফিসে হামলা, ভাঙচুর হয়েছে। চট্টগ্রাম-১২ (পটিয়া) আসনের এমপি মোতাহেরুল ইসলামের ব্যক্তিগত অফিসে ভাঙচুর করে বিক্ষোভকারীরা। ময়মনসিংহ : সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদের বাড়ির প্রধান ফটকে ভাঙচুর করে এবং নিচ তলায় নির্মিত বঙ্গবন্ধু গ্যালারির সমস্ত ছবি ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় আশপাশের বেশ কয়েকটি বহুতল ভবনের প্রধান ফটকে ভাঙচুর চালায় বিক্ষোভকারীরা। এ ছাড়া বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় ও রেঞ্জ ডিআইজির কার্যালয়ে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। একই সময়ে আদালত প্রাঙ্গণে ঢুকে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুলের চেম্বারে ভাঙচুর চালায়। এরপর কাচারি মোড়ে জেলা আওয়ামী লীগ সহসভাপতি আমিনুল হক শামীমের অফিস ও বাস কাউন্টারে ভাঙচুর চালায়।
ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি কার্যালয় ও জেলা বিএনপির সভাপতি এম এ মজিদের শহরের কলাবাগানের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর করে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
ঝালকাঠি : ঝালকাঠি জেলা বিএনপির কার্যালয়ে আগুন দেওয়া হয়েছে। খাগড়াছড়ি : বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূঁইয়ার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক : রাজধানীর পুরান ঢাকায় পুলিশের একটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা।
বিডি প্রতিদিন/নাজমুল