কোন ধরনের অভিযোগ ছাড়াই নির্বিঘ্নে শেষ হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত গ-ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা।
শুক্রবার সকাল ১১টা থেকে শুরু হয়ে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ দেশের বিভাগীয় আটটি শহরের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে একযোগে এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। শনিবার একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে কলা অনুষদভুক্ত খ-ইউনিটের পরীক্ষা।
এদিকে, গ-ইউনিটের পরীক্ষা উপলক্ষ্যে নির্ধারিত সময়ের আগেই ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকের পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোর সামনে উপস্থিত হন। সকাল ১০টায় কেন্দ্র প্রবেশের অনুমতি পায় শিক্ষার্থীরা। সোয়া এগারটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, ‘গ’ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী ও বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মুহাম্মাদ আব্দুল মঈন, প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীসহ সংশ্লিষ্টরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ভবনস্থ পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। উল্লেখ্য, এ বছর ‘গ’ ইউনিটে ৯৩০ টি আসনের জন্য ভর্তিচ্ছু আবেদনকারীর সংখ্যা ৩০,৭১৯জন। সে হিসেবে প্রতি আসনের বিপরীতে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩৩ জনের বেশি।
পরে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন উপাচার্য। এসময় তিনি বলেন, গতবারের ধারাবাহিকতায় এবারও সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যবৃন্দের সাথে আমাদের কথা হয়েছে। তারা বলেছেন, খুব নির্বিঘ্নে সুন্দর ব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তাদের আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
‘যে কোন সংগঠন করার এখতিয়ার শিক্ষার্থীদের আছে’
এসময় ক্যাম্পাসে ছাত্রসংগঠনগুলোর সহাবস্থান নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে উপাচার্য বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কে কোন সংগঠন করবে, বা করবে না, এটা একেবারেই শিক্ষার্থীদের এখতিয়ার। আমরা এই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে গভীরভাবে বিশ্বাসী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতন্ত্র, মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িকতা এসব চর্চার ও লালনক্ষেত্র। তিনি বলেন, ‘যারা মহান মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা আন্দোলন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর যে আদর্শ সে আদর্শকে যারাই ধারণ করবে, তাদের জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয় অবাধ বিচরণ কেন্দ্র।’ ডাকসুর বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘ডাকসু একটি প্রত্যাশিত বিষয়। আপনারা যেমন প্রত্যাশা করেন আমরাও এটি প্রত্যাশা করি। নেতৃত্ব বিকাশের জন্য এটা খুবই জরুরি। যখন সুন্দর একটি পরিবেশ ও সবাই এক জায়গায় বুঝতে পারবো, তখন বিগত সময়ের মতো আবারও আমরা ডাকসু নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারবো।’
ক্যাম্পাসে এসেছিলো ছাত্রদল
সম্প্রতি ক্যাম্পাসে ‘প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটুক্তি’র প্রেক্ষিতে অন্তত দুই দিন ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মধ্যে বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে ক্যাম্পাস ছাড়া হয়েছিলো ছাত্রদল। তবে ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ১২ দিন পর শুক্রবার ক্যাম্পাসে আসে ছাত্রদল। পরীক্ষা শেষে কাজী মোতাহার ভবনের সামনে পরীক্ষার্থীদের ফুল ও কলম দিয়ে স্বাগত জানায় তারা। তবে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেওয়া হয়নি।
এর আগে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের গেটে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার আহ্বায়ক আকতার হোসেন ও সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান। ফুল নিয়ে অগ্রসর হওয়ার সময় প্রথমে বাধা দিলেও পরে তাদের যেতে দেয় পুলিশ।
এসময় আমানউল্লাহ আমান আরও বলেন, ‘আজকে ক্যাম্পাসে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে রাখা হয়েছিল। তবে যতই ভীতিকর পরিস্থিতি থাকুক না কেন, আমরা আমাদের অধিকার চর্চার জন্য প্রাণের ক্যাম্পাসে আসবই। আমরা চেষ্টা করেছি, ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের স্বার্থে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে।
ছাত্রলীগের কর্মসূচি
ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের বেশ কিছু কর্মসূচি ছিল। এর মধ্যে, শিক্ষার্থী তথ্য সহায়তা দিতে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে ‘শিক্ষার্থী-সহায়তা ও তথ্যকেন্দ্র’ স্থাপন, শিক্ষার্থীদের পরিবহনের জন্য ‘জয় বাংলা বাইক সার্ভিস’, অভিভাবকদের বিশ্রামের ছাউনি’র ব্যবস্থা, সুপেয় পানি পরিবেশন, পরীক্ষাকেন্দ্রে নেওয়ার অনুপযোগী জিনিসপত্র রাখার ব্যবস্থা, তাৎক্ষণিক চিকিৎসাসেবার জন্য প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র স্থাপন, মাস্ক, কলমসহ আনুষঙ্গিক প্রয়োজনীয় উপকরণ বিতরণ, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য হুইলচেয়ারসহ প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রদান, প্রয়োজন সাপেক্ষে পরীক্ষার আগের রাতে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের হলে থাকার ব্যবস্থা করেছিলো সংগঠনটি।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন