চট্টগ্রামে একটি ফ্লাইওভারের টোল আদায় নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মুখোমুখি হয়েছে। চসিকের প্রস্তাবে জনস্বার্থে টোল আদায় না করার জন্য বলা হলেও রক্ষণাবেক্ষনের খরচের বিষয় তুলে ধরে টোল আদায়ের কথা বললেন সিডিএ কর্তৃপক্ষ। এসব বিষয় নিয়ে চট্টগ্রামের ব্যাপক আলোচনাও চলছে সংশ্লিষ্ট মহলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ৬.২ কিলোমিটার দীর্ঘ আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার নানা জটিলতা থাকা সত্ত্বেও প্রায় দেড় বছর আগে গাড়ি চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। শুরুতে এই ফ্লাইওভারে টোল আদায়ের কোনো সিদ্ধান্ত ছিল না। কিন্তু দেড় বছর পর এসে রক্ষণাবেক্ষণের নামে বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) এই ফ্লাইওভারেও টোল বসাতে চাইছে।
এদিকে এই টোল আদায়ের অনুমোদনের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছে সিডিএ। কিন্তু চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) কর্তৃপক্ষ এই প্রস্তাবকে নাকচ বা না রাজি দিয়ে বলেছে, ফ্লাইওভার এখনো আমাদেরকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি। এ ক্ষেত্রে রক্ষণাবেক্ষণে কোনো টোল আদায়ের প্রয়োজন হবে না।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, প্রায় দেড় বছর আগে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে গাড়ি চলাচলের জন্য পুরোপুরি উম্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু উদ্বোধনের পর ফ্লাইওভারে চলাচলকারী যানবাহনের কাছ থেকে টোল আদায় করা হলে জনমনে অসন্তোষ দেখা দেবে, নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমনকি সরকারের ভাবমুর্তিও ক্ষুন্ন হবে। তাছাড়া ফ্লাইওভারটি নির্মাণের পর চসিক কর্তৃপক্ষকে তা এখনো বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি।
চসিক-সিডিএ সূত্রে জানা যায়, সিডিএ’র আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ৩ এপ্রিল স্থানীয় সরকার, পল্লী ঊন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-সচিব আ ন ম ফয়জুল হক স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে ফ্লাইওভারে টোল আদায়ের বিষয়ে চসিকের মতামত চাওয়া হয়।
এতে উল্লেখ করা হয়, মুরাদপুর থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ৬.২ কিলোমিটার দীর্ঘ আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারের যাবতীয় রক্ষণাবেক্ষণ, ফ্লাইওভারের ওপর এলইডিসহ বিভিন্ন ওয়াটের প্রায় সাড়ে ৩ হাজার বৈদ্যুতিক বাতির বিল পরিশোধ, ফ্লাইওভারে ওপরে-নিচে সৌন্দর্যবর্ধন কাজের পরিচর্যায় প্রতি মাসে প্রায় ২০ লাখ টাকা খরচ হয়। এসব খরচ মেটাতেও ফ্লাইওভারের সুষ্ঠু ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণে টোল আদায় করতে চায় সিডিএ। এর আলোকে ফ্লাইওভারে টোল আদায় করা হলে জনমনে নানা নেতিবাচক প্রভাব পড়বে জানিয়ে গত সোমবার (৮ এপ্রিল) একই মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিবকে পত্র পাঠিয়েছে চসিক কর্তৃপক্ষ।
সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, নগরের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ ফ্লাইওভারে টোল আদায়ের বিষয়টি সমর্থন করে না। টোল আদায় করা হলে সরকারের ভাবমুর্তিও প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে বলে সকলেই এর বিরোধিতা করছেন। ফ্লাইওভারের নিচে যেই সৌন্দর্যবর্ধন করা হয়েছে, সেগুলো চসিকের কাছে হস্তান্তর করা হলে টোল আদায় ছাড়াই তার ক্ষণাবেক্ষণ করতে চসিক মেয়র আ জ ম নাছিরের সম্মতি আছে বলেও পত্রে উল্লেখ করা হয়।
আরো জানা যায়, ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ৬৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভার নির্মাণ প্রকল্পটি একনেকে অনুমোদন দেওয়া হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ২৮ অক্টোবর সিডিএ ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ বিষয়ে চুক্তির পর ২০১৫ সালের মার্চে ফ্লাইওভারটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ফ্লাইওভারটি মুরাদপুরে এন মোহাম্মদ কনভেনশন সেন্টারের সামনে থেকে লালখান বাজারে এসে নেমেছে।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালের জুনে আখতারুজ্জামান ফ্লাইওভারে পরীক্ষামূলকভাবে গাড়ি চলাচলের জন্য উম্মুক্ত করে দেওয়া হয়। তবে ফ্লাইওভারে গাড়ি চলাচলের সুবিধার্থে ৬টি র্যাম্প নির্মাণের কথা থাকলেও শুধুমাত্র ২ নম্বর গেট ও জিইসি জংশনে র্যাম্প নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি র্যাম্পগুলো এখনো নির্মাণ না করায় খুলশী-ফৌজদারহাট থেকে আসা যাওয়া করা গাড়ি গুলো ফ্লাইওভারের সুবিধা নিতে পারছে না। এতে অনেকে ক্ষুব্ধ রয়েছেন। এমনিতে ফ্লাইওভারের নিচে শপিংমল ও দোকান নির্মাণ নিয়েও নগরবাসীর মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। এক্ষেত্রে চসিক ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) আপত্তি দেওয়ায় ফ্লাইওভারের নিচে এসব শপিংমল ও দোকান নির্মাণ বন্ধ রেখেছে।
বিডি-প্রতিদিন/বাজিত হোসেন