১৫ মে, ২০২২ ১৮:৩৪

পুকুরে মুক্তা চাষে সাফল্যের স্বপ্ন কবিরের

বাবুল আখতার রানা, নওগাঁ

পুকুরে মুক্তা চাষে সাফল্যের স্বপ্ন কবিরের

মৎস্যভান্ডার খ্যাত নওগাঁর আত্রাই উপজেলার পাঁচুপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকা জগদাস গ্রাম। সেই গ্রামের তরুণ উদ্যোমী যুবক কবির হোসেন পুকুরে ঝিনুকে মুক্তা চাষ করে বেশ সাফল্য পেয়েছেন। পুকুরে মাছ চাষের পাশাপাশি মুক্তা চাষে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন পুরো এলাকা জুড়ে। এই উদ্যোক্তাকে এলাকাবাসী প্রথমে পাগল হিসেবে আখ্যায়িত করলেও পরে তার এই সাফল্য দেখে ঝিনুকে মুক্তা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেক বেকার যুবক। মুক্তা চাষে ঝুঁকি কম ও লাভজনক। মুক্তা চাষে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতা দেয়ার কথা জানিয়েছেন মৎস্য কর্মকর্তারা।

জানা গেছে, পুকুরের পানিতে তিন ফুট পর পর ভাসছে ফাঁকা প্লাষ্টিকের বোতল। সেখানে পানির এক ফুট নিচে রয়েছে একটি করে প্লাস্টিকের ডালা। সেসব ডালার প্রতিটিতে রয়েছে ২০টি করে জীবন্ত ঝিনুক। এভাবে তিনি ওই পুকুরে প্রায় ৮ হাজার ঝিনুক বিশেষ প্রক্রিয়ায় চাষ করছেন। ওই ঝিনুকের মধ্যে প্রতিটিতে কমপক্ষে দুটি করে বিভিন্ন ডিজাইনে নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে এসব ঝিনুক থেকেই উৎপাদন হচ্ছে বিভিন্ন ডিজাইনের মুক্তা। 

কবির হোসেন জানান, তিনি ফ্রিলান্সার হিসেবে কাজ করতেন। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে তিনি কাজ হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। বাড়িতে বসে অলস দিনযাপন করছিলেন। এ সময় ইউটিউবে ঝিনুকে মুক্তা চাষের একটা সাফল্যময় গল্প দেখে তিনি উৎসাহিত হন। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে জগদাস গ্রামেই একটি পুকুর লীজ নিয়ে মাছ চাষের পাশাপাশি ঝিনুকে মুক্তা চাষের প্রকল্প হাতে নেন। 

তিনি আরো জানান, তার চাষকৃত ৮ হাজার ঝিনুকের মধ্যে বিভিন্ন ডিজাইনের প্রায় ১৫ হাজার নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। প্রায় এক বছরে এসব ঝিনুক থেকে পাওয়া যাবে কমপক্ষে ১৫ হাজার মুক্তা। পুকুর লীজ, ঝিনুক সংগ্রহ, পরিচর্যা, নিউক্লিয়াস ক্রয় ও সংস্থাপন ইত্যাদি বাবদ মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এই এক বছরে ওই ঝিনুক থেকে উৎপাদিত মুক্তা ২২ থেকে ২৫ লাখ টাকায় বিক্রির প্রত্যাশা তার। ইতোমধ্যে ঝিনুক সংগ্রহের সময় হয়ে গেছে। এসব মুক্তার বাজার রয়েছে ভারতের কলকাতায় এবং বাংলাদেশে একটি প্রতিষ্ঠানে। এদিকে কবিরের সাফল্য দেখে তার সাথে মুক্তা চাষে যোগ দেন আশেপাশের গ্রামের আরো ২০ বেকার যুবক।  ইতোমধ্যেই গ্রামটি এখন মুক্তা চাষির গ্রাম হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে। 

জগদাস গ্রামের আবু বাশার ও মানিক নামের দুই উদ্যোক্তা জানান, কবিরের সাফল্য তাদেরও মুক্তা চাষের দিকে আকৃষ্ট করেছে। ইতোমধ্যে ওই দুই যুবকসহ গ্রামের ২০ জন বেকার যুবক ঝিনুকে মুক্তা চাষের ছোট ছোট প্রকল্প হাতে নিয়েছেন। তারাও আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। 

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ চন্দ্র দেবনাথ বলেন, ইতোমধ্যেই উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে মুক্তা চাষের সম্ভবনা উজ্জল হয়ে উঠেছে। ব্যাপকভাবে সাড়া পাওয়ায় মুক্তা চাষে ঝুঁকি কম ও লাভজনক। মানসম্মত মুক্তা চাষ করতে পারলে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। তাই মানসম্মত মুক্তা চাষে আগ্রহী উদ্যোক্তাদের সার্বিক প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।

বিডি প্রতিদিন/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর