২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৮:০১

সংকটে সখীপুরের পোল্ট্রি ব্যবসা

সখীপুর (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি

সংকটে সখীপুরের পোল্ট্রি ব্যবসা

টাঙ্গাইলের সখীপুরে অর্ধেক পোল্ট্রি মুরগির খামার বন্ধ হয়ে গেছে বলে তথ্য পাওয়া গেছে। ডিমের দামের সাথে খাদ্য এবং ওষুধের দামের ব্যবধান, মুরগি মরে যাওয়ায় ব্যবসায় ক্ষতি এবং খাদ্য কিনতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ার কারণেই খামারগুলো বন্ধ হয়ে গেছে বা যাচ্ছে এমনটাই দাবি সংশ্লিষ্টদের।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, সখীপুরে ৫৭৩ টি ব্রয়লার, ৭০০ টি লেয়ার ও ৬০টি হাঁসের খামার রয়েছে যা পূর্বের তুলনায় অর্ধেকেরও কম। 

এ ভাবে চলতে থাকলে দু’এক বছরের মধ্যেই সখীপুরে কোন পোল্ট্রি খামার থাকবে না বলে দুঃখ প্রকাশ করেন একাধিক পোল্ট্রি খামারি।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রান্তিক খামারিদের লম্বা ও বড় ঘরগুলো পড়ে আছে অযত্নে, অবহেলায়। তার ভেতরে লেয়ার ও ব্রয়লারের কোন মুরগি নাই। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ঘরের চাল, ফ্লোর, পানি তোলার যন্ত্র, ডিম রাখার খাঁচা ও লেয়ারের সেট। আনেকেই খামারের ঘর বিক্রি করে দিয়ে অন্য ব্যবসা করার চেষ্টা করছেন, কেউবা বিদেশ যাওয়ার কথা ভাবছেন।
 
কালিদাস বল্লা চালা গ্রামের হায়দার আলী বলেন, আগে যে খাদ্য কিনতাম ১৬শত টাকা বস্তা এখন সেই খাদ্যের দাম ৩ হাজার টাকা বস্তা। এছাড়া শ্রমিকের দাম, ওষুধের দাম অনেক বেশি। যে কারণে প্রান্তিক খামারিরা এখান থেকে সরে যাচ্ছে। তারা অন্য কিছু করার চেষ্টা করছে। আমার মুরগি ছিল ৯হাজার, এখন তা কমিয়ে সাড়ে ৪হাজারে নিয়ে এসেছি।

কুতুবপুর এলকার নূরে আলমের পরিবার জানায়, খাদ্যে কোম্পানির ডিলারের কাছে ফাঁকা চেক জমা দিয়ে বাকি খাদ্য এনেছি। খামারে লস হওয়ায় কোম্পানির টাকা দিতে দেরি হয়েছিলো যে কারণে নূরে আলমের নামে মামলা দিয়েছে কোম্পানি। তারা বলেন, ‘আমাদের কাছে কোম্পানি যে পরিমাণ টাকা পাইতো তার দ্বিগুণেরও বেশি টাকা লিখে মামলা করেছে।’ বর্তমানে নূরে আলম জেল হাজতে আছে।

বগা প্রতিমা এলাকার রায়হান সিকদার বলেন, এখন আর মুরগি নাই শুধু খামারের ঘর পড়ে আছে। অপেক্ষায় আছি খাদ্যের দাম কমলে ব্রয়লারের বাচ্চা তুলবো। এছাড়া দেখে শুনে আর লস প্রজেক্টে হাত দিবো না।
 
হতেয়া এলাকার খাদ্যের ডিলার ও পোল্ট্রি খামারি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমার ১৩ হাজার লেয়ার ছিল এখন আড়াই হাজার আছে। আগে যে ওষুধের দাম ছিলো ৭শত টাকা এখন তার দাম হয়েছে ২হাজার টাকা। একটি ডিম উৎপাদন করতে খরচ হয় ৯টাকার ওপরে। তা বিক্রি করতে হয় সাড়ে ৮টাকা কখনো ৯টাকা। অথচ খোলা বাজারে প্রত্যেক ডিমের দাম ১১-১২টাকা। এখানে বিশাল একটি সিন্ডিকেট। এই সমস্ত কারণে আমাদের হতেয়া এলাকার শতকরা নব্বই জন মানুষ খামার বাদ দিছে।’
  
কুতুবপুর এলাকার মো. রুবেল আহমেদ বলেন, আমাদের বড়চওনা ও কুতুবপুর এলাকার অনেক মানুষ বেকারত্ব দূর করতে পোল্ট্রি খামারে ঝুঁকে পড়েন। বর্তমানে তাদের অর্ধেক মানুষ এই পোল্ট্রি খামারে নাই। কোম্পনির টাকার চাপে অনেকেই পালিয়ে বিদেশ চলে গেছে। কেউ কেউ জায়গা জমি বিক্রি করে খাদ্যের টাকা দিতে গিয়ে দেউলিয়া হয়েগেছে। এর মূল কারণ বেশি দামের খাদ্য খাওয়িয়ে মুরগি প্রডাকশনে আনছে এখন ডিমের দাম কম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক খাদ্যের ডিলার বলেন, কারো মুরগি মরে গেছে, কারো ব্যবসায় ক্ষতি হয়েছে। খামারিরা এখন কোম্পানিকে টাকা দিতে পারছে না। এদিকে কোম্পানি টাকা তুলতে বাধ্য হয়ে খামারিদের নামে মামলা দিচ্ছে।
 
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সামিউল বাছির বলেন, পোল্টি খামার করার জন্য সখীপুর বেশ উপযোগী। এখানে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেই। কিন্তু বর্তমান সময়ে মুরগীর খাদ্যের দামের তুলনায় ডিমের দাম খুবই কম যে কারণে পোল্ট্রি খামারিরা খামারের প্রতি দিনদিন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।


বিডি প্রতিদিন/নাজমুল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর