'ফুল ফুটুক আর না ফুটুক, আজ বসন্ত এই বাক্যে যতটা উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা ও মাতামাতি দেখা গেলেও বর্ষার ফুল নিয়ে তেমন একটা মাতমাতি দেখা যায় না। অথচ বর্ষা ঋতুতে প্রচুর ফুল ফোটে, প্রকৃতিকে সজীব করে তোলে। মুগ্ধ করে মোহনীয় অনেক ফুল। রংপুরে এখন বর্ষার ফুল মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে চারদিকে। প্রকৃতিপ্রেমীরা এসব ফুল দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন।
বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠের খরতাপে মানুষ যখন অতিষ্ঠ, পরিশ্রান্ত, তখন এক পশলা বৃষ্টি এনে দেয় অনাবিল শান্তির স্পর্শ। প্রকৃতি সাজে সবুজের সমারোহে। গাছে গাছে তরতাজা কিশলয় মানুষের হৃদয়-মন ও আত্মাকে করে তোলে নমনীয়, তুলতুলে। এর সাথে যোগ হয় ফুলের সৌন্দর্য। বর্ষায় কদম নিয়ে বেশি বন্দনা হলে রংপুরের প্রকৃতিতে এখন শোভা পাচ্ছে কদমের পাশাপাশি জুঁই, চামেলী, বকুল, গুলঞ্চ, কামিনী, স্বর্ণচাঁপা, স্কারলেট কার্ডিয়া, কুরচি, জারুল, শিরিষ, রক্তজবা, ক্যালিয়েন্ড্রা, অ্যালামান্ডা, টগর, ফুরুস, মুসান্ডা, বেলী, ব্রুনফেলসিয়া, শ্বেতকাঞ্চন, হ্যামেলিয়া, দাঁতরাঙা, হাসনাহেনা, স্পাইডার লিলি, বোতাম ফুল, দোপাটি, মোরগ ফুল, নয়নতারা, সন্ধ্যামালতী, কলাবতীসহ আরো কতো দেশি-বিদেশি ফুল! এসব ফুলের ছিটেফোটা সারাবছর দেখা গেলেও এদের মূল অবলম্বন কিন্তু এই বর্ষাই। বর্ষায় এসব ফুল প্রকৃতিতে নিজেদের মেলে ধরে।
রংপুর নগরীর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজ, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, কারমাইকেল কলেজ, চিকলি বিল পাড়স্থ বিভিন্নস্থানে এসব ফুলের দেখা পাওয়া যাবে এখন। অনেকেই এসব ফুলের মুগ্ধতা উপভোগ করতে চলে যান বেরোবি ক্যাম্পাসসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাগানে।
বর্ষা প্রকৃতিকে তকতকে করে তুলছে। গাছে গাছে ঘন সবুজ পাতা। ফাঁকে সুরভি ছড়িয়ে ফুটেছে এবং বাতাসে দুলছে হালকা হলুদ বা লালচে আভার গুলাচি। বাড়ির গেটে লতিয়ে ওঠা লম্বা বোঁটায় লাল-সাদা মাধুরীলতা। জলাশয়ে ফুটে আছে রাশি রাশি শাপলা আর পদ্মফুল।
বাংলা একাডেমির সহপরিচালক এবং বেগম রোকেয়া স্মৃতিকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবিদ করিম মুন্না বলেন, শুধু বর্ষার মেঘ দেখে নয় তার সঙ্গে প্রকৃতির রূপ আর মধুগন্ধী ফুলের সুবাস ছিল বলেই বোধকরি নববর্ষায় কালিদাস মন উদাসী হয়ে উঠেছিল। আর সে হাওয়ায় কবি কালীদাস বা রবীন্দ্রনাথ শুধু নয়; দুপয়সার কেরানি কেষ্ট দাসের মনও উড়ু উড়ু। মেঘের ডাকে মনেও বাজে ঢাক গুড় গুড়। বর্ষামঙ্গল কাব্যের ভাষায় সে তার প্রেমিকাকে বলে-'বর্ষা শুধু প্রেমের ঋতু কেন, ফুলেরও ঋতু। আর ফুল ও প্রেমতো সমার্থক, অবিচ্ছেদ্য। বর্ষার প্রধান ফুল যেন কদমই। দিন আনে দিন খায় যারা, বস্তুত তারাই বর্ষাকে টের পায় হাড়ে হাড়ে। তবে আরেকদিকে, গ্রীষ্মের কাঠফাটা রোদের দাবদাহে ফসলের মাঠ ফেটে চৌচির, প্রত্যন্ত এবং নগর জীবনে সাধারণ মানুষের প্রাণ যখন ওষ্ঠাগত, তখন কিন্তু একযোগে সবাই বর্ষারই আরাধনা করে। প্রতীক্ষার দিনক্ষণ শুনতে থাকে, কখন নামবে বৃষ্টি। নিদেনপক্ষে একপশলা বৃষ্টিও তখন নিয়ে আসে যেন বড় এক স্নিগ্ধ প্রশান্তির পরশ। সেজন্যই বর্ষার প্রশন্তি তখন মানুষের মনে গান হয়ে বেজে ওঠে: 'আল্লাহ মেঘ দে, পানি দেরে তুই আল্লাহ মেঘ দে' কিংবা, 'আয় বৃষ্টি কেঁপে ধান দেবো মেপে।'
বিডি প্রতিদিন/হিমেল