পৃথিবীর প্রথম লিখিত বই নিয়ে কথা বলার আগে, আমাদের বুঝতে হবে যে ‘বই’ শব্দটি বিভিন্ন যুগে বিভিন্নভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। তখনকার বই দেখতে আজকের দিনের ছাপানো কাগজের বইয়ের মতো ছিল না। তবে প্রাচীনকালে মানুষ যেসব লেখার মাধ্যমে তথ্য সংরক্ষণ করত, সেগুলোই সেই সময়ের ‘বই’ হিসেবে বিবেচিত হয়। এখন আসি পৃথিবীর প্রথম লিখিত বই নিয়ে।
পৃথিবীর প্রথম লিখিত সাহিত্যকর্ম বলে বিবেচিত হয় ‘এপিক অব গিলগামেশ’। এটি একটি মহাকাব্য। লেখা হয়েছে সুমেরীয় সভ্যতার সময়ে। প্রাচীন মেসোপটেমিয়ায় (বর্তমান ইরাক, সিরিয় ও ইরানের কিছু অঞ্চল) সুমেরীয়রা এই মহাকাব্যটি মাটির ফলকের (ক্লে ট্যাবলেট) ওপর লিখেছিল। এর বয়স প্রায় ৪০০০ বছর।অর্থাৎ এটি খ্রিস্টপূর্ব ২১০০-২০০০ সালের মধ্যে লেখা হয়েছে।
এপিক অব গিলগামেশ লেখা হয়েছিল প্রাচীন সুমেরীয় ভাষায়, কিউনিফর্ম লিপি (Cuneiform Script) ব্যবহার করে। কিউনিফর্ম হল পৃথিবীর প্রথম লিখিত ভাষা হিসেবে পরিচিত।
এতে ত্রিকোণ আকৃতির একটি স্টাইলাস দিয়ে মাটির ফলকে অক্ষর তৈরি করা হতো। মাটির ফলকগুলি রোদে শুকিয়ে অথবা আগুনে পুড়িয়ে শক্ত করা হত, যাতে সেগুলো অনেক দিন টিকে থাকে। এই লেখা থেকে সুমেরীয় সমাজ, সংস্কৃতি, ধর্ম, এবং নায়কদের সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যায়। এই মহাকাব্যটি গিলগামেশ নামে এক কিংবদন্তি রাজাকে নিয়ে রচিত। তিনি উরুক নগরীর রাজা ছিলেন।
গল্পে তাঁকে একজন অর্ধ-মানব, অর্ধ-দেবতা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। গিলগামেশের বন্ধু অ্যাডভেঞ্চার, মৃত্যু, এবং জীবন সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধির কথা এই মহাকাব্যে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি শুধু একটি মহাকাব্য নয়, বরং এটি মানবজীবনের অর্থ, মৃত্যু, বন্ধুত্ব এবং দেবতা ও মানবের সম্পর্ক নিয়ে গভীর দার্শনিক চিন্তাভাবনা প্রকাশ করে।
গিলগামেশ মহাকাব্যের পরে পৃথিবীতে কিছু ধর্মগ্রন্থও লেখা হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ঋগ্বেদ (Rigveda), যা প্রাচীন বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় লেখা। এটি হিন্দু ধর্মের অন্যতম প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ এবং খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০-১০০০ সালের মধ্যে রচিত হয় বলে ধারণা করা হয়।
সূত্র : ব্রিটানিকা।
বিডি-প্রতিদিন/শআ