শনিবার, ৪ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

কোরআন-সুন্নাহর আলোকে মাহে রমজানের ফজিলত ও তাৎপর্য

মুফতি আমজাদ হোসাইন হেলালী

কোরআন-সুন্নাহর আলোকে মাহে রমজানের ফজিলত ও তাৎপর্য

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, “হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ  ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা পরহেজগারী অর্জন করতে পার। (সূরা বাকারা:১৮৩)। আলোচ্য আয়াতে রোজা শব্দকে সওম বলা হয়েছে, সওমের বহুবচন সিয়াম। সওম বা সিয়ামের অর্থ বিরত থাকা। শরিয়তের পরিভাষায় সওম বলা হয়, আল্লাহর নির্দেশ পালনের উদ্দেশে নিয়তসহ সুবহে সাদিকের শুরু  থেকে সূর্যাস্তের পর পর্যন্ত পানাহার ও স্ত্রী সহবাস থেকে বিরত থাকা। মাহে রমজানের ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে সূরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহতায়ালা আরও ইরশাদ করেছেন, “রমজান মাসই হলো সেই মাস যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যয় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।

আলোচ্য আয়াত থেকে আমরা পরিষ্কারভাবে পরিষ্কাভাবে বুঝতে পারলাম যে মাহে রমজান কোরআন নাজিলের মাস। রোজার  ফজিলত ও তাৎপর্য সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বোঝার জন্য কয়েকটি হাদিস এখানে উল্লেখ করা হলো। এক. সহিহ বুখারি ও মুসলিম শরিফে এসেছে, হযরত আবু হুরায়ারা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম  ইরশাদ করেছেন, যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয।  দুই. হযরত শাহ্  ইবনে সা’দ (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, বেহেশতের ৮টি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে ১টি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতীত আর কেউ ওই দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (বুখারি, মুসলিম) তিন. বিখ্যাত সাহাবি হযরত আবু হুরায়ারা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।  যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রাতে ইবাদত করে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে  দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়ত কদরের রাতে ইবাদত করে কাটাবে তার পূর্বের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয় হবে। (বুখারি, মুসলিম) চার. রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রত্যেকটি কাজই তার নিজের জন্য। তবে রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর পুরস্কার দেব। রোজা ( আজাব থেকে বাঁচার জন্য) ঢালস্বরূপ। তোমাদের কেউ রোজা  রেখে অশ্লীল কথাবার্তায় ও ঝগড়া বিবাদে যেন লিপ্ত না হয়। কেউ তার সঙ্গে গালমন্দ বা ঝগড়া বিবাদ করলে শুধু বলবে, আমি রোজাদার। সেই মহান সত্তার কসম যার করতলগত মুহাম্মদের জীবন, আল্লাহর কাছে  রোজাদারের মুখের গন্ধ কস্তুরীর সুঘ্রাণের চেয়েও উত্তম। রোজাদারের খুশির বিষয় ২টি-যখন সে ইফতার করে তখন একবার খুশির কারণ হয়। আর একবার যখন সে তার রবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে রোজার বিনিময় লাভ করবে তখন খুশির কারণ হবে। (বুখারি)। পাঁচ. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত  তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেছেন, রোজা এবং কোরআন (কেয়ামতের দিন) আল্লাহর কাছে বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে পরওয়ারদিগার! আমি তাকে (রমজানের) দিনে পানাহার ও প্রবৃত্তি থেকে বাধা দিয়েছি। সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা হতে বাধা দিয়েছি। সুতরাং আমার সুপারিশ তার ব্যাপারে কবুল করুন। অতএব, উভয়ের সুপারিশই কবুল করা হবে (এবং তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে)। (বায়হাকি) এ মাসটি এমন বরকতময় মাস যে, এ মাসে যে ব্যক্তি আল্লাহর নৈকট্য লাভের উদ্দেশে ১টি নফল আমল করল সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে ১টি ফরজ আদায় করলো। আর যে ব্যক্তি এ মাসে ১টি ফরজ আদায় করলো সে ওই ব্যক্তির সমান হলো, যে অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করলো। সুবহানআল্লাহ। হাদিসে পাকে আরও এসেছে, এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে তা তার জন্য গুনাহ মাফের এবং দোযখের আগুন থেকে মুক্তির কারণ হবে।

এছাড়া তার সওয়াব হবে রোজাদার ব্যক্তির সমান। অথচ রোজাদার ব্যক্তির সওয়াব কমবে না। এসব শুনে সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম আমাদের প্রত্যেক ব্যক্তি তো এমন সামর্থ্য রাখে না যে রোজাদারকে (তৃপ্তি সহকারে) ইফতার করাবে? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহপাক এ সওয়াব দান করবেন যে রোজাদারকে ইফতার করায় এক চুমুক দুধ দিয়ে বা একটি খেজুর দিয়ে, অথবা এক চুমুক পানি দিয়ে। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্তির সঙ্গে খাওয়ায় আল্লাহ তায়ালা তাকে হাউজে কাউছার থেকে পানি পান করাবেন যার পর সে পুনরায় তৃষ্ণার্ত হবে না জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত। সুবহানআল্লাহ। প্রিয় পাঠক! আসুন! মাহে রমজানের ফজিলত, গুরুত্ব ও তাৎপর্য উপলব্ধি করে আগত মাহে রমজানের হক আদায় করে ইবাদত করতে পারলে আমরা পাব আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি,  রহমত, মাগফেরাত ও জাহান্নাম হতে নাজাত। মিলবে সহজ ও নেক্কারের মউত আর পাব অনাবিল শান্তির জায়গা জান্নাত ইনশাআল্লাহ। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে পবিত্র রমজানের ফজিলত ও তাৎপর্য  অনুধাবন করে  সুন্দর ও সঠিকভাবে ইবাদত করার তৌফিক দান করুন।

আমিন।

লেখক. মুহাদ্দিস, মুফাসসির, খতিব ও টিভি উপস্থাপক

সর্বশেষ খবর