জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর দিয়ে পণ্য রপ্তানি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। রপ্তানি পণ্য লোড করতে না পারায় তিনটি জাহাজ বন্দর ত্যাগ করতে পারেনি। আমদানি পণ্য ডেলিভারিও কার্যত বন্ধ। তবে সীমিত আকারে জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যের খালাস কার্যক্রম চলছে। ফলে বন্দরে ফের জাহাজ ও কনটেইনার জট তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কাস্টমস-বন্দরে এমন স্থবিরতা নিকট অতীতে আর দেখা যায়নি। যা দেশের অর্থনীতির জন্য বিরাট ক্ষতি।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আওতাধীন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে রবিবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো শাটডাউন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। কাস্টম কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কাজ থেকে বিরত ছিলেন। এতে দেশের সবচেয়ে বেশি শুল্ক আদায়কারী এ কাস্টম স্টেশনটিতে আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যক্রম বন্ধ ছিল। কাস্টম হাউসে শুল্কায়নসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করে তবেই জাহাজে পণ্য ওঠাতে-নামাতে হয়। এছাড়া বন্দর থেকে আমদানি পণ্য বের করে নিতেও কাস্টমসের অনুমতি লাগে। তাই কাস্টম হাউসে শাটডাউনের প্রভাব পড়েছে বন্দরে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বন্দরের অপারেশনাল কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। ডেলিভারি ও রপ্তানি স্থবির হয়ে পড়েছে। আমদানি পণ্যের কিছু কনটেইনার জাহাজ থেকে নামানো হলেও রপ্তানি কনটেইনার জাহাজীকরণ হচ্ছে না। আমরা চাই কাস্টম হাউসে যে আন্দোলন চলছে, তার একটা সুরাহা হোক। তিনি বলেন, নিকট অতীতে বন্দরের কাজকর্মে এমন অচলাবস্থা আর হয়নি।
বন্দর সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, রপ্তানি কনটেইনার বোঝাই করতে না পারায় শনি ও রবিবার দুইদিনে এএস সিসিলিয়া, এক্সপ্রেস নিলওয়ালা এবং হা ডা জিন নামের তিনটি জাহাজ বন্দর ত্যাগ করতে পারেনি। এই তিন জাহাজে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার রপ্তানি কনটেইনার নিয়ে বিভিন্ন দেশের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা ছিল। রপ্তানি পণ্য প্রথমে ডিপোতে এনে রাখেন আমদানিকারকরা। সেখানে কনটেইনার-বোঝাই (স্টাফিং) ও শুল্কায়ন শেষে জাহাজীকরণের জন্য বন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়।
বেসরকারি ডিপো মালিকদের সংগঠন (কিকডা) সচিব রুহুল আমিন শিকদার বলেন, ডিপোতে পণ্য স্টাফিং থেকে শুরু করে বন্দর গেট দিয়ে প্রবেশ ও জাহাজে তোলা পর্যন্ত বেশ কয়টি স্পটে কাস্টম সংক্রান্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করতে হয়। এসব কাজ বন্ধ থাকায় শনিবার সকাল থেকে রপ্তানি পণ্যবোঝাই কনটেইনার বন্দরে পাঠানো যাচ্ছে না। ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার রপ্তানি কনটেইনার জমা হয়ে আছে। এদিকে আমদানি পণ্যের কনটেইনারও বন্দর থেকে ডিপোতে আসছে না।
প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে রপ্তানি হওয়া পণ্যের শতভাগ এবং আমদানির ২০ শতাংশ বন্দরের আশপাশে গড়ে ওঠা বেসরকারি ডিপোর মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বন্দর ও এনবিআর পরিস্থিতি নিয়ে ব্যবসায়ীরা খুবই উদ্বিগ্ন। শিল্পের কাঁচামাল যথাসময়ে ডেলিভারি নেওয়া যাচ্ছে না। এতে উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাই আমদানি নির্ভরশীল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। ভেঙে পড়তে পারে পণ্যের সাপ্লাই চেন। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের সমুদ্রকেন্দ্রিক আমদানি-রপ্তানির ৯২ শতাংশ হয়ে থাকে। তাই বন্দর একদিন বন্ধ থাকলে দেশের অর্থনীতিতে বিরাট ক্ষতি।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ বলেন, বন্দরে অচলাবস্থা দেখা দিলে অর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়, যা সামাল দেওয়া অনেক কঠিন।
বিডি প্রতিদিন/এমআই