এ বছর চিকিৎসাবিজ্ঞান ও শারীরতত্ত্বে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানী ভিক্টর অ্যামব্রোস ও গ্যারি রাভকুন। গত সোমবার নোবেল কমিটি তাদের নাম ঘোষণা করে। মাইক্রোআরএনএ আবিষ্কার ও জিন নিয়ন্ত্রণে ট্রান্সক্রিপশন পরবর্তী ভূমিকা বিষয়ক গবেষণার জন্য তারা এ পুরস্কার পেয়েছেন।
মাইক্রোআরএনএ হলো একক স্ট্র্যান্ডেড নন-কোডিং আরএনএ অণু। সোজা কথায় আরএনএ হলো- একটি নিউক্লিক অ্যাসিড যা সরাসরি প্রোটিন সংশ্লেষণের সঙ্গে জড়িত। অন্যদিকে মাইক্রোআরএনএ হলো ছোট, একক স্ট্র্যান্ডেড ও নন-কোডিং যাতে ২১-২৩টি নিওক্লিওটাইড থাকে। উদ্ভিদ, প্রাণী ও কিছু ভাইরাসে মাইক্রোআরএনএ পাওয়া যায়। অনলাইন জার্নাল সায়েন্সডিরেক্টের একটি গবেষণা প্রবন্ধে মাইক্রোআরএনএ সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। মাইক্রো আরএনএ হলো ক্ষুদ্র আরএনএ অণু যা বিভিন্ন জৈবিক প্রক্রিয়া বিশেষ করে জিন নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
মানবদেহের প্রতিটি কোষে থাকা ক্রোমোজোম- কোষগুলোর জন্য নির্দেশিকা। মানুষের শরীরের প্রায় প্রতিটি কোষেই আছে একই ক্রোমোজোম। তাই প্রতিটি কোষে আছে একই জিন, একই নির্দেশনা। যা ক্রোমোজোমের ডিএনএ থেকে মেসেঞ্জার আরএনএতে যায়। তারপর মেসেঞ্জার আরএনএ’র নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরি হয় প্রোটিন।
তবে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কোষ। এদের অনেকের বৈশিষ্ট্য আবার একদম আলাদা। মাংসপেশির কোষ আর স্নায়ুকোষের মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়াই কঠিন। তা হলে কীভাবে এর পার্থক্য তৈরি হয়? উত্তর : জিন নিয়ন্ত্রণ। এর মাধ্যমে কোষগুলো ক্রোমোজোম থেকে শুধু তার জন্য উপযোগী নির্দেশনাগুলোই অনুসরণ করে; অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট ধরনের কোষে নির্দিষ্ট কিছু জিনই শুধু কাজ করে। আবার দেহের ভিতর ও বাইরের পরিবর্তনশীল পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতেও কোষের ভিতরের কোন জিনটি কাজ করবে আর কোনটি করবে না, তা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয়। এই জিন নিয়ন্ত্রণই যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে ক্যান্সার, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগ দেখা দেয়। ষাট দশকেই বিজ্ঞানীরা ট্রান্সক্রিপশন ফ্যাক্টর সম্পর্কে জানতেন। বিজ্ঞানীরা ভাবতেন, এটিই জিন নিয়ন্ত্রণের মূল উপায়। কিন্তু ১৯৯৩ সালে অ্যামব্রোস আর রাভকুন দুই মার্কিন বিজ্ঞানী জিন নিয়ন্ত্রণের নতুন এক উপায় আবিষ্কার করেন। আশির দশকে তারা গবেষণা করে দেখেন, কীভাবে বিভিন্ন ধরনের কোষ তৈরি হয়। অ্যামব্রোস আর রাভকুন লিন-৪ (lin-4) ও লিন-১৪ (lin-14) জিন দুটি নিয়ে কাজ করছিলেন। এই লিন-৪ জিনটি লিন-১৪-এর কাজে বাধা দেয়- এটুকু তারা বুঝতে পারেন। পরে ভিক্টর অ্যামব্রোস লিন-৪ জিন নিয়ে আরও কাজ করতে গিয়ে দেখতে পান, এটি থেকে তৈরি হয় একটি ক্ষুদ্র আরএনএ। পরে এটিকে বলা হবে মাইক্রোআরএনএ। অন্যদিকে গ্যারি রাভকুন লিন-১৪ জিন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেন, লিন-১৪ জিন থেকে লিন-৪ জিন মেসেঞ্জার আরএনএ তৈরি থামাতে পারে না। বরং লিন-৪-এর প্রভাব পড়ে আরও পরে গিয়ে। আর লিন-১৪ জিনের একটা বিশেষ অংশের উপস্থিতি থাকলেই শুধু লিন-৪ জিন লিন-১৪ এর কাজ থামাতে পারে। তাদের গবেষণার ফলাফল তুলনা করে দেখা গেল, লিন-৪ থেকে তৈরি মাইক্রোআরএনএ লিন-১৪-এর ওই বিশেষ অংশের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে। এই যুক্ত হওয়ার মাধ্যমেই লিন-৪ মাইক্রোআরএনএ লিন-১৪ মেসেঞ্জার আরএনএ’র কাজ বন্ধ করে দেয়। অর্থাৎ জিনের নিয়ন্ত্রণ ট্রান্সক্রিপশন পর্যায়ে হয় না।